• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
এডিপি বাস্তবায়নে রেকর্ড

লোগো আইএমইডি

সংরক্ষিত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

এডিপি বাস্তবায়নে রেকর্ড

· শেষ মাসে ব্যয় ৪৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা · প্রতিপালন হচ্ছে না প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা · গুণগত মান নিয়ে উঠছে প্রশ্ন

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০৪ জুলাই ২০১৮

অর্থবছরের শেষ প্রান্তে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের ধারা থেকে বের হতে পারছে না সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। সদ্য সমাপ্ত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) বরাদ্দের মাত্র ৬২ দশমিক ৮১ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছিল। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ মাসে বাস্তবায়ন হার ২ শতাংশ পয়েন্ট কম থাকায় বছর শেষে এডিপি বরাদ্দের বিপুল অর্থ ফেরত যাওয়ার আশঙ্কা করছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শেষ মাস জুনে উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ায় শেষ পর্যন্ত গত অর্থবছরের এডিপি বাস্তবায়ন হার দাঁড়ায় ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশে। শেষ মাসে বাড়তি ব্যয়ের সুবাদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে বলে দাবি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)।

সারা বছর একধরনের ‘স্থবিরতা’ থাকলেও শেষ পর্যায়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় করায় এডিপি বাস্তবায়নের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। এক মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের বিষয়টিকেও তারা অস্বাভাবিক বলে মন্তব্য করছেন। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জুন মাসে এমনিতেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে বেশি। এডিপির আওতায় নেওয়া প্রকল্পের বড় অংশ ব্যয় হয় নির্মাণকাজে। বৃষ্টিতে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় এ সময় অর্থ ব্যয় তুলনামূলক কম হওয়ার কথা। বৃষ্টির সময়ে বেশি কাজ হলে যথাযথ মান নিশ্চিত হয় না। তারা বলছেন, এডিপির আওতায় নেওয়া প্রকল্পগুলো সারা বছর ফেলে রাখা হয়। শেষ দিকে দায়সারা কাজ করে উঠিয়ে নেওয়া হয় পুরো টাকা। তাই শেষ দিকে ব্যয়ের বড় একটা অংশ অপচয় হয়।

গতকাল রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে প্রকাশিত আইএমইডির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছর এডিপি বাস্তবায়নে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বছরের শুরুতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে তা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল। মূল এডিপির ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে গত অর্থবছর, যা আরএডিপির ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

অর্থবছরের ১১ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ৯৮ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছিল বলে জানিয়েছে আইএমইডি। এ হিসাবে শেষ মাসে ব্যয় হয়েছে ৪৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। এক মাসে এডিপি বাস্তবায়নে এত বেশি অর্থ ব্যয়ের রেকর্ড আর নেই। এডিপি বাস্তবায়নে মোট ব্যয়ের প্রায় ৩৩ শতাংশ অর্থই ছাড় হয়েছে শেষ মাসে। অথচ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছিল ৪৪ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথমার্ধে শেষ মাসের চেয়ে কম ব্যয় হয়েছে উন্নয়ন প্রকল্পে।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শেষ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ২৮ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা। সারা বছরে এডিপি ব্যয় দাঁড়ায় ৮৬ হাজার ৮৪২ কোটি টাকায়। এ হিসাবে এক মাসেই ব্যয় হয় মোট ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েক বছর ধরেই শীতকালে উন্নয়ন কাজে গতি আনার তাগিদ দিয়ে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পত্র দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের চিঠিও দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজ শেষ না হলে নতুন করে প্রকল্প অনুমোদন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্প বাতিলেও নির্দেশ রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। তবে এসব নির্দেশনা মাঠ পর্যায়ে কাজে আসছে না।

এক মাসে এডিপি ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এটা অনেক পুরনো সমস্যা। বছরের শুরু থেকে প্রকল্প ফেলে রেখে শেষ দিকে দায়সারা কাজ করা হয়। বর্তমান সরকারও এ বিষয়ে অবহিত। বছরের শুরুতে কাজ করতে প্রতিবারই নির্দেশনাও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো নির্দেশনারই বাস্তবায়ন হয় না। তিনি বলেন, একসঙ্গে বেশি প্রকল্প নেওয়ার কারণে বাস্তবায়নে গতি আসে না। তবে অর্থ ফেরত যাওয়ার ভয়ে শেষ দিকে কিছু কাজ করে টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়। এতে জনগণের কোনো কাজে আসে না। গুণগত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এডিপির আওতায় প্রকল্পের সংখ্যা কমানোর পরামর্শ দেন সালেহ উদ্দিন আহমেদ। অর্থনীতির মৌলিক কাঠামো পরিবর্তনে সক্ষম এমন বড় প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়ারও তাগিদ দেন তিনি।

একনেক বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরে এডিপি সংশোধন করা হবে না। এবার শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত অর্থবছরে তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় করা হয়েছে। এবার গতবারের চেয়ে ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো গেলে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব।

আইএমইডি সচিব মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছর বড় বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে তাদের সমস্যা শুনে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারই ফল পাওয়া গেছে মোট এডিপি বাস্তবায়নে। তাছাড়া শতভাগ প্রকল্প মনিটরিং শুরু করা হয়েছে গত অর্থবছর থেকেই। কম জনবল নিয়েও এ কাজ অব্যাহত রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads