• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো মহামন্দার আশঙ্কা

বিশ্ব ব্যাংক

সংরক্ষিত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো মহামন্দার আশঙ্কা

  • কল্লোল কর্মকার
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

২০০৮ সালে বৈশ্বিক ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয়ের পর আবারো ব্যাপক অর্থনৈতিক ধসের মুখোমুখি বিশ্ব অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারী ব্যাংক লেহম্যান ব্রাদার্সের দেউলিয়াত্বের দশ বছরে ব্যাংকিং খাতে গড়ে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির অবনমন হয়েছে বলে ডৌ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের (ডিজেআইএ) রিপোর্টে বলা হয়েছে।

বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যকার মর্টগেজ সংক্রান্ত সমস্যার মুখে ক্রেডিট মার্কেট শেয়ারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করে। এমন অবস্থায় ছয় হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের সম্পদের অধিকারী লেহম্যান ব্রাদার্সকে রাতারাতি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয় মর্টগেজ নীতিমালার কারণে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ধসে শুধু আবাসন খাত ঝুঁকির মধ্যে পড়লেও এবার আরো কয়েকটি খাত ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নে আসন্ন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধসের চারটি দিক তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে তিনি চীনের অর্থনৈতিক পলিসি, ব্রেক্সিট, ব্যাংকগুলোয় সাইবার হামলা এবং যুক্তরাজ্যের পারিবারিক ঋণ সঙ্কটকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার মতে, বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে চীন একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশটির অর্থ খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং একচেটিয়া এই উন্নতির ফলে অন্যান্য দেশের অর্থনীতিতে সন্দেহাতীতভাবেই প্রভাব পড়ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাইবার হামলার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের মতো ঘটনাকে ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সম্প্রতি সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকান ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেট বলেন, আসন্ন অর্থনৈতিক ধস কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব নয়। উন্নত দেশগুলো মুদ্রাবাজার থেকে দ্রুত মুনাফা তুলে নেওয়ায় অন্য দেশগুলোর অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে যাকে অর্থনীতির ভাষায় ‘বুদ বুদ’ বলা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ধসের পর বাফেট নিজেও গোল্ডম্যান শ্যাকসে বিনিয়োগের মাধ্যমে অনেক মুনাফা করেন। সর্বশেষ অর্থনৈতিক ধস রুখতে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যাংকের মর্টগেজ নীতিমালায় পরিবর্তন এবং আবাসন খাতকে স্থিতিশীল রাখতে কয়েকশ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। এতে বৈশ্বিক আবাসন খাতের বিপর্যয় কিছুটা ঠেকানো গিয়েছিল। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার দল (রিপাবলিকান) চলতি বছরের বসন্তের শুরুতেই কৌশলে ডড-ফ্রাঙ্ক নীতিমালার বিতর্কিত অংশ পাস করে নেয়, যাতে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোকে তাদের মর্টগেজ শর্ত আড়ালে রাখার সুযোগ দেওয়া এবং ওবামা আমলের উল্লেখযোগ্য অংশ সরিয়ে ফেলা হয়। ফলে নীতিমালার রক্ষাকবচ সরে যাওয়ায় ২০০৮ সালের ধসের চেয়েও এবারের ধস আরো ভয়াবহ হতে পারে। এদিকে ধসের সম্ভাবনা মাথায় রেখে ইতোমধ্যেই ট্রাম্প কানাডা, যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মতো মিত্রদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছেন। ট্রাম্পের এই দূরত্ব বাড়ানোকে আগাম ধসের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে সম্প্রতি কংগ্রেস আসন্ন অর্থনৈতিক ধস ঠেকাতে আবারো ডড-ফ্রাঙ্ক নীতিমালার মুছে দেওয়া অংশ ফিরিয়ে আনতে চাইছে। আর এতে মদত দিচ্ছে মাঝারি ও ছোটো সারির ব্যাংকগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরেই যে রাজনৈতিক অর্থনীতির সীমানা পরিবর্তন হচ্ছে তা স্বীকার করেছেন আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) নির্বাহী ব্যবস্থাপক ক্রিস্টিন লাগার্দে। সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ব্যাংকিং শিল্পের মোট অর্থের অর্ধেকই নিয়ন্ত্রণ করে জে পি মর্গান, গোল্ডম্যান শ্যাকস এবং সিটি গ্রুপের মতো দশটি ব্যাংক। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং ফেডারেল রিজার্ভ গত অর্থনৈতিক ধসের পরও এই ব্যাংকগুলোর অর্থ লেনদেনের ওপর কোনো নজরদারি আরোপ করেনি। তাই সামনের অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিশ্ব অর্থনীতি কোন দিকে মোড় নেবে তা নির্ধারিত হবে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর নীতিমালার ওপর।

সূত্র: সিএনবিসি, বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads