• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাস্তবায়নে অবহেলা গুরুত্ব অনুমোদনে

অনুমোদনের জন্য আজ একনেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে আরও ২০ প্রকল্প।

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

আজ একনেকে উঠছে ২১ প্রকল্প

বাস্তবায়নে অবহেলা গুরুত্ব অনুমোদনে

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৩ অক্টোবর ২০১৮

জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৩ হাজার ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ের ১২৭ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বছরজুড়ে বাস্তবায়ন হবে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। চার মাসের কম সময়ে এডিপির সাড়ে ৬২ শতাংশ ব্যয়ের প্রকল্প নেওয়া হলেও তিন মাসে বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ। দুর্বল বাস্তবায়ন সক্ষমতার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক নতুন প্রকল্পের কারণে এডিপি বাস্তবায়ন ঝুঁকির মুখে পড়ছে। এ কারণে আগামীতে এডিপির অনেক প্রকল্প পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। এই কঠিন বাস্তবতার মধ্যেই আজ অনুষ্ঠিতব্য একনেক বৈঠকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে উপস্থাপন হচ্ছে আরো ২১ প্রকল্প।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পে প্রথম বছর নামেমাত্র অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়ে থাকে। এজন্য এডিপিতে ৯ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দও রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের চাহিদা মেটাতে এ তহবিল থেকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ক্রয় বাবদ ১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বাস্তবায়নের পর্যায়ে এলে এসব প্রকল্পে আগামী অর্থবছর থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে হবে। বাড়তি প্রকল্পের কারণে গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

কমিশন সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একের পর এক প্রকল্প প্রস্তাব পাঠাচ্ছে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা ভোটের আগে নিজেদের এলাকার উন্নয়নে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নিতে চাইছেন। রাস্তাঘাট ও হাট-বাজারের উন্নয়ন, মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ ও সংস্কার, বিদ্যুতায়ন, নদীভাঙন প্রতিরোধ, সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়নে তারা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠাচ্ছেন একের পর এক বেসরকারি চাহিদাপত্র (ডিও লেটার)। জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা বিবেচনায় ইতোমধ্যেই অনেক প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অপেক্ষায় আছে আরো বেশ কয়েকটি।

সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের অধিকাংশই ভৌত অবকাঠামো বিভাগ এবং কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের। আজ উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা ২১ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ভোটার আকর্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখেই এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের বছরে ব্যক্তি খাতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ পাওয়া যায় না। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা পূরণ করতে অনেক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। নির্বাচনের পর এসব প্রকল্পের গুরুত্ব অনেকটাই কমে আসে। ফলে বাস্তবায়নে আগ্রহও থাকে না সংশ্লিষ্টদের। এসব প্রকল্প এডিপিতে ঢুকে যাওয়ায় বাতিলও করা কঠিন হয়ে যায়। ফলে রাজনৈতিক গুরুত্বে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্প উন্নয়নের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।

বাস্তবায়নের পরিমাণ ও গুণগত মান না বাড়িয়ে প্রকল্পের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন। বাংলাদেশের খবরকে তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ, দক্ষ জনসম্পদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব আছে। এসব সমস্যার সমাধান না করে প্রকল্প নেওয়া হলে গুণগত বাস্তবায়ন হবে না। আর অবকাঠামো খাতে বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ না হলে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে না। শুধু নির্বাচন সামনে রেখে নেওয়া প্রকল্পের প্রকৃত সুফল জনগণ পাবে না বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত একনেকের ১০ বৈঠকে ১২৭ প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করা হবে ৭৭ হাজার ৮১৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো নিজেদের তহবিল থেকে ব্যয় করবে ১৫ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। আর বিদেশি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ১৯ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। আজকের বৈঠক শেষে চলতি অর্থবছরে অনুমোদন পাওয়া নতুন প্রকল্পের সংখ্যা ১৪৭-এ উন্নীত হবে। ব্যয় দাঁড়াবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকায়।

আজ একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা ৩৫ ড্রেজার ক্রয় প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬২৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ের দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্প, ৭৭৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পুনর্বাসনসহ নর্দমা ও ফুটপাথ উন্নয়ন প্রকল্প, ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ের বরিশাল শহরের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজিত নগর উন্নয়ন কর্মসূচি উঠছে একনেকে।

ভারতীয় সহায়তায় টেলিটক নেটওয়ার্ক উন্নয়নে আলোচিত প্রকল্পটি একনেকে উঠছে আজ। ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করতে ৩ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের ভূমি অধিগ্রহণ প্রকল্পও উপস্থাপন করা হবে বৈঠকে। কেরানীহাট থেকে বান্দরবান মহাসড়ক প্রশস্ত করতে ২৩৫ কোটি টাকা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয়ের ৭ আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠায় ১২৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ের পৃথক প্রকল্প উপস্থাপন করা হচ্ছে।

পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের পৃথক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। একই এলাকায় প্রক্রিয়াধীন ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৩ কিলোমিটারের বেশি সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ২৫০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এ দুটি প্রকল্পও উপস্থাপন হচ্ছে একনেক সভায়।

বিভিন্ন এলাকায় তিনটি হস্তচালিত তাঁত সেবা কেন্দ্র স্থাপনে ৮৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। নরসিংদীর বাংলাদেশ তাঁত শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট আধুনিকায়নে ৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিও একনেকে উপস্থাপন করা হবে। এ ছাড়া বৃহত্তর ময়মনসিংহ অবকাঠামো উন্নয়ন, গড়াই নদী ড্রেজিং ও তীর সংরক্ষণ, চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের চর-বাগাদী পাম্প হাউজ ও হাজিমারা রেগুলেটর পুনর্বাসন, রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন, মহিষ উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়), রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পানি ও বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ প্রকল্প উঠছে একনেক সভায়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads