• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বিদায়ী অর্থবছরে ৮৩৮ কোটি টাকা লোকসান

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) লোগো

সংরক্ষিত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বিসিআইসির রেকর্ড

বিদায়ী অর্থবছরে ৮৩৮ কোটি টাকা লোকসান

  • কাওসার আলম
  • প্রকাশিত ২৪ জুন ২০১৮

লোকসানে নতুন রেকর্ড গড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরের (২০১৭-১৮) ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিসিআইসির আওতাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসান গুনেছে প্রায় ৮৩৮ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৮৫ কোটি টাকা। বছর ব্যবধানে বিসিআইসির লোকসানের পাল্লা ৭৩ শতাংশ বেড়েছে। গত এক দশকে এবারই সবচেয়ে বেশি লোকসান দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মুনাফার মুখ দেখেছিল তারা। ওই সময় তাদের মুনাফার পরিমাণ ছিল ১০৩ কোটি টাকা। কিন্তু এরপরই টানা লোকসান দিয়ে আসছে বিসিআইসি। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৮-তে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

লোকসানের কারণ হিসেবে সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সময় মতো ও পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ার কারণে বিসিআইসির আওতাধীন সার কারখানাগুলো বছরের অধিকাংশ সময়ই বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ কারণে সক্ষমতার অর্ধেক উৎপাদনও করতে সমর্থ হচ্ছে না কারখানাগুলো। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হচ্ছে। অপরদিকে বিসিআইসির অধিকাংশ কারখানা অনেক পুরনো। জোড়াতালি দিয়ে চলছে কারখানাগুলো। এ কারণে প্রায়ই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে। সার কারখানাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের পাশাপাশি পুরনো কারখানাগুলোর আধুনিকায়ন করা হলে মুনাফার মুখ দেখত বিসিআইসি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন বিসিআইসির আওতায় মোট ১৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে আটটি সার কারখানা, একটি পেপার মিল, একটি সিমেন্ট কারখানা, একটি গ্লাসশিট কারখানা, একটি ইন্স্যুলেটর ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানা, একটি রসায়ন ও একটি হার্ডবোর্ড মিল রয়েছে। তবে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের উৎপাদন এখনো শুরু হয়নি। বিসিআইসির নিয়ন্ত্রাণধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে ৮০ শতাংশই হচ্ছে সার। সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় ইউরিয়া। ইউরিয়া উৎপাদনে প্রধান কাঁচামালই হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউরিয়া সার কারখানাগুলোতে বছরের অধিকাংশ সময়ই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এ কারণে উৎপাদন সক্ষমতার ৪০ শতাংশেই সার উৎপাদন হচ্ছে না।

বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে, ৮টি সার কারখানার মধ্যে ৬টি কারখানায় ইউরিয়া সার উৎপাদন হয়। কারখানাগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতার পরিমাণ হচ্ছে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার টন। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ সার কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কারখানাগুলোর প্রাথমিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ লাখ টন। কিন্তু গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না পাওয়ায় পরে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯ লাখ ২ হাজার টনে নামিয়ে আনা হয়। এর মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে আশুগঞ্জ, পলাশ ও ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরির জন্য কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি। এ তিনটি সার কারখানার উৎপাদন সক্ষমতার পরিমাণ হচ্ছে ৯ লাখ ৬৩ হাজার টন, যা কারখানাগুলোর মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। গত মার্চ মাসের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ওই তিনটি ইউরিয়া সার কারখানায় কোনো সার উৎপাদন হয়নি। অপর তিনটি সার কারখানায় উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭ লাখ টন। শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি ছাড়া কোনো সার কারখানায়ই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি।

চট্টগ্রামে সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হলেও বিদেশি মালিকানাধীন কাফকোয় গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। বিসিআইসির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, দিনের পর দিন কারখানা বন্ধ থাকায় সার কারখানাগুলোর যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানকে এভাবে চালানো হলে তা তো লোকসানে থাকবেই।

এদিকে কর্ণফুলী পেপার মিলের উৎপাদন সক্ষমতা ৩০ হাজার টন হলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার টন। কিন্তু গত মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৩ হাজার টন কাগজ উৎপাদিত হয়েছে। যান্ত্রিক ত্রুটি ও পাল্পের মজুত স্বল্পতার কারণে উৎপাদনে ধস নেমেছে এ কোম্পানিটির। অপদিকে খুলনা হার্ডবোর্ড মিলসের উৎপাদন গত ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে বন্ধ রয়েছে। ফার্নেস অয়েলের অভাবে কারখানাটি উৎপাদনে যেতে পারছে না বলে বিসিআইসি সূত্রে জানা গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনো কারিগরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারেনি চিটাগং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। এ কারখানাটিতে কস্টিক সোডা, তরল ক্লোরিন, অ্যাসিড, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল। উৎপাদন না হলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে করপোরেশনকে। ফলে বছর শেষে বড় ধরনের লোকসান গোনা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ খোলা থাকছে না।

এদিকে পুরনো সার কারখানা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর শক্তিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব সার কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পলাশ ও ঘোড়াশাল সার কারখানার আধুনিকায়নে টেন্ডার ডকুমেন্ট মূল্যায়ন শেষে শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads