• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কুমিল্লায় ফুটপাথে কাপড়ের ভাঁজে নিম্নবিত্তের ঈদ

শত-সহস্র নিম্নবিত্ত কুমিল্লা নগরীর ফুটপাথে ভিড় করছে

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

কুমিল্লায় ফুটপাথে কাপড়ের ভাঁজে নিম্নবিত্তের ঈদ

  • কুমিল্লা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৬ জুন ২০১৮

জ্যৈষ্ঠের খরতাপ, সঙ্গে ভ্যাপসা গরমে ওষ্ঠাগত প্রাণ। তার মাঝেই ফুটপাথজুড়ে হাজারো মানুষের সঙ্গে পা চালিয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত বাবলু। চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া বাবলু মা আইরিনের সঙ্গে এসেছে ঈদের শার্ট প্যান্ট কিনতে। বাবা ভ্যানচালক। কাজ থাকায় সঙ্গে আসতে পারেননি। বাবলু আর তার মা আইরিন বেগম ফুটপাথের কাপড়ের ভাঁজে তাদের ঈদ আনন্দ খুঁজছেন। ১৫ রোজার পর থেকেই বাবলু আর আইরিনদের মতো শত-সহস্র নিম্নবিত্ত কুমিল্লা নগরীর ফুটপাথে ভিড় করছে। ফুটপাথের ওপর বাঁশের চাটাইয়ে, বাঁশের তৈরি ডালায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিংবা স্তূপ করে রাখা কাপড়ের ভাঁজে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঈদের নতুন পোশাক কিনতে ব্যস্ত সময় পার করছে নিম্ন আয়ের মানুষজন।

নগরীর শাসনগাছা রেলওয়ের ওভারপাসের নিচে, কান্দিরপাড় মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, রামঘাট এলাকায় ফুটপাথ ঘুরে ও ফুটপাথের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই-তিন দিন ধরে তাদের বেচাকেনা বেশ ভালোই চলছে। নিম্ন আয়ের মানুষরাই তাদের ক্রেতা। শুধু পোশাক-আশাকই নয়, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত তৈজসপত্রও বিক্রি করেন তারা।

নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় অভিজাত বিপণিকেন্দ্র সাত্তার খান কমপ্লেক্সের পাশে মায়ের সঙ্গে ফুটপাথে ঈদের নতুন জামা কিনতে এসেছে চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া বাবলু। কথা হয় বাবলু ও তার মা আইরিন বেগমের সঙ্গে। আইরিন বেগম জানান, তার স্বামী বাবুল মিয়া ভ্যান চালান। তাই আসতে পারেননি। স্বল্প আয়ের মানুষ। তাই ইচ্ছা থাকলেও পাশের অভিজাত বিপণিবিতানে যেতে পারেন না। আবার মৃদু হেসে বলে আরিন বেগম জানান, ‘আমডার আয় রোজগার কম, আমডার চাকরি নাই- বেতন বোনাসের লাইগগা চিন্তাই নাই। ১ হাজার টেহা আনছি পোলা আর মাইডারে দুইটা জামা কিইন্না দিলে আমডারও ঈদ হইয়া যাইবো।’

বাবলু শার্ট কিনেছে, এখন মায়ের কাছে বায়না ধরেছে নতুন প্যান্ট কেনার জন্য। তবে টাকার সঙ্কুলান করতে পারছেন না বলে ফুটপাথের কাপড় বিক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করে চলছেন আইরিন বেগম। পাশে ছেলে বাবলু অপলক চোখে তাকিয়ে আছে মা ও বিক্রেতার দিকে।

রাজগঞ্জ এলাকায় ফুটপাথে ছোটদের কাপড় বিক্রি করছেন আবুল কালাম। কথা হয় ফুটপাথের কাপড় বিক্রেতা আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি জানান, পনেরো রোজার পর থেকে ভিড় বাড়ছে। বেচাকেনাও বেশ ভালো। নিম্ন আয়ের সঙ্গে মধ্যবিত্তরাও আমাদের কাস্টমার, যোগ করলেন আবুল কালাম। রোজার শেষের দিকে ফুটপাথে বেচাকেনা আরো বাড়বে।

শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাসের নিচের ফুটপাথ থেকে নিজের জন্য একটি প্যান্ট ও শার্ট কিনেছে সাব্বির। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। দিনে নয় রাতের বেলা রিকশা চালায় সাব্বির। দিনের পুলিশের বাধা আছে। সাব্বির জানায়, দুই দিন আগে মায়ের জন্য একটা কাপড় আর ছোট বোনের জন্য একটি ফ্রক কিনেছে। এখন কিনল নিজের জন্য। কুমিল্লা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে সাব্বিরদের এলাকার দু’জন লোক বাড়ি যাবে। তাদের কাছে ঈদের জন্য কেনা মা ও দুই ভাইবোনের জন্য কেনা জামাকাপড় বাড়িতে পাঠিয়ে দেবে। ফুটপাথ থেকে কম মূল্যে ঈদের নতুন জামাকাপড় কিনতে পারায় সাব্বিরকে বেশ আনন্দিত দেখা গেল।

এদিকে নগরীর চকবাজার এলাকায় ফুটপাথ অবৈধ দখলমুক্ত করে পথচারীদের হাঁটাচলায় বেশ সুবিধা করে দেওয়ায় এ বছর চকবাজার ফুটপাথজুড়ে হকারদের হাঁকডাক নেই। তবুও একটু ভেতরে দুই-চারটে বস্তায় জামাকাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসতে দেখা গেল ভ্রাম্যমাণ পোশাক ব্যবসায়ীদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads