• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
আমদানি গুঁড়োদুধে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি

৩০ শতাংশ অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপের দাবি করেছেন দেশের খামারিরা

সংরক্ষিত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

আমদানি গুঁড়োদুধে অ্যান্টিডাম্পিং শুল্ক আরোপের দাবি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ জুন ২০১৮

আগামী অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে দুধের ঘাটতি মেটাতে আমদানি করা গুঁড়োদুধের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে ওই প্রস্তাবের সঙ্গে সহমত নয় দেশের দুগ্ধ খামারিরা। তারা বলছেন, বাজেটে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হলে প্রকৃত খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিদেশি এসব গুঁড়োদুধের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠতে পারবে না তরল ও পাস্তুরিত দুধ বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে লোকসানে পড়বেন খামারিরা। এ কারণে গুঁড়োদুধ আমদানিতে শুল্কহ্রাস নয় বরং ২৫ শতাংশ শুল্ক ও ৩০ শতাংশ অ্যান্টিডাম্পিং ডিউটি আরোপের দাবি করেছেন দেশের খামারিরা।

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের আপামর জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুঁড়োদুধের কোনো ভূমিকা নেই। সে ঘাটতি পূরণ হচ্ছে খাঁটি তরল দুধের মাধ্যমে। কিন্তু বাজেটে উল্টো ঘাটতি পূরণের অজুহাতে গুঁড়োদুধের ওপর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

বিডিএফএ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ফিল্ড মিল্ক পাউডার (এফএমপি) বা গুঁড়োদুধের আমদানিতে শুল্ক কমানোর মধ্য দিয়ে দেশীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারী খাতকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। দুগ্ধ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের সাধারণ খামারিরা আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনছেন। দুগ্ধ উৎপাদনকে উৎসাহিত করতে সরকার যখন ইতিবাচক উদ্যোগ নিচ্ছে, এমনকি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ প্রকল্প (৫ হাজার কোটি টাকার) বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, তখন গুঁড়োদুধের ওপর শুল্ক হ্রাস সরকারের নীতিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ প্রস্তাবনা বাস্তবায়িত হলে সারা দেশের লাখো খামারির সর্বনাশ হবে, এ খাতে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বের প্রধান দুগ্ধ উৎপাদনকারী দেশগুলো এ খাতে বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি দিচ্ছে এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ পাউডার হিসেবে আমাদের মতো দেশগুলোতে ডাম্পিং করছে। ডেনমার্ক ভিত্তিক সংস্থা অ্যাকশন এইড ‘মিল্কিং দি পুওর’ প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, কীভাবে ইউরোপের দেশগুলো ভর্তুকিতে উৎপাদিত দুধ অন্য দেশে ডাম্পিং করছে। আমাদেরও অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে হলে গুঁড়োদুধ আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

বিডিএফএ মহাসচিব শাহ এমরান বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মাথাপিছু দৈনিক ২৮০ মিলিলিটার দুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। সে হিসাবে বাৎসরিক চাহিদার পরিমাণ প্রায় ১৪৫০ কোটি লিটার। ২০১৭ সালে দেশে উৎপাদিত হয়েছে চাহিদার ৬২.৪ শতাংশ, অর্থাৎ আমদানিনির্ভরতা ছিল মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ, মাত্র ৭ বছর আগে এ নির্ভরশীলতা ছিল প্রায় ৬০ ভাগ।

মহাসচিব বলেন, বিগত পাঁচ বছরে গুঁড়োদুধের আমদানি ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এতে এক ধরনের কমিশন বাণিজ্য কাজ করছে। শুরুর দিকে গুঁড়োদুধের ওপর আমদানি শুল্ক ছিল প্রায় ৫১ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এ হার ছিল ২৫ শতাংশ। কিন্তু এ বছর তা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বিগত ৫ বছরে দেশে কয়েক লাখ শিক্ষিত বেকার যুবক ও প্রবাসী এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন। এ খাতটি প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। যেখানে ২০১০-১১ সালে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা ছিল ৭৯,৯৪২টি, তা ২০১৬-১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ। জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে মোট কর্মসংস্থানের ২১ শতাংশ, মোট আমিষের ৮ শতাংশ আসে মাংস ও দুধ থেকে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য  দেন জাতীয় দুগ্ধ ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও ব্র্যাকের ডেইরি অ্যান্ড ফুড বিভাগের পরিচালক আনিসুর রহমান, বাংলাদেশ এসএমই করপোরেশন লিমিটেডের পরিচালক হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, আজাদ চৌধুরী; অক্সফামের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার মুহতাসীম বিল্লাহ, কেয়ার-বাংলাদেশের মার্কেট ডেভেলপমেন্ট স্পেশালিস্ট সাদরুজ্জামান নূর (তামাম) প্রমুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads