• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বেশি সুদে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নেওয়া শুরু

বিশ্বব্যাংক

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

বেশি সুদে বিশ্বব্যাংকের ঋণ নেওয়া শুরু

তিন প্রকল্পে ৭ হাজার কোটি টাকার চুক্তি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৬ অক্টোবর ২০১৮

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। নগর স্বাস্থ্যসেবায় সংস্থাটি দেবে ১১ কোটি ডলার। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ টেকসই করতে অপর সংস্থা বিশ্বব্যাংক দেবে ২৪ কোটি ডলার। ৮৫ কোটি ডলার সহায়তার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুই সংস্থার সঙ্গে তিনটি ঋণচুক্তি হয়েছে। তিন প্রকল্পে বাংলাদেশি মুদ্রায় আসবে সাত হাজার কোটি টাকা।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষে অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ইআরডির সিনিয়র সচিব কাজী শফিকুল আযম চুক্তিপত্রে সই করেন। এডিবির পক্ষে সংস্থার কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. জাহিদ হোসেন চুক্তিতে সই করেন। এ সময় ইআরডির নতুন দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সচিব মনোওয়ার আহমেদ ও অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম ছাড়াও বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে এডিবির সঙ্গে ২০ লাখ ডলারের একটি অনুদান চুক্তিও সই হয়।

এডিবির সঙ্গে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির চতুর্থ পর্যায় (পিইডিপি-৪) বাস্তবায়নে সংস্থাটি থেকে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে। ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কর্মসূচির আওতায় এক লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ, এক লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, ৭১ হাজার ৮০৫টি ল্যাপটপ ক্রয়, ৪০ হাজার শ্রেণিকক্ষ, প্রধান শিক্ষকদের জন্য সাড়ে ১০ হাজার কক্ষ, ৭৮ হাজার ওয়াশ ব্লক, ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে দুর্যোগ মোকাবেলা সরঞ্জাম সরবরাহ ও বঞ্চিত ১০ লাখ শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা বিদেশি সহায়তা হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। এতে আট দাতা সংস্থা ও দেশ অর্থায়ন করবে। সবচেয়ে বড় দাতা সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৭০ কোটি ডলারের চুক্তির পর এবার এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়েছে।

পৃথক চুক্তির আওতায় নগর স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন প্রকল্পে এডিবি ঋণ দিচ্ছে ১১ কোটি ডলার। এতে ২০ লাখ ডলার অনুদানও দিচ্ছে এডিবি। প্রকল্পের আওতায় নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কাজ করা হবে। বিনা মূল্যে দরিদ্রদের দেওয়া হবে ৩০ ভাগ সেবা। ১১ সিটি করপোরেশন ও ১৪ পৌরসভা প্রকল্পটির আওতায় আসবে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অডিনারি ক্যাপিটাল রিসোর্স (ওসিআর) তহবিল থেকে দুই প্রকল্পে সহজ শর্তে এ ঋণ দিচ্ছে এডিবি। পাঁচ বছরের রেয়াত কালসহ ২৫ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। সুদের হার ধরা হয়েছে ২ শতাংশ।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ বলেন, চতুর্থ প্রথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা ও শিক্ষণ পদ্ধতি নিশ্চিত করতে চায় এডিবি। প্রাথমিক শিক্ষায় সর্বজনীন অভিগম্যতা বাড়ানোর মাধ্যমে বৈষম্য কমানো, প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ এবং প্রাথমিক শিক্ষাসংশ্লিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন করা হবে বলেও তিনি জানান।

এডিবির সঙ্গে চুক্তির পর একই মঞ্চে টেকসই উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য শীর্ষক প্রকল্পে ২৪ কোটি ডলার ঋণ দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পের আওতায় উপকূল ও সমুদ্রে মৎস্য জরিপ পরিচালনা করা হবে।

কঠিন হচ্ছে বিশ্বব্যাংকের ঋণ : স্বাধীনতার পর থেকে বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে বিনা সুদে ঋণ পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। রেয়াতকাল পরবর্তী শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে ঋণের সুবিধা আর দিচ্ছে না সংস্থাটি। উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ ধার্য করেছে বিশ্বব্যাংক। ছাড় না হওয়া অর্থের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ হারে ধরা হয়েছে কমিটমেন্ট ফি। ঋণে বছরপ্রতি আড়াই শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি পরিশোধ করতে হবে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন থেকে শুধু সুদের হারই যোগ করা হয়নি। পাশাপাশি কমে এসেছে রেয়াতকাল ও ঋণ পরিশোধের সময়ও। এত দিন ছয় বছর রেয়াত কালসহ ৩৮ বছরে ঋণ পরিশোধের নিয়ম ছিল। রেয়াত কাল পাঁচ বছরে ও ঋণ পরিশোধের সময় ৩০ বছরে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম বলেন, টানা তিন বছর এক হাজার ১৬৫ ডলারের বেশি মাথাপিছু জাতীয় আয় থাকলে বিশ্বব্যাংকের হিসেবে দেশটি নিম্ন-মধ্যম আয়ের। বাংলাদেশে টানা তিন বছর জাতীয় আয় এর বেশি। এর ফলে চলতি বছরের জুলাই থেকে বিনা সুদের ঋণ বন্ধ করেছে সংস্থাটি।

অনুষ্ঠানে কাজী শফিকুল আযম বলেন, এ প্রকল্পে একটুু বেশি সুদে ঋণ নেওয়া হচ্ছে। তবে যথাসময়ে এর কাজ শেষ হলে কোনো সমস্যা হবে না। প্রকল্পটি অর্থনীতিকে উন্নত করতে ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads