• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে ব্যাংকারদের অনাগ্রহ

শাখা পর্যায়ে কাজ করলে টার্গেট পূরণের অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে

সংরক্ষিত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বিআইবিএমের গবেষণা

নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে ব্যাংকারদের অনাগ্রহ

আইসিসিডি বিভাগে জনবল সঙ্কট

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ আগস্ট ২০১৮

ব্যাংক খাতে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে আগ্রহ খুব কম। ১০০ ব্যাংকারের মধ্যে ৪০ জন নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করতে আগ্রহ দেখান না। অনাগ্রহী এসব ব্যাংকার মনে করেন, নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করলে তুলনামূলক সময় দিতে হবে বেশি। ফলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেশি সময় দেওয়া সম্ভব হবে না। অন্যদিকে মাত্র ১৯ শতাংশের প্রথম পছন্দ নিরীক্ষা বিভাগ। আগ্রহী ব্যাংকাররা মনে করেন, শাখা পর্যায়ে কাজ করলে টার্গেট পূরণের অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে। এজন্য অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগে কাজ করলে চাপমুক্ত থাকা যাবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড পারফরম্যান্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক কর্মশালায় এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য এবং বেসিক ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাইয়ুম মোহাম্মদ কিবরিয়া।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও কমপ্লায়েন্স বিভাগে (আইসিসিডি) জনবল সঙ্কট প্রকট। এ কারণে এ বিভাগের কর্মীদের ওপর চাপ বেশি থাকে। মোট কর্মীর মাত্র ১ দশমিক ৫২ শতাংশ আইসিসিডি বিভাগে কর্মরত। একজন কর্মীর ওপর চারটির বেশি শাখা নিরীক্ষার দায়িত্ব থাকে। আর ২২টির মতো শাখার দায়িত্ব থাকে একটি অডিট টিমের ওপর। ইন্টারনাল অডিট অ্যান্ড পারফরমেন্স অব ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ শীর্ষক গবেষণার জন্য ব্যাংক খাতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের ৩৮৯ জনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক খাতের বিশেষজ্ঞ, ব্যাংকের টপ ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে এ প্রতিবেদন করেছে বিআইবিএম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইসিসিডির জন্য আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা সঠিকভাবে হলে জনগণের আমানতের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। তিনি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সততা এবং নৈতিকতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

কর্মশালায় আরো বক্তব্য দেন পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, প্রাইম ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. সামসুদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর নিরীক্ষা ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এতে ব্যাংকে ঋণ সংক্রান্ত ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।

প্রাইম ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ড. সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রত্যেক ব্যাংকের শক্তিশালী ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার জন্য অডিট বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। কিন্তু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ তা চায় না। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বড় ঋণ দেওয়ার জন্য চাপ দেয়। কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণে এক শতাংশ বোনাসের ঘোষণাও দেন, যা সঠিক নয়।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা আরো শক্তিশালী করতে হবে। একই সঙ্গে দক্ষ জনবল নিয়োগ করতে হবে। এ বিভাগের কর্মীদের আইটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ব্যাংকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এসব উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, নিরীক্ষা বিভাগের কর্মীদের আরো দক্ষ করতে প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে। এতে ব্যাংকগুলো অনেক অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি-বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর অডিটের বিষয়ে অনেক ছাড় দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংক খাতের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন।

সমাপনী বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী বলেন, কোনো অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই সফলতা অর্জন করতে পারে না। অন্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যাংকের নিরীক্ষা আরো জোরদার করা উচিত।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads