• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ছয় বছরে রাজস্ব আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫.১৫ শতাংশ

রাজস্ব ভবন

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

ছয় বছরে রাজস্ব আয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ১৫.১৫ শতাংশ

  • বাসস
  • প্রকাশিত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বিদেশি ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বা রাজস্ব আয় বাড়ানোর যে পরিকল্পনা সরকারের ছিল, গত কয়েক বছরে তা অনেকাংশে সফল হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ছে, এর মূলে রয়েছে রাজস্ব আয়ের বড় উল্লম্ফন।

গত ছয় বছর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আয় গড়ে ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।

কর মেলাসহ এনবিআরের নানামুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগ কর আহরণের সাফল্যের পেছনে চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করেছে বলে মনে করছে কর প্রশাসন। এই সময়ে রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি করদাতার সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে ইলেকট্রনিক কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ই-টিআইএন) সংখ্যা ৩৬ লাখের ওপরে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘গত কয়েক বছরে অটোমেশন কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া, আয়কর মেলার আয়োজন, ট্যাক্স ও ভ্যাট কার্ড প্রদান, কর বাহাদুর পরিবারকে সম্মানা জানানোসহ এনবিআরের নানামুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগ দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি তৈরি করতে পেরেছে। যার ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব আয়ে ধারাবাহিক সাফল্য এসেছে।’

তিনি বলেন, আগে জনগণের মধ্যে করভীতি ছিল। বর্তমান সরকার জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে সেই ভীতি কাটাতে পেরেছে। মানুষ এখন কর দিতে চায়। কর প্রশাসনকে জনবান্ধব করা হয়েছে। এর ফল হিসেবে রাজস্ব আয় ও করদাতার সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে।

এনবিআর চেয়ারম্যানের মতে, সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি-সহায়তা ও অবকাঠামো উন্নতির ফলে বেসরকারি খাতে ব্যবসা-বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে। যার ফলে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও আমদানি-রফতানি শুল্ক থেকে আয় যথেষ্ট বেড়েছে।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে হয়রানি বন্ধ করা গেছে। পাশাপাশি তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘরে ঘরে করসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কর-সংশ্লিষ্ট আইনগুলো যথেষ্ট সহজ করা হয়েছে, যা রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ফল এনে দিয়েছে।

এনবিআরের তথ্য মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে সংগৃহীত ১ লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার রাজস্ব আয় ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ বছর প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে বড় সাফল্য আসে। রাজস্ব আয় হয় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি করেছে। এ সময়ে ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। আর মোট রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা।

বিগত ছয় বছরে আহূত রাজস্বের মধ্যে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে (শুল্ক খাত) অবদান ছিল ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে আসে ৩৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং আয়কর খাতের অবদান ৩৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে এনবিআরের নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। করদাতা ও দেশবাসীর সহায়তায় এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে বলে মোশাররফ হোসেন আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এনবিআরের তথ্য মতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ লাখ, সেটা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখের ওপরে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ এবং বেসরকারি খাতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করায় ই-টিআইনধারীর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। এতে করের আওতা সম্প্রসারিত হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশে ব্যবসাবাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করায় নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে করদাতার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি প্রমাণ করে, দেশের নাগরিকরা কর প্রদানে সচেতন হচ্ছেন। এনবিআরের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। হয়রানিমুক্ত পরিবেশে তারা স্বমপ্রণোদিত হয়ে ই-টিআইএন নিবন্ধন নিচ্ছেন।’

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান রাজস্ব আয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় অর্জন বলে মন্তব্য করেন। তবে জনবল ও কর প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়ানো গেলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছরে এনবিআরের নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। কর মেলা জনগণকে কর প্রদানে উৎসাহিত করছে। অনলাইনে ই-টিআইএন ও ভ্যাট নিবন্ধন কার্যক্রম চমকপ্রদ ধারণা। আবার এনবিআর বিভিন্ন ধরনের কর শিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এসব উদ্যোগ জনসচেতনতা তৈরির পাশাপাশি করদানে উদ্বুদ্ধ করছে।’

সিপিডির এই বিশেষ ফেলো বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব আয় এখনো অনেক কম। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য এটি বাড়াতেই হবে। তিনি মনে করেন, এটাকে অন্তত দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সমপর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। সেজন্য আয়কর আহরণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদানের পাশাপাশি কর ফাঁকি রোধ, জনবল বাড়ানো, অটোমেশন প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালীকরণ এবং এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads