• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা সব খাতে বিস্তৃত করার তাগিদ

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা সব খাতে বিস্তৃত করার তাগিদ

বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা সব খাতে বিস্তৃত করার তাগিদ

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৮

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য রফতানি করে আয় হয় ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৫১ লাখ ডলার। এর মধ্যে আট খাতে আসে ৩ হাজার ২৯১ কোটি ৩৯ লাখ ডলার। রফতানি তালিকায় কয়েক হাজারের বেশি পণ্য থাকলেও আট খাতের অবদান মোট সাড়ে ৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট রফতানির প্রায় ৯৬ শতাংশ আসে আট খাত থেকে। শুধু তৈরি পোশাক থেকেই আসছে মোট রফতানির ৮২ শতাংশ। এ অবস্থায় সামষ্টিক অর্থনীতি বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়ার আগেই রফতানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনার তাগিদ দিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। আর রফতানিতে বৈচিত্র্য আনতে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়েছে বহুজাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক।

সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক পলিসি ব্রিফে বলা হয়েছে, বন্ডেড ওয়্যার হাউজের আওতায় রফতানির জন্য ব্যবহার্য উপকরণে বড় অঙ্কের শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা থাকলেও পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের বাইরে অন্য খাতে এ সুযোগ বিস্তৃত হচ্ছে না। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয়ের খাত চামড়া ও ফুটওয়্যারের উদ্যোক্তারা সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ১৯৬৯ সালের শুল্ক আইনে বন্ডেড ওয়্যার হাইজ চালু হলেও তা পরিচালনায় এ পর্যন্ত ৩২০টি এসআরও জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে সাময়িক প্রয়োজনে জারি করা ২৪৮ এসআরওর কোনো রেকর্ড নেই। সাময়িক এসব এসআরওর অধিকাংশই পোশাক উদ্যোক্তাদের সুবিধা বিবেচনায় জারি করা হয়েছে। ফলে বন্ডেড ওয়্যার হাউজের আওতায় শুল্ক ছাড়ের ৯০ শতাংশই যাচ্ছে পোশাক খাতে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, রফতানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার্য উপকরণ আমদানিতে উদ্যোক্তারা বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধার আওতায় বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার শুল্ক রেয়াত পাচ্ছেন। এ সুযোগের অপব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব পণ্য বাজারে বিক্রি করছেন। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারালেও দেশীয় শিল্প সম্মুখীন হচ্ছে অসম প্রতিযোগিতার। এ পরিস্থিতির অবসানে বন্ড ব্যবস্থায় আধুনিকায়নে নেওয়া হয়েছে ৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকার প্রকল্প। এর কাজ শেষ হলে বন্ড ব্যবস্থাপনা স্বয়ংক্রিয় হবে। শুল্ক ফাঁকি রোধের পাশাপাশি দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, রফতানি পণ্য উৎপাদনের উপকরণ আমদানিতে কোনো দেশেই শুল্ক ধার্য করা হয় না। তবে এ সুবিধার অপব্যবহার করে অনেকেই শুল্ক ফাঁকি দিচ্ছেন। এ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনার বিষয়ে অনেক দিন ধরেই সৎ ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়ে আসছেন।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মো. হাতেম বলেন, পোশাক শিল্পের বিকাশের শুরুর দিকে নিট কাপড়ের চাহিদার বড় অংশ ভারত এবং ওভেনের কাপড় চীন থেকে আনা হতো। এখন দেশেই এ খাতের হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনেক স্পিনিং মিল ও কম্পোজিট প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিল্প খাতের কাপড়, সুতার মোট চাহিদার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কাঁচামাল সরবরাহে সক্ষম। বন্ডেড ওয়্যার হাউজ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হলে আমদানিতে নির্ভরতা কমে আসবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বয়ংক্রিয় বন্ড ব্যবস্থাপনা একটি সম্পূর্ণ সমাধান। এটা এ খাতের স্বচ্ছতাকে অনেক এগিয়ে দেবে। এর মাধ্যমে নিবন্ধন থেকে অডিট পর্যন্ত সব কাজ সফটওয়্যারে করা যাবে। ব্যবসায়ীরা বন্ডেড ওয়্যার হাউজের লাইসেন্সসহ শুল্কায়নের আনুষঙ্গিক কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবেন। বর্তমানে একটি বন্ড লাইসেন্স ইস্যু করতে ন্যূনতম ২৫ জায়গায় নথি পাঠাতে হয়। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হলে মাত্র ছয়টি ধাপে এটি সম্পন্ন হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, দেশের শিল্পকে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা দিতে ২০০০ সালে এনবিআর একটি স্বতন্ত্র বন্ড কমিশনারেট স্থাপন করে। এর অধীনে রফতানিমুখী শিল্পকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়। এ সুবিধার কোনো ধরনের অপব্যবহার কিংবা ত্রুটির ফলে স্থানীয় শিল্প মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads