• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ছুটির দিনেও সরগরম

ছুটির দিনে গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে ছিল করদাতাদের উপচেপড়া ভিড়

ছবি : বাংলাদেশের খবর

অর্থ ও বাণিজ্য

ছুটির দিনেও সরগরম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ নভেম্বর ২০১৮

সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার প্রথম ছুটির দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। এদিন কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে বসা সবচেয়ে বড় আয়কর মেলায় করদাতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সকাল থেকেই লোকারণ্য ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।

আয়োজক প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, অন্যান্য দিনের থেকে শুক্রবার করদাতার সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। কর আদায়, রিটার্ন দাখিল ও সেবাগ্রহীতার সংখ্যাও নতুন মাত্রা ছুঁয়েছে। আয়কর মেলায় সকাল থেকেই ছিল উৎসবের আমেজ।

দেশের ৮টি বিভাগ, ৫৬টি জেলা এবং ৩টি উপজেলাসহ মোট ৬৭টি স্পটে গতকাল আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকার মতোই মেলার চতুর্থ দিন সারা দেশে করদাতারা ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কর প্রদান ও সেবা গ্রহণ করেছেন। এদিন সেবা নিয়েছেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ৪৬ জন। গত বছরের এই দিনের থেকে প্রায় ৯৩ হাজার বেশি।  শুক্রবার রিটার্ন দাখিল করেছে ৭৫ হাজার ৭৩৬ করদাতা। ২০১৭ সালে চতুর্থ দিনে যার পরিমাণ ছিল ৫৩ হাজার ৬২৫ জন।  আয়কর আদায় হয়েছে ২৫৩ কোটি টাকা। আর এ দিন নতুন ইটিআইন নিয়েছে ৩ হাজার ৬৫১ জন।

অন্যদিকে, গত চার দিনে মেলা থেকে সেবা নিয়েছেন ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৫ জন। যাদের থেকে কর আদায় হয়েছে ১ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। আর রিটার্ন দাখিল করেছেন ৬ লাখ ৬১ হাজার ২৩৪ করদাতা। একই সময়ে ১৯ হাজার ৪১৫ জন নতুন করদাতা ইটিআইন নিয়েছেন মেলাতে এসে।

উত্তরা থেকে আসা আয়েশা খানম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই তিনি মেলাতে এসে কর পরিশোধ করে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ছুটির দিন বেছে নিয়েছেন।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন জিয়াউল করিম। তিনি বলেন, আমাদের করের টাকা বেতন ভাতা পরিশোধ করার সময় প্রতি মাসে সমন্বয় করে রাখে ব্যাংক। তবে মেলাতে এসে আমি নিজেই রিটার্ন দাখিল করে থাকি। ভালো লাগে নিজে রিটার্ন দাখিল করতে।

আয়েশা ও জিয়াউল করিমের মতো চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অভিনেতা, অভিনেত্রী, বেসরকারি চাকরিজীবী অনেকের গন্তব্য ছিল আয়কর মেলা। তারা জায়গা সঙ্কুলান না হওয়াতে মেলার কার্পেটে বসে ফরম পূরণ করেছেন। তবে সব করদাতার প্রত্যাশা মেলার পরও যাতে এমন আন্তরিক সেবা অব্যাহত থাকে। এনবিআরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা করদাতাদের অহেতুক হয়রানি করে অভিযোগও করে তারা বলেন, হয়রানির বিষয়টি বন্ধ করা গেলে রাজস্ব আহরণ বাড়ানো যাবে। বাজেটের আকার প্রতিবছর বাড়ছে। বাজেটের সঙ্গে প্রতিবছর কর আহরণ ২৫-৩০ শতাংশ বাড়ানো যাবে যদি কর প্রদানের পরিবেশ উন্নত করা যায়।

এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের খরবকে বলেন, স্বাচ্ছন্দ্যে মানুষ কর দিতে মেলায় আসছে। আমাদের কর্মকর্তারাও আন্তরিকভাবে করদাতাদের সহায়তা করছেন। আশা করি, এবার রাজস্ব আহরণ দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে কর জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে নিয়ে যেতে চাই। তাই করদাতাদের আন্তরিকতা আমাদের জন্য জরুরি। কোনো করদাতা যাতে বিব্রত বা হয়রানি না হন আমি প্রধান নির্বাহী হিসেবে সেটি নিশ্চিত করতে কাজ করছি। আশা করি, মেলার পরও একইভাবে সেবা পাবেন মানুষ। অংশগ্রহণ বিবেচনায় নিয়ে আমরা আগামী বছর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার আয়োজন করতে চিন্তা করছি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, আমরা করদাতাদের খুঁজে বের করে আনতে চাই না। সাধারণ মানুষ তাদের নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে কর পরিশোধ করবেন এটাই প্রত্যাশা। এজন্য উপজেলা পর্যায়ে কর অফিস বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এনবিআরের জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকালে ৯টার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করদাতারা আসতে থাকেন।

‘অনিয়ম-হয়রানির’ অভিযোগ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান বলছেন, আগের চেয়ারম্যানরা কি করেছেন সেটি বলতে পারব না। আমি ব্যক্তিগতভাবে সহকর্মীদের সুযোগ-সুবিধার পক্ষে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে কর্মীদের। তবে বিপরীতে আবার আমি অনেক কঠোর। করদাতাদের হয়রানি করলে ছাড় দেওয়া হবে না।    

আয়কর মেলার পরিধি গত বছরের মেলার চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে এবার। প্রতিদিন মেলা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলছে। মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল, ই-টিআইন গ্রহণ (নতুন ও পুরনো), ই-পেমেন্ট, ই-ফাইলিং, ই-পেমেন্টের ব্যবস্থা রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা, নারী, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণ করদাতাদের জন্য রয়েছে আলাদা বুথ। মেলায় করদাতাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য রাজধানীর টিএসসি, রামপুরা, বেইলি রোড, মতিঝিল, মিরপুর ও উত্তরা থেকে ১৫টি শাটল বাস নিয়োজিত রয়েছে।

২০১০ সাল থেকে শুরু হওয়া আয়কর মেলার এবার নবম আয়োজন। দেশব্যাপী সর্বাধিক সংখ্যক ভেন্যুতে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কর আহরণের পাশাপাশি সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতা নিশ্চত করাই কর বিভাগের প্রধান কাজ। এ ধারাবাহিকতায় ‘উন্নয়ন ও উত্তরণ, আয়করের অর্জন’- স্লোগানকে সামনে রেখে এ বছর আয়কর মেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আয়কর প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধারাবাহিক উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads