• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
তিন কারখানার আধুনিকায়ন চায় বিজেএমসি

বিজেএমসি ভবন

ছবি : সংরক্ষিত

অর্থ ও বাণিজ্য

তিন কারখানার আধুনিকায়ন চায় বিজেএমসি

ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৬ জুন ২০১৮

 

 

 

ষাটের দশকে স্থাপন করা পাটকলগুলোর অধিকাংশই জরাজীর্ণ। পুরনো যন্ত্রপাতি ব্যবহারের কারণে এসব কারখানার উৎপাদনশীলতা নেমে এসেছে শূন্যের কোটায়। এর ফলে প্রতিবছর বড় অঙ্কের লোকসান দিচ্ছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। এ অবস্থায় সারা দেশের সব পাটকল আধুনিকায়নে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ধারাবাহিকতায় অগ্রাধিকার বিবেচনায় প্রথম দফায় বিজেএমসির তিনটি কারখানা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের তিনটি মিল সুষমকরণ, আধুনিকায়ন, পুনর্বাসন ও বর্ধিতকরণ শীর্ষক প্রকল্প নিয়েছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য আজ মঙ্গলবার উপস্থাপন করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিল, যশোর জুট মিল ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গালফ্রা হাবিব লিমিটেডের আধুনিকায়নে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৫০ কোটি টাকা। অবশিষ্ট ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বিজেএমসির তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে।

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাটকলগুলোর চলমান মেশিনগুলো পুনর্বাসনের মাধ্যমে দক্ষতা ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। তা ছাড়া মিলগুলোকে বর্ধিতকরণ ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানো হবে। প্রকল্পের আওতায় পাটকলের জন্য সহায়ক যন্ত্রপাতি তৈরি ও ন্যায্যমূল্যে সরবরাহ করে আউটসোর্সিংয়ে নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে। উন্নতমানের পাটপণ্য তৈরি করে দেশ-বিদেশের চাহিদা পূরণ করে আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখবে প্রকল্পটি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে মিলগুলোর খালি জায়গা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ানো হবে বলেও জানানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।

প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিল, যশোর জুট মিল ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের গালফ্রা হাবিব লিমিটেড স্থাপন করা হয়েছিল ষাটের দশকে। এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ক্ষমতা এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। নতুন যন্ত্র স্থাপন হলে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা অনেকাংশেই বাড়বে।

এতে আরো বলা হয়েছে, প্রতিবছর পাটশিল্পের কারখানায় যন্ত্রপাতি স্থাপনে বিপুল পরিমাণের অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেইে গালফ্রা হাবিব বিজেএমসির মালিকানায় থেকে পাটকলগুলোতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে আসছে। কারখানাটির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন প্রয়োজন। এ কাজ করা গেলে বিজেএমসির সব কারখানার যন্ত্রপাতি সরবরাহ সম্ভব হবে।

প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ৩৮৭টি যন্ত্রপাতি ও অন্য সরঞ্জামাদি সংগ্রহ করা হবে। ৩ হাজার ৬০০ বর্গফুট অফিস নির্মাণ করা হবে। অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে ৪৫ হাজার বর্গফুট। এর বাইরে পানি নিষ্কাশন সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি মেরামত, আবাসিক ভবন মেরামত, অভ্যন্তরীণ রাস্তা মেরামত, প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ করা হবে প্রকল্পের আওতায়।

এ বিষয়ে মতামত দিতে গিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশে এসব পণ্য রফতানি করে আয় বাড়ানো সম্ভব হবে। তা ছাড়া এ বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। এসব বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।

প্রকল্পটির প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে বিজেএমসিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনার ভিত্তিতে ২০১৬ সালের আগস্টে মিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন দেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কারখানাগুলো পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। পাশাপাশি এসব কারখানায় কর্মস্থানের পরিমাণও বাড়বে। একই মাসে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রকল্পটির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। কমিশনে আয়োজিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভায় বেশ কয়েকটি নির্দেশনা পরিপালন সাপেক্ষে প্রস্তাবটি একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করে।

প্রসঙ্গত, অব্যবস্থাপনা ও পুরনো যন্ত্রপাতির কারণে প্রতিবছর বিজেএমসির লোকসান বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪৮৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গত অর্থবছর বিজেএমসির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৪৮০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৬৫৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, এর আগের বছর ৭২৬ কোটি ৫ লাখ টাকা লোকসান দেয় বিজেএমসি। সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি সবশেষ ২০১০-১১ অর্থবছরে লাভের মুখ দেখে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ হাজার ৩০০ কোটি ৪৯ লাখ টাকা লোকসান দেয় বিজেএমসি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads