• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
অবকাঠামো বিনিয়োগে তলানিতে বাংলাদেশ

পদ্মাসেতুর নকশা

অর্থ ও বাণিজ্য

এডিবির প্রতিবেদন

অবকাঠামো বিনিয়োগে তলানিতে বাংলাদেশ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ১৩ জুলাই ২০১৮

গত অর্থবছরে (২০১৭-১৮) অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২৩ দশমিক ৬১ শতাংশে উন্নীত হলেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ হয়েছে জিডিপির ৩১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ৫ লাখ ২৮ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা সঞ্চয়ের বিপরীতে এক বছরে বিনিয়োগ হয়েছে ৭ লাখ ৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। ১ লাখ ৭৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা বেশি জোগান সত্ত্বেও দেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না। এ খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগের হার এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় তলানিতে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবকাঠামো খাতেও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না বাংলাদেশে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এশিয়ার দেশগুলোয় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

এশিয়ার অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন ঘাটতি শীর্ষক প্রতিবেদনটি সম্প্রতি এডিবির সদর দফতর ফিলিপাইনের ম্যানিলা থেকে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক উন্নতির সঙ্গে এশিয়ার দেশগুলোয় অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের চাহিদা বাড়ছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ সামান্য বাড়লেও থেকে যাচ্ছে বড় অঙ্কের ঘাটতি। এ অঞ্চলের দেশগুলোর উন্নতি ধরে রাখতে প্রতিবছর আরো ৪৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বাড়তি বিনিয়োগ করতে হবে অবকাঠামো খাতে। এ হিসাবে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে এসব দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২ দশমিক ৪০ শতাংশে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক খাত হিসাবে আনলে অবকাঠামো বিনিয়োগে ঘাটতি দাঁড়ায় ৯০ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার উন্নয়নশীল ২৫টি দেশ প্রতিবছর গড়ে ৮৮ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে অবকাঠামো খাতে। এ খাতে মোট ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের চাহিদা রয়েছে। এ হিসাবে বছরে ঘাটতি থাকছে ৪৫ হাজার ৯০০ কোটি ডলার, যা এসব দেশের জিডিপির ২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অবশ্য হিসাব থেকে চীনকে বাদ দিলে অবশিষ্ট ২৪ দেশে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২৪ দেশ প্রতিবছর ১৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে থাকে। এ সব দেশের অবকাঠামো খাতে বছরে ৫০ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন। এ হিসাবে বছরে অবকাঠামো বিনিয়োগে ঘাটতি থাকছে ৩০ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এসব দেশ অবকাঠামো খাতে প্রয়োজনের মাত্র সাড়ে ৩৮ শতাংশ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারছে। আর ঘাটতি থাকছে অবশিষ্ট সাড়ে ৬১ শতাংশ।

অবকাঠামো অর্থায়নে মৌলিক সমস্যার সমাধানে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া না হলে এ খাতে অর্থায়নের ঘাটতি এশিয়ায় আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে এডিবি। এর ফলে অবকাঠামো ঘাটতিও প্রতিনিয়ত বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ প্রকল্পের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করা, বিদ্যমান অবকাঠামোর বিভিন্ন ঝুঁকি কমিয়ে আনা, বিনিয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক বাধা দূর করা, অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগকে মূলধন হিসেবে বিবেচনা করা ও দক্ষ পূঁজিবাজার গড়ে তোলায় গুরুত্ব আরোপ করেছে এডিবি।

এতে আরেও বলা হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে এশিয়ার দেশগুলোর সঞ্চয় হার বর্তমানে অনেক বেশি। ২০১৫ সালে এশিয়ার এক-তৃতীয়াংশ দেশেই সঞ্চয়ের হার ছিল ৩০ শতাংশের ওপর। ওই বছর চীনে সঞ্চয় হয়েছে জিডিপির ৪৫ শতাংশ। এক বছরে দেশটিতে সঞ্চয় হয়েছে ৫ লাখ কোটি ডলার। ২০১৬ সালে এশিয়ার দেশগুলো নিজ এলাকার বাইরে ৬ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ সময় এশিয়ায় অন্যান্য এলাকা থেকে এসেছে ৪ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ।

এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ হচ্ছে না বলে দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে এশিয়ার ১৮ দেশের শিক্ষা খাতে ৬৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ও স্বাস্থ্য খাতে ৮৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে কেবল কিরগিজস্থান, মঙ্গোলিয়া, চীন, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের দুটিতেই জিডিপির ৪ শতাংশের বেশি ব্যয় করতে পেরেছে। বাংলাদেশ, কাজাখস্তান ও পাকিস্তানের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বিনিয়োগ জিডিপির ৩ শতাংশের নিচে অবস্থান করছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অবকাঠামো খাতে জিডিপির ১ দশমিক ৭০ শতাংশ বিনিয়োগ করছে থাইল্যান্ড। তলানিতে থাকা দেশটির পরই জিডিপির ১ দশমিক ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ করে নিচের দিকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। অবকাঠামো খাতে জিডিপির সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ বিনিয়োগ করে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভুটানের অবকাঠামো বিনিয়োগ জিডিপির ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া ভিয়েতনাম ৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, ভারত ৫ দশমিক ৪০ শতাংশ ও মালদ্বীপ ৫ দশমিক ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে থাকে অবকাঠামোতে।

শ্রীলঙ্কা, জর্জিয়া ও ফিজির অবকাঠামো বিনিয়োগ ৪ থেকে ৫ শতাংশের মধ্যে। জিডিপির ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে আর্মেনিয়া। এ ছাড়া ২ থেকে ৩ শতাংশের  মধ্যে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করে থাকে মঙ্গোলিয়া, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলো।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads