• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

অর্থ ও বাণিজ্য

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং থেকে আর্থিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব

  • এম রেজাউল করিম
  • প্রকাশিত ০৫ আগস্ট ২০১৮

ইন্টারনেটের জগতে যিনি অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবেই পরিচিত তরুণ উদ্যোক্তা আল-আমিন কবির। বর্তমানে নতুন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য রিসোর্স এবং সফটওয়্যার ডেভেলপ করার লক্ষ্যে নিজেই মার্কেটেভার নামে একটি কোম্পানি পরিচালনা করেছেন তিনি। এর আগে ডেভসটিম লিমিটেডসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ তরুণ উদ্যোক্তা।

২০১২ সালে ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে বিশেষ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কার পেয়েছেন আল-আমিন। এর আগে ২০১১ সালে গ্রামীণ কমিউনিকেশনের এক প্রতিযোগিতায় নিজ গ্রামের ওয়েবসাইট তৈরি করে বিজয়ী হন এবং জাপানে এক কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। এ ছাড়া মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নকিয়া আয়োজিত টপ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এমনকি নিজ কর্মগুণে ফক্স নিউজ, এন্টারপ্রেনার ডটকমসহ জাতীয়-আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি নিজে কিছু করে বড় হওয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাড়ি জমানো যশোরের ছেলে আল-আমিন আজ নিজ অবস্থানে সফল হয়ে থেমে নেই। নিজের সঙ্গে দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের মাঝে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে কাজ করছেন তিনি। সম্প্রতি বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে এক আলাপে আল-আমিন কবির জানান, তার সফলতার সিঁড়ি মাড়ানোর গল্প।

নিজের উদ্যোক্তা হওয়া নিয়ে আল-আমিন কবির বলেন, নিজে কিছু করার স্বপ্নটা অনেক পুরনো, যা সবসময় আমাকে তাড়া করে বেড়াত। সেই তাড়নায় উদ্যোগও নিয়েছিলাম অনেক, অনেক কিছুই করার চেষ্টা করেছি। তবে ২০১২ সালের আগে সেভাবে কিছুতেই সফল হতে পারিনি।

তিনি বলেন, আমার উদ্যোক্তা হওয়ার মূল গল্পটা শুরু হয় ২০১২ সালের দিকে। আমি ঢাকায় এসে সরকারি তিতুমীর কলেজে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি প্রদায়ক হিসেবে কাজ শুরু করি কয়েকটি জাতীয় সংবাদপত্রে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়েই তখন লেখালেখি করতাম। ২০১২ সালে আমি স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দিলাম একটি অনলাইন পোর্টালে, যেখানে আমার কাজের একটি অংশ ছিল বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সার এবং অনলাইন প্রফেশনালদের সাক্ষাৎকার নেওয়া এবং সেগুলো প্রকাশ করা। কাজ করতে করতে এক সময় খেয়াল করলাম নতুনদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা হিসেবে প্রায় সবাই তাদের বক্তব্যে গাইডলাইনের বিষয়ে জোর দিচ্ছেন। তাদের ভাষ্যমতে অনলাইনে ভালো কোনো গাইডলাইন এবং মানসম্মত কোনো প্রশিক্ষণ না থাকায় এ খাতে বাংলাদেশে নতুন যারা ক্যারিয়ার গড়তে চায় তাদের জন্য সফল হওয়াটা বেশ কঠিন। তখন আমি চিন্তা-ভাবনা করি যে এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর সেই ভাবনা থেকেই ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং এবং অনলাইন পেশা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, সঠিক তথ্য দেওয়া এবং এ বিষয়ক মানসম্মত প্রশিক্ষণ প্রদান করার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিচিত কয়েকজন ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইন প্রফেশনালের সঙ্গে ২০১২ সালের ৪ মে যৌথভাবে ডেভসটিম লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করি, যা ছিল আমার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্যোক্তা হওয়া শুরু।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এত জায়গা থাকতে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে আল-আমিন কবির বলেন, আসলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে আপনি ঘরে বসেই একজনের পণ্য আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দেবেন। এর বিনিময়ে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন চলে আসবে আপনার পকেটে। এর পাশাপাশি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে আমার আসার কারণ হচ্ছে, এটা এমন একটা ব্যবসা যা আপনি একবার রপ্ত করে নিতে পারলে আপনাকে সফলতার দিকে সে নিজেই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে কাজ করলে আপনাকে ঘড়ি ধরে নিয়মমাফিক কাজ করে আয় করতে হবে না। সময়মতো মনোযোগ দিয়ে ভালোমতো কাজ করে রাখলে, সেখান থেকে অনেক দিন আয় করা সম্ভব। যাকে আমরা প্যাসিভ ইনকাম বলি।

যেমন বলা চলে, আপনি একটি গাড়ি কিনে ভাড়া দিয়ে রাখলেন। গাড়িটি যতবার ভাড়া দেবেন ততবারই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। ঠিক তেমনি অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কিংবা নিশ সাইট তৈরি হচ্ছে এমনই একটি প্যাবসিভ ইনকাম স্ট্রিম। আপনি একবার একটা নিশ সাইট তৈরি করে গুগলে র্যাংকিং করতে পারলে আপনি মাসের পর মাস সেখান থেকে ইনকাম পাবেন। এই কারণে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে আমার সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল এবং এই সেক্টরে কাজ শুরু করি।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে নতুনরা যেসব বাধার সম্মুখীন হতে পারে এবং সেগুলো থেকে পরিত্রাণের পরামর্শ হিসেবে আল-আমিন কবির বলেন, এই খাতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে দক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় ভালো লিখতে পারার সীমাবদ্ধতা। আমাদের দেশে এই বিষয়ে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় এ বিষয়টিতে দক্ষ লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তবে নিজ উদ্যোগে অনলাইনে পড়াশোনা করে অনেকেই এই বিষয়ে জেনে নিতে পারবেন। এ ছাড়া আমাদের মার্কেটএভার ব্লগেও আমরা এই বিষয়ে ধাপে ধাপে গাইডলাইন প্রকাশসহ নানা রকম তথ্য দিয়ে রেখেছি। সেখান থেকেও আগ্রহীরা ধারণা নিতে পারবেন।

আর নতুনদের ক্ষেত্রে আরেকটা বিষয় অবশ্যই বলতে চাই, সেটা হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং একটা ব্যবসা। আর চিরাচরিত নিয়মে ব্যবসা করতে হলে পুঁজি লাগবেই। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে পুঁজি হচ্ছে এই বিষয়ে জ্ঞান, টাকা, সময় এবং ধৈর্য। তাই কেউ যদি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করতে চায়, তার জন্য পরামর্শ থাকবে এই বিষয়ে জেনে-শুনে পড়াশোনা করে তারপরই বিনিয়োগ করুন। বাংলায় এখন প্রচুর টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়, সেগুলো দেখে কনটেন্ট রাইটিং এবং এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে তবেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে নামতে পারেন।

এ ছাড়া আমি মনে করি, সঠিকভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরু করলে এবং নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত লেগে থাকলে দীর্ঘ সময় ধরে আর্থিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads