• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ন্যায্যমূল্য নেই, হতাশ কৃষক

ফাইল ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

ন্যায্যমূল্য নেই, হতাশ কৃষক

  • মাগুরা প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২২ মে ২০১৯

প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাগুরার শালিখায় ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রভাব পড়েনি। তবে এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হলেও বাজারে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।

সরকার চাল ও ধান সংগ্রহ শুরু করলেও ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে কৃষকদের সস্তায় ধান বেচতে বাধ্য করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানিয়েছেন।

বোরো ধান ক্ষেত থেকে ওঠার পরপর সরকার ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু না করায় ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে ঠকছেন এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকরা।

চলতি বছরের ২ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সব জেলা উপজেলায় ধান ও চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু শালিখা উপজেলাতে ধান ও চাল সংগ্রহের উদ্বোধন না হওয়ায় এখন পর্যন্ত সংগ্রহ অভিযান থেমে রয়েছে বলে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে জানা যায়। কৃষি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, এ বছর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫৩ হাজার ৮৭ টন ও ধান ৮০ হাজার ৪৩৫ টন। এর মধ্যে মোট আবাদী জমি রয়েছে ১৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন শতভাগ পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আলমগীর হোসেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে জানা যায়, সরকার ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল এবং ২৬ টাকা কেজি দরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা প্রতি মণ ধানের দাম হয় ১ হাজার ৪০ টাকা, চালের দাম ১ হাজার ৪৪০ টাকা। চলতি বছরের ২ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান চলবে। ধান ক্রয়ের সরকারি নির্দেশ পাওয়ায় এ উপজেলায় ১ হাজার ৫৭৬ টন চাল ও ৪২২ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আড়পাড়া গ্রামের কৃষক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এক মন ধান উৎপাদনে খরচ হয় ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। বর্তমান বাজারে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হলে প্রতি মণে ১ হাজার ৪০ টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে তিনি ধান বিক্রি করেছেন। প্রতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের তালিকা সংগ্রহ করে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু চলতি বছর ধান সংগ্রহের নির্দেশনা থাকলেও সংগ্রহ অভিযান চালাতে বিলম্ব হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এই সিন্ডিকেট কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

এ ব্যাপারে ধান ব্যাবসায়ী মো. আলম মুন্সী, ইকবাল হোসেন ও রিপন বিশ্বাস বলেন, গত হাটেও ধানের দাম খুবই কম ছিল। এই হাটে ধানের দাম ১০০ থেকে ১৫০ টাকা প্রতি মণে বেড়েছে। সরকার ধান সংগ্রহ শুরু করলে আশা করি আরো বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন মিল মালিক বলেন, আমরা মিল মালিক, আমাদের কোনো সিন্ডিকেট ব্যবসা নেই। বাইরে থেকে এলাকায় ধান ঢুকছে। তাই ধানের দাম কম।

শালিখা উপজেলা সদর আড়পাড়া খাদ্যগুদামের ওসি এলএসডি মো. কামরুল ইসলাম বলেন, কৃষকরা যে ধানের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত এটা ঠিক নয়। কারণ বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব এবং সরকার কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জন্যই গুদামে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছেন এবং চাল সংগ্রহ করছেন। ধানের দাম প্রতি কেজি ২৬ টাকা ও চাল ৩৬ টাকা করে দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে মৌসুম শুরু হওয়ার কারণে এখনো সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে পারিনি। তাছাড়া আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমী মজুমদারের নির্দেশে নিয়মিত বাজার মনিটারিং করছি। আমি গত সপ্তাহ বাজার মনিটারিং করে দেখি ধানের বাজার একটু কম ছিল যেহেতু মৌসুমের প্রথম। যেখানে মিনিকেট ৭৫০ টাকা, জিরা মিনিকেট ৭৪০ টাকা, সুবললতা ছিল ৬৫০ টাকা। সেখানে মনিটারিং করে দেখি ধানের বাজার ঊর্ধ্বগতি এবং মিনিকেট ৮৫০ টাকা, জিরা মিনিকেট ৮৪০ টাকা, সুবললতা ৭৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সুতরাং ধানের মূল্য আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। আমি আশা করি, অচিরেই ধানের দাম আরো বাড়বে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads