• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
বড় ঝুঁকিতে আর্থিক খাত

প্রতীকী ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

বড় ঝুঁকিতে আর্থিক খাত

স্বল্প মেয়াদের আমানত দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ সঙ্কট বাড়াচ্ছে

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

দেশের আর্থিক খাতে তিনটি বড় ঝুঁকি দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বিনিয়োগ চাঙ্গা করা, বিকল্প অর্থায়ন জোরদার ও অর্থবাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করাই সরকারের সামনে আর্থিক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবেলা করতে না পারলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে আগামী দিনের অর্থনীতি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ঝুঁকির কথা জানিয়ে সরকারের পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি ঝুঁকিগুলো মোকাবেলায় সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা।

গত ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছে, ভিশন ২০২১-২০৪১ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। নতুন সরকারের শেষ মেয়াদে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ শতাংশ। মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। বাজেটের আকার দাঁড়াবে ১০ লাখ কোটি টাকা, যা সর্বশেষ বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার করবে এই সরকার। আর জিডিপির ৩৭ শতাংশ হবে বিনিয়োগ হার। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিনিয়োগ তথা অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করতে হবে। বেসরকারি খাতকে অর্থনীতির চালকের আসনে বসাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। তবে সেটি করতে হবে পরিবেশবান্ধবভাবে। মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি জোরদার করে অচিরে মধ্যম আয়ের অর্থনীতিতে উন্নীত করতে চলমান সম্ভাবনাগুলোর ব্যবহার করতে হবে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় উদ্ভব হওয়া সম্ভাবনাগুলো ব্যবহারে আমাদের আর্থিক খাতের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, স্বল্প মেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের কারণে আজ অনেক সমস্যা। এর বাইরে আরো কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমার আলাপ চলছে। শিগগিরই অগ্রগতি দেখা যাবে।

গত বছরের মাঝামাঝিতে ব্যাংকঋণের সুদহারে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু নীতি সহায়তা ঘোষণা করে। বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও নতুন বছরের শুরুতে আবার সুদহার বাড়ছে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোতে আবারো নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়েছে। কার্যত স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক খাতের সঙ্কট থাকছে না। করপোরেট খাতের অত্যধিক ব্যাংকনির্ভর। কিন্তু মেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড ইস্যু করা জরুরি। অর্থায়নের এই মোড় ঘোরাবার চেষ্টা আরো জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মেয়াদি অর্থায়ন আহরণের সরলতর বিকল্প তৈরি করতে হবে। এ-সংক্রান্ত বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন ও প্রবর্তন এখন জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক ব্যবস্থায় মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমান বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ। ব্যাংকগুলো মূলত তিন শ্রেণির আমানত কাঠামো থেকে গ্রাহকের আমানত সংগ্রহ করে। সেগুলো হলো, চলতি আমানত, সঞ্চয়ী আমানত ও মেয়াদি আমানত। এর বাইরে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কিছু উদ্ভাবনী আমানত সংগ্রহ ব্যবস্থা থাকে। বর্তমানে মোট আমানতের অর্ধেকই আসে মেয়াদি আমানতের মাধ্যমে।

ব্যাংকগুলো বিভিন্ন মেয়াদ ঠিক করে গ্রাহকের আমানত নিয়ে বিনিয়োগ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, বর্তমানে ৫ লাখ ১৭ হাজার কোাটি টাকা হচ্ছে মেয়াদি আমানত। এসব মেয়াদি আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন গ্রাহকের প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে থাকে, যা ফেরত আসতে সময় লাগে। ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানিতে পড়তে হয়। চলতি হিসাব থেকে ব্যাংকগুলোর আমানত মাত্র ২০ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ মোট আমানতের ২ লাখ কোটি টাকার জোগান আসে এখান থেকে। সঞ্চয়ী আমানতও দুই লাখ কোটি টাকা। দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ হলো বিভিন্ন ধরনের স্থায়ী আমানত। কিন্তু এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর আমানত মাত্র ৮৮ হাজার কোটি টাকা, যা মোট আমানতের ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের মূলধন বাজারের সূচকের গতিধারা এখন আন্তর্জাতিক বাজারের সূচকের গতিধারার সঙ্গে বহুলাংশে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা মূলধন বাজারে বৈদেশিক পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্তঃপ্রবাহ বাড়াবে। আমাদের মূলধন বাজারের গতিশীলতা বাড়াবে। নতুন বহুজাতিক অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক, সচ্ছল দেশগুলোর সভরেন ওয়েলথ ফান্ড, এবং খ্যাতনামা বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আমাদের আর্থিক খাত প্রতিষ্ঠানগুলোর যোগাযোগ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াবে। এই লক্ষ্যে দেশের আর্থিক খাত প্রতিষ্ঠানগুলোর এবং প্রকৃত খাতের শীর্ষস্থানীয় করপোরেটগুলোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ক্রেডিট রেটিংয়ের ভালো মান অর্জন ও বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো বলছে, অচিরে মধ্যম আয়ের অর্থনীতি পর্যায়ে দেশের কাঙ্ক্ষিত উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় বর্ধিত বিনিয়োগ বহুলাংশে বৈদেশিক সূত্র থেকে আকর্ষণ করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে আমাদের আর্থিক খাতের সামর্থ্যের দ্রুত বিকাশের জন্য ব্যবস্থাপনা দক্ষতায় উৎকর্ষ আনার পাশাপাশি টাকার বাজার সুদহার ও বিনিময় হারে চাহিদা ও জোগানভিত্তিক পরিবর্তনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিবর্তনশীলতার ব্যত্যয় বাজারব্যবস্থার বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের দ্বিধাগ্রস্ত করার ঝুঁকি বাড়াবে। দেশের অভীষ্ট দ্রুত উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনের স্বার্থেই যা এড়ানো বাঞ্ছনীয়। অর্থনীতির সার্বিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি নিম্নগামী মূল্যস্ফীতিকে আরো কিছুটা নিম্নতর মাত্রায় স্থিতিশীল করতে হবে, যা এক অঙ্কের বাজার সুদহার স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার স্বীকৃত পথ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads