• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বর্জ্য থেকে জ্বালানি ও জৈবসার উৎপাদনের তাগিদ

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বিআইডিএসের গবেষণা

বর্জ্য থেকে জ্বালানি ও জৈবসার উৎপাদনের তাগিদ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ নভেম্বর ২০১৮

রাজধানী ঢাকার প্রতিজন মানুষ দৈনিক গড়ে ৫৬০ গ্রাম পচনশীল কঠিন বর্জ্য উৎপাদন করে। মহানগরটিতে লোকসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কঠিন বর্জ্যের কারণে জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। ঢাকার দুই সিটি এলাকায় প্রতিদিন ৩ হাজার ৮০০ টন বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ৭৮ শতাংশই পচনশীল। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব বর্জ্য পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে উৎপাদন হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সসাইডের চেয়েও ২১ গুণ বেশি বিপজ্জনক মিথেন গ্যাস। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটির আয়োজনে দুদিনের গবেষণা সম্মেলনের শেষ দিন সোমবার কঠিন জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও ঢাকায় নগর দারিদ্র্য শীর্ষক এ গবেষণাটি উপস্থাপন করা হয়।

মিতালী পারভিন এবং আনোয়ারা বেগমের গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, ঢাকার জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। ফলে পচনযোগ্য পণ্য থেকে বর্জ্য উৎপাদন হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এই ঝুঁকি বাড়ছে। ঢাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠী এর ক্ষতির শিকার হচ্ছে তুলনামূলক বেশি। ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় বর্জ্য থেকে জ্বালানি গ্যাস ও জৈবসার উৎপাদনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে গবেষণায়।

অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এটিএম নুরুল আলম বলেন, পচনশীল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আরো নজর দেওয়া দরকার। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এ খাতে এগিয়ে আসতে হবে।

গবেষণায় রাজধানীর বাইরে অন্যান্য শহরের বর্জ্য উৎপাদনের একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৯১ সালে দেশের শহরগুলোতে প্রতিদিন ৬ হাজার ৪৯৩ টন বর্জ্য উৎপাদন হতো। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৩০০ টনে। ২০২৫ সাল নাগাদ রাজধানীর বাইরের শহরগুলোয় পচনশীল বর্জ্যের পরিমাণ ৪৭ হাজার ৫৪ টনে উন্নীত হতে পারে বলেও ধারণা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়ামসহ কিছু পণ্য পুনরায় ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে পচনশীল বর্জ্যের বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। জনবলের অভাবে ঢাকা সিটি করপোরশেন বর্জ্য সংগ্রহ করে জমিতে ফেলছে। ফলে সেখানে বর্জ্য পচে মাটি এবং ভূ-অভ্যন্তরীণ পানির উৎস ও বাতাস দূষিত করছে।

ব্যক্তি উদ্যোগে বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ক্ষতিকর মিথেন গ্যাসের হাত থেকে নগরবাসী রক্ষা পেতে পারে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, বাড়ির ছাদে গাড়ির মাত্র দুটি টায়ার ব্যবহার করে বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যেতে পারে। এতে পরিবারের রান্নার জ্বালানি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি জৈব সারের জোগান নিশ্চিত করা যাবে। সরকারের পক্ষ থেকে বড় উদ্যোগ নেওয়া হলে মিথেন গ্যাসের উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হবে দাবি করা হয়েছে।

বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে উৎপাদিত বর্জ্য জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহারের পরামর্শ রয়েছে প্রতিবেদনটিতে। এতে বলা হয়েছে, জৈবসার ব্যবহার করা হলে জমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ কমে আসবে।  এর ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়বে ৩০ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ঢাকা শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব বাড়ছে। সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯৯১ সালে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ১৫ হাজার ৩৩৩ জনের বসবাস ছিল। ২০০৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৫ জনে। ২০১১ সালে জনসংখ্যার এই ঘনত্ব আরো বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২৯ জনে। ফলে বেকারত্ব, জ্বালানি ও বিদ্যুতের অভাব, পরিবেশ দূষণের মতো সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads