• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সুদের টাকায় বিপুল মুনাফা তেল কোম্পানির

জ্বালানি তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার লোগো

অর্থ ও বাণিজ্য

সুদের টাকায় বিপুল মুনাফা তেল কোম্পানির

  • আলতাফ মাসুদ
  • প্রকাশিত ২৫ মে ২০১৮

জ্বালানি তেল বিপণনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা মূল ব্যবসা থেকে যে টাকা আয় করে, তার কয়েকগুণ বেশি করে ব্যাংকে রাখা আমানতের সুদ থেকে। এ কারণেই সরকারি তেল কোম্পানিগুলো প্রতিবছর আকাশচুম্বী মুনাফা দেখাতে পারছে। পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য মিলেছে।

চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সময় যমুনা অয়েল লিমিটেডের পরিচালন মুনাফা হয় ২২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। আর একই সময়ে ব্যাংকে রাখা স্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি আমানত থেকে সুদ বাবদ আয় হয়েছে ২৪১ কোটি। একইভাবে পদ্মা অয়েল কোম্পানির পরিচালন মুনাফা ৬৭ কোটি ২৩ লাখ। আর সুদ বাবদ আয় হয়েছে ১৯৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। জ্বালানি পরিবহন ও বিপণন থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত অপর কোম্পানি মেঘনা পেট্রোলিয়াম চলতি হিসাব বছরের ৯ মাসে পরিচালন মুনাফা করেছে ৫৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। আর একই সময়ে কোম্পানিটির সুদ বাবদ আয় ২২০ কোটি।

শুধু চলতি বছরই নয়, এর আগেও কোম্পানি তিনটি যে নিট মুনাফা করেছে, তার বড় অংশই এসেছে সুদ থেকে। বিভিন্ন ব্যাংকে এ তিন কোম্পানির ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি আমানত রয়েছে, যা এদের উচ্চ মুনাফায় প্রধান ভূমিকা রাখছে। এসব কোম্পানি জ্বালানি তেল বাজারজাতকরণের পাশাপাশি লুব্রিকেন্ট অয়েলের ব্যবসাও করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে তারা কাজ শুরু করেছে।

২০১৬-১৭ হিসাব বছরে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের পরিচালন মুনাফা হয় ৭৩ কোটি টাকা। আর এ সময় ব্যাংকে গচ্ছিত আমানত থেকে সুদ বাবদ আয় করে ২৩৯ কোটি। নিট মুনাফা হয় ২১৯ কোটি টাকা। আগের বছর পরিচালন মুনাফা ছিল ৪৩ কোটি ও সুদ বাবদ আয় ছিল ২২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ হিসাব বছর পর্যন্ত মেঘনা পেট্রোলিয়ামের সুদ বাবদ আয় হয় ১ হাজার ১১৪ কোটি টাকা। আর এ সময়ে পরিচালন মুনাফা হয় ৩৩১ কোটি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছর শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম অয়েলের স্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে যমুনা অয়েলের পরিচালন আয় ধারাবাহিকভাবে  কমেছে। বিপরীতে সুদ বাবদ আয় বাড়ছে। যমুনা অয়েল ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে পরিচালন মুনাফা করে ৩১ কোটি টাকা। আর এ সময় বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা আমানত থেকে সুদ পায় ২৮১ কোটি। সর্বশেষ হিসাব বছরে কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা হয় ২২৪ কোটি। ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে যমুনা অয়েলের পরিচালন মুনাফা ৩৩ কোটি ও সুদ আয় ২৪০ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ হিসাব বছর পর্যন্ত যমুনার সুদ বাবদ আয় হয় ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা। একই সময়ে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩৯০ কোটি। ২০১৬-১৭ হিসাব বছর শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে যমুনা অয়েলের স্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে ১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা রয়েছে স্বল্পমেয়াদি আমানত হিসেবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোর মধ্যে যমুনার ব্যবসায় কিছুটা বৈচিত্র্য রয়েছে। তেল বাজারজাতকরণের পাশাপাশি অন্য কোম্পানির সঙ্গে এটি এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড ও ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেড গড়ে তুলেছে।

২০১৬-১৭ হিসাব বছরে পদ্মা অয়েলের পরিচালন মুনাফা হয় ১০৬ কোটি টাকা। এ সময় সুদ বাবদ আয় হয় ১৭৮ কোটি। আগের বছর পরিচালন আয় ছিল ১১৩ কোটি ও সুদ বাবদ আয় ১৪৯ কোটি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন ব্যাংকে রাখা আমানত থেকে পদ্মা অয়েল ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা সুদ পেয়েছে। ২০১৬-১৭ হিসাব বছর শেষে বিভিন্ন ব্যাংকে পদ্মা অয়েলের নগদ ও স্থায়ী আমানত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে পদ্মা অয়েলের কোম্পানি সচিব মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, এটা ঠিক যে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলোর মুনাফার বড় অংশই আসছে সুদ থেকে। আর মূল ব্যবসা থেকে আয় না বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পণ্য বাজারজাতকরণে কমিশন কিংবা মার্জিন বাড়লেও বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন কারণে প্রশাসনিক ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে পরিচালন মুনাফা একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনা প্রসঙ্গে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, কয়েক বছর আগে পদ্মা অয়েল এগ্রো-কেমিক্যালের ব্যবসায় নেমেছে। তবে এ খাতে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে সফলতা তেমন আসছে না। এরপরও আমরা ব্যবসায় বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমাদের জমি আছে, যেগুলোয় বাণিজ্যিক ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এসব ভবন ভাড়া দিয়ে ভিন্ন আয়ের উৎস বের করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads