• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
খুলনায় স্থাপন হচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

খুলনায় স্থাপন হচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

খুলনায় স্থাপন হচ্ছে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২১ মে ২০১৮

বিকল্প হিসেবে তরল জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ রেখে খুলনায় গ্যাসভিত্তিক একটি নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার। ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যয় হবে ৮ হাজার ৪৯৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা নর্থপাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের (নওপাজেকো) তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৫০ কোটি টাকা। বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৫ হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি আগামীকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল লিমিটেডের পরিত্যক্ত ৫০ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে উঠেবে। এ লক্ষ্যে নেওয়া রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে অর্থায়নে বিদেশি সংস্থাগুলোর নেতৃত্ব দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এর বাইরে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) ও জাপান ফান্ড পর পোভার্টি রিডাকশান (জেএফপিআর) থেকেও আসবে বিদেশি সহায়তা। অবশ্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে প্রকল্প এলাকার জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এডিবির একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে। এর ফলে ডলফিনের প্রাকৃতিক প্রজনন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও জানিয়েছে এডিবি।

প্রকল্পটিতে অর্থায়নের লক্ষ্যে এডিবির পরিচালনা করা পরিবেশগত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকায় ভৈরব ও রূপসা নদীর ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বিপুল সংখ্যক ডলফিন পাওয়া গেছে। দেশের নদীগুলোতে ডলফিনের সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। এ অবস্থায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বিপুল শব্দের কারণে এ এলাকা থেকে ডলফিন বিতাড়িত হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল পরিবহনের কারণে ডলফিনের বিচরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তা ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশদূষণের কারণে ডলফিনের পাশাপাশি অন্যান্য জলজপ্রাণীর বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

বিদ্যুতের বাড়তি চাহিদার কারণে প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় খুলনায় ৮০০ মেগাওয়াটের কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে ভূমিকা পালন করবে। তা ছাড়া এর কাজ শেষ হলে বিদ্যুতের সিস্টেম লসও কমে আসবে। এ সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের পাশাপশি নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস লিমিটেডের পরিত্যক্ত ৫০ একর জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০২০ সালের মধ্যে ২৩ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি এ সব লক্ষ্য পূরণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে জিইডি।

বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে প্রয়োজনীয় গ্যাস এলএনজি আমদানি ও সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধি সাপেক্ষে সরবরাহ করা হবে মর্মে পেট্রোবাংলা থেকে নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। এ ক্ষেত্রে এলএনজি আমদানির পর দেশে উৎপাদিত গ্যাস ও আমদানি করা গ্যাসের মিশ্রিত মূলে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দেওয়া হবে। এ প্রকল্পে আগামী অর্থবছরের জন্য ৮০৭ কোটি টাকার বরাদ্দের সংস্থানও রাখা হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে গ্যাস ও স্টিম টারবাইন জেনারেটিং সেট এবং হিট রিকভারি স্টিম জেনারেটিং সেট স্থাপন, ব্যালেন্স অব প্লান্ট (বিওপি), চারটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার, ডিস্ট্র্রিবিউটেড কন্ট্রোল সিস্টেম স্থাপন, ২৯ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, গ্যাস ডিস্ট্র্রিবিউশন পাইপলাইন স্থাপন, ভূমি ক্রয়, অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন, আবাসিক ও অনাবাসিক পূর্তকাজ সাধন এবং কারিগরি পরামর্শক সেবা ইত্যাদি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads