• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সবচেয়ে লাভবান হবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম

ছবি : ইন্টারনেট

অর্থ ও বাণিজ্য

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

  • কল্লোল কর্মকার
  • প্রকাশিত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আমেরিকা ও চীনের মধ্যে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধে লাভবান হচ্ছে বাংলাদেশ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশের গার্মেন্ট, কৃষি এবং পণ্য ক্রয়-বিক্রয় বাণিজ্যে নতুন পণ্য সরবরাহ লাইনের অংশীদার হওয়ারও সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। চীনের রফতানি পণ্যের ওপর একের পর এক অতিরিক্ত করারোপ করছে যুক্তরাষ্ট্র। পাল্টা পদক্ষেপ নিচ্ছে চীনও। এই বাণিজ্য যুদ্ধে দুই দেশের মিত্র দেশগুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

চায়না সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক এক্সচেঞ্জের সিনিয়র গবেষক শু চ্যাংচুনের মতে, এই লড়াইয়ে শুধু চীন একাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক যেসব কোম্পানি চীনে তাদের পণ্য উৎপাদন করে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি করে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে শুল্কারোপের কারণে। একই বাস্তবতা যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও।

চীনে শ্রমমূল্য ইতোমধ্যেই বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তি শ্রমমূল্যের কারণে দেশটির অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যেই তাদের শিল্প ক্ষমতা যেমন কমাতে বাধ্য হচ্ছে, তেমনি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্যান্য দেশের শ্রমশক্তির দিকে ঝুঁকছে। এক্ষেত্রে নিকটবর্তী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তাদের প্রথম পছন্দ। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে বেশকিছু খাতে চুক্তি করেছে। কিন্তু ভূ-রাজনীতির প্রশ্নে বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে অবকাঠামো বিনিয়োগের মতো কোনো প্রস্তাব এখনো গ্রহণ করেনি।

বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারের অন্যতম বিশ্লেষক এবং টেম্পলেটন ইমার্জিং মার্কেটস গ্রুপের নির্বাহী চেয়ারম্যান জোসেফ বার্নহার্ড মার্ক মোবিয়াস মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে সবচেয়ে লাভবান হবে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। সিএনবিসি চ্যানেলকে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম খুব জলদিই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিকারক দেশ হিসেবে নাম লেখাতে যাচ্ছে। কারণ গার্মেন্ট, জুতা এবং ভোক্তা পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই দেশগুলো এগিয়ে। দ্য স্টারে প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ইতোমধ্যেই গার্মেন্ট পণ্য সরবরাহে চীন ৩৬ শতাংশ থেকে কমে ৩৪ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ এই সরবরাহের ক্ষেত্রে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। রয়তানি বাড়ার অর্থনৈতিক মূল্যমান প্রায় ২৯ বিলিয়ন ডলার।

ট্রাম্প যদি ২০২০ সালের নির্বাচনে আবারো জয়লাভ করেন এবং একই বাণিজ্যনীতি বা আরো চরমপন্থায় যান, তাহলে হংকং এবং চীনের কোম্পানিগুলো স্বভাবতই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার দিকে ঝুঁকবে। আর এটা ঘটলে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহের লাইন পাল্টে যাবে, যার ধারাবাহিকতা শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। চীনের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী জ্যাক মাও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধ এক দশক ধরে চললে বিশ্ব বাণিজ্যের বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন আসতে বাধ্য।

গত সপ্তাহেই হ্যানয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এক বৈঠকে ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এক রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেই রিপোর্টে দেখানো হয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যে পশ্চিমা দেশগুলোর ৫৫ শতাংশ অংশীদারিত্ব কমে এখন দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে। অন্যদিকে এই প্রথমবার বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের হার অনেক বেড়েছে।

বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পণ্য মূল্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন থেকে বিপুল পরিমাণ গার্মেন্ট পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে এই পণ্যের মূল্য অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো স্বভাবতই গার্মেন্ট পণ্য কেনায় বাংলাদেশের মতো সস্তা উৎস খুঁজবে। ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম পরিণত হবে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে। ইতোমধ্যেই এই দুই দেশের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার পাঁচ শতাংশ করে বাড়ছে।

জে পি মর্গানের গবেষকদের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র হাইটেক পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অধিক শুল্ক এড়ানোর জন্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে ঝঁকবে। হাইটেক পণ্যের বাজার যে সরবরাহ লাইন ব্যবহার করে সেই লাইনেই নতুন বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি হয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানের বাজারও এক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হয়ে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত এবং কম্বোডিয়ার দিকে যাবে।

সূত্র: সিএনবিসি, ডব্লিউটিও, ব্লুমবার্গ, ব্যারনস।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads