• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বেতন বৈষম্যে ১৬০ লাখ কোটি ডলার হারাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

বেতনে বৈষম্যের কারণে মানব সম্পদের বড় একটা অংশ অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না

প্রতীকী ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

বেতন বৈষম্যে ১৬০ লাখ কোটি ডলার হারাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৩ জুন ২০১৮

প্রাকৃতিক সম্পদে নির্ভরতার দিন ফুরিয়েছে। বিশ্বের মোট সম্পদে এখন মানব সম্পদের অবদানই বেশি। অথচ বেতনে বৈষম্যের কারণে মানব সম্পদের বড় একটা অংশ অর্থনৈতিক উন্নতিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা বিশ্বব্যাংকের হিসাবে নারীরা তুলনামূলক কম বেতন পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬০ লাখ কোটি ডলারে। বেতন বৈষম্যের কারণে এক জীবনে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাথাপিছু ২৩ হাজার ৬২০ ডলার। বিশ্বব্যাংকের ‘অনিরূপিত সম্ভাবনা : আয়ে লিঙ্গ বৈষম্যের চড়া মূল্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জি-৭ গ্রুপের সম্মেলন সামনে রেখে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই নারীরা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। শ্রমশক্তিতে যোগদানে ও পারিশ্রমিকে নারী শিকার হচ্ছেন বৈষম্যের। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) মাত্র ৩৮ শতাংশ অবদান রাখতে পারছেন নারীরা। নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশগুলোয় মানব সম্পদে নারীদের অবদান এক তৃতীয়াংশেরও কম।

নারীরা পুরুষের সমান আয় করতে পারলে বিশ্বের অনেক দেশের জিডিপি দ্বিগুণে উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বৈষম্য নিরসন করে বিশ্বের মানব সম্পদের মূল্য ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ বাড়বে প্রায় ১৪ শতাংশ।

এ অবস্থায় নারীদের কর্মবাজারে যোগ করতে মৌলিক অবকাঠামো ব্যবহারে সমঅধিকারের নিশ্চয়তা, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ক্রিস্টালিনা জার্জিভা বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি থেকে ১৬০ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ এ সময় অসমতাকে বড় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের এখনই উদ্যোগ নেওয়া উচিত। বৈষম্য নিরসনে নীতিমালা প্রণয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, নারীদের জন্য পর্যাপ্ত ভালোমানের কর্ম সৃজন ও সমান মজুরি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ও প্রতিবেদনটির প্রণেতা কুইন্টিন ওদুন বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদ ও মূলধনি সম্পত্তির সমন্বয়ে বিশ্বের মোট সম্পদের দুই তৃতীয়াংশই মানব সম্পদ। নারীরা পুরুষের চেয়ে কম আয় করায় বিশ্বব্যাপী মানব সম্পদের সামর্থ্যের ২০ শতাংশই নষ্ট হচ্ছে।

তবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে লিঙ্গভেদে আয়বৈষম্যে তারতম্য রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বৈষম্যের কারণে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ কোটি থেকে ৫০ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে পূর্ব এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায়। এসব অঞ্চলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানব সম্পদের অবস্থান। এর বাইরের অন্য অঞ্চলেও আয়ে লিঙ্গবৈষম্য প্রবল।

দক্ষিণ এশিয়ায় লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে ৯ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।  ৬ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকায়। মধ্যপ্রাচ্যে ৩ লাখ ১০ হাজার কোটি ডলার, সাহারা অঞ্চলের আফ্রিকা দেশগুলো আড়াই লাখ কোটি ডলার হারাচ্ছে। দরিদ্র অঞ্চলের দেশগুলো উন্নত দেশের তুলনায় আর্থিক হিসাবে কম ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের মোট সম্পদের তুলনায় এসব দেশে বৈষম্যের কারণে সম্পদহানির হার অনেক বেশি।

আগে অন্য এক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ১৯৯৫ সালে বিশ্বের মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৯০ লাখ কোটি ডলার। আর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪৩ লাখ কোটি মার্কিন ডলারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) আওতাধীন ৩৭ উন্নত দেশের মাথাপিছু আয় নিম্নআয়ের দেশগুলোর তুলনায় ৫২ গুণ বেশি। সম্পদে আঞ্চলিক বৈষম্যের পাশাপাশি লিঙ্গ বৈষম্যও প্রকট হচ্ছে।

ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে মাথাপিছু সম্পদের বাজারমূল্য ১২ হাজার ৭১৪ মার্কিন ডলার। দেশীয় মদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে উৎপাদিত সম্পদের বাজারমূল্য ৩ হাজার ৪৩৪ ডলার। প্রাকৃতিক সম্পদের মাথাপিছু মূল্য ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৩৪ ডলার। বাংলাদেশে মাথাপিছু ১ হাজার ৫০১ ডলার মূল্যমানের চাষযোগ্য জমি আছে। আর মানব সম্পদের মূল্য ধরা হয়েছে মাথাপিছু ৭ হাজার ১৭০ ডলার।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads