• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সাংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

বিআইবিএমের গবেষণা প্রতিবেদন

বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণে ১১ ধরনের উদ্বিগ্নতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৮

বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণ অর্থনীতিতে উদ্বেগ তৈরি করছে। বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণে ১১ ধরনের উদ্বিগ্নতা রয়েছে। ২০১৩ সালে ৪০০ কোটি ডলার বেসরকারি খাতে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ ছিল। ২০১৭ সালে তা বেড়ে প্রায় সাড়ে ১১০০ কোটি ডলার হয়েছে। বিদেশি এ ঋণের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘প্রাইভেট কমার্শিয়াল বোরোয়িং ফ্রম ফরেন সোর্সেস ইন বাংলাদেশ: অ্যান অ্যানাটমি’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের পরিচালক (গবেষণা উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী। গবেষণা দলে আরো ছিলেন বিআইবিএমের অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমীন, বিআইবিএমের সহকারী অধ্যাপক অন্তরা জেরিন, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (বিডা) উপসচিব মো. আরিফুল হক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের যুগ্ম পরিচালক প্রদীপ পাল।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণের ১১ ধরনের উদ্বিগ্নতা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফরেন কারেন্সি রিস্ক, মোরাল হ্যাজার্ড, কস্ট অব বোরোয়িং, ফরেন কারেন্সি বোরোয়িং লোকাল বিজনেস অর্গানাইজেশন, লোন ইউটিলাইজেশন, পলিসি আনসার্টেইনটি, পলিসি সাপোর্ট, ভেরিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন, বোরোয়িং ফ্রম অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং ঋণ অনুমোদনে দীর্ঘসূত্রতা।

এতে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রায় ২৪ শতাংশ বিদেশি ঋণ পোশাক খাতে। এরপর বিদ্যুতে ২১%, সোয়েটারে ১৬%,ডায়িং ও নিট গার্মেন্টে ১২%, টেক্সটাইলে ১১%, প্ল্যাস্টিকসে ৫%, সেবায় ৩% এবং ওষুধে ২%।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন বিআইবিএমের মুজাফফর আহমেদ চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা, সোনালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এসএ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বিডার নির্বাহী কমিটির সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উল-আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যবসায়ী বিশেষ করে রফতানিকারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশি ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে প্রথম দিকে এ ঋণের কিছু অপব্যবহার হয়েছিল। এখন এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোরভাবে নজরদারি করছে।

তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ বেসরকারি খাতে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে। বাংলাদেশে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও বিষয়টি সর্তকতার সঙ্গে দেখতে হবে।

অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণের প্রয়োজন রয়েছে। তবে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ যেন ভিন্ন খাতে ব্যবহার না হয় সেদিকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংককেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করলে তারল্য সঙ্কট থাকবে না। তবে এজন্য সরকারি বন্ড মার্কেট ডেভেলপ করা জরুরি। পরিকল্পিতভাবে উদ্যোগ নিলে ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সঙ্কট থাকবে না।

বিডার নির্বাহী কমিটির সদস্য নাভাস চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ২০০৯ সালের দিকে ব্যাংকে উচ্চ সুদের কারণে একটি সঙ্কট সৃষ্টি হয়। ব্যাংক ঋণ নিয়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে অনেক বেশি খরচ পড়ে যাচ্ছে। আরো কয়েকটি কারণে সরকার বিদেশি ঋণের অনুমোদন দেয়। কিন্তু ঋণ গ্রহীতাদের ঋণের অর্থ সঠিক বিনিয়োগ করতে হবে।

বিআইবিএমের সাবেক চেয়ার প্রফেসর এসএ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে কোনো সংস্থার এক টাকাও খেলাপি না। অথচ ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের অর্থ ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছে। এটা মানা যায় না। ব্যাংকে ক্যাশ রিকভারি অনেক কমে গেছে। এটি ভাবনার বিষয়। কেন এটা হচ্ছে তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বিদেশি বাণিজ্যিক ঋণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে অর্থনীতিতে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। 

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, বিদেশি ঋণ নিয়ে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের একটি অংশের তাদের স্থানীয় ঋণও পরিশোধ করতে দেখা গেছে। এমন ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিদেশি ঋণের ব্যবহার বিষয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সব পক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। বিদেশি ঋণে অনেক ধরনের ঝুঁকি রয়েছে- এ কারণে ব্যাংকারদের পাশাপাশি গ্রাহকদেরও ভালো ধারণা থাকতে হবে।

অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, বিদেশি ঋণ অর্থনীতির জন্য চাপ সৃষ্টি না করে সেদিকে সরকারের সৃষ্টি রাখতে হবে। রেমিটেন্স, রফতানি এবং উৎপাদনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিদেশি ঋণ নেওয়ার অনুমোদন দিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, বিদেশি ঋণের কোনো অপব্যবহার না হয় সে বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে নজরদারি করতে হবে। এটি না করতে পারলে ঝুঁকির মুখে পড়বে অর্থনীতি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads