• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
চীনা ঋণে আরো ৩৪ প্রকল্প

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

চীনা ঋণে আরো ৩৪ প্রকল্প

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০১৯

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথমবারের মতো সুরঙ্গপথ নির্মাণের এ অঙ্গীকার শুধু নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে ধারণা ছিল অনেকের। চীনের আর্থিক অনিশ্চয়তা কাটিয়ে দ্রুতই এগিয়ে চলছে টানেলটি নির্মাণের কাজ।

৯ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। প্রথম টানেলের এক-চতুর্থাংশ কাজ শেষে এবার যমুনার তলদেশে টানেল নির্মাণ করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে ১২৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরে বাস্তবায়ন করা হবে সমীক্ষা প্রকল্প। সমীক্ষা পরিচালনা করতে চীন সরকারের কাছে ৬৪ কোটি টাকা ঋণ চাইছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সমীক্ষা শেষে যমুনা টানেল নির্মাণের মূল প্রকল্পটিও বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার পাবে চীনের বিনিয়োগ।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আগামীতে সড়ক, সেতু, রেল, বন্দর ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্প নিতে চায় সরকার। প্রত্যাশিত হারে নমনীয় বিনিয়োগ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় তুলনামূলক কঠিন শর্তের চড়া সুদে এসব প্রকল্পের বিনিয়োগ অনুসন্ধান চলছে। চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তা অনুসন্ধানের সুবিধার্থে জুড়ে দেওয়া হয়েছে এমন ২৬২ প্রকল্প। বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেলে এসব প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদনের জন্য প্রক্রিয়াধীন এমন ৩৪ প্রকল্পে চীনের ঋণ প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। চীন থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চীনের সহায়তা বিপুল হারে বেড়েছে। সিলেটে শাহজালার সার কারখানা, বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বড় বিনিয়োগ রয়েছে চীনের। স্বাধীনতার পর থেকে ২০১০-১১ অর্থবছর পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬৫ কোটি ২৮ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহায়তা হিসেবে ছাড় করে ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। পরবর্তী কয়েক বছরে ২১০ কোটি ৮৪ লাখ ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছাড় করে ৯৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

এদিকে বিপুল পরিমাণে চীনের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় আগামীতে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে চাপ বাড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

সূত্র জানায়, চটগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত পৃথক একটি মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ করতে চায় সরকার। চার লেনের এ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নেও চীনের আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

ইআরডি সূত্র জানায়, সড়ক ও বিদ্যুতের প্রক্রিয়াধীন ছয় মেগা প্রকল্পে অর্থায়নের প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে চীন সরকার। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে চীন থেকে এসব প্রকল্পে আসবে ৯৪ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ।

ইআরডির কর্মকর্তারা এ বিষয়ে জানান, প্রতিবছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তা অনুসন্ধানের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প জুড়ে দেওয়া হয়ে থাকে। এসব প্রকল্প সরকারের উন্নয়ন অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোর বিষয়ে এ তালিকা সহায়ক হিসেবে কাজ করে। তবে এ তালিকার অনেক প্রকল্প বিদেশি সহায়তা না পাওয়ায় অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে এডিপিতে যুক্ত থাকে। অনেক সময় নিজস্ব অর্থায়নেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

অবশ্য বিদেশি সহায়তা নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একের পর এক বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়নে। সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় উৎস থেকে ঋণ আসছে বেশি। এসব ঋণে বাড়তি সুদের পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ত দেওয়া থাকে। এ অবস্থায় চীনের ঋণের বিকল্প অনুসন্ধানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে বিদেশি সহায়তা পেতে পারে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পরিবহনের মতো অবকাঠামো খাতে এখানে চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। নমনীয় শর্তে বিদেশি সহায়তায় প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। তবে কঠিন শর্তে দ্বিপক্ষীয় উৎসের ঋণ পরিহার করে সহজ শর্তের ঋণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বিদেশি সহায়তায় পাঁচটি বড় প্রকল্প নিতে চায় সরকার। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার প্রকল্পে চীন সরকারের ৪৯ হাজার ২২৩ কোটি টাকা সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এক প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। দুই উৎস থেকে পাঁচটি প্রকল্পে ৬৯ হাজার ২২৩ কোটি টাকার সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।

চীনের সহায়তায় মহেশখালী পাওয়ার হাবের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ড্রেজিং ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা। মহেশখালী ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ২৭ হাজার ১১ কোটি টাকার মধ্যে চীন থেকে চাওয়া হয়েছে ১৫ হাজার ২০২ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল স্থাপন প্রকল্পে ব্যয়ের ১৫ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার পুরোটাই চাওয়া হয়েছে চীন সরকারের কাছে। ডিপিডিসি এলাকায় বিদু্যুৎ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও সম্প্রসারণে ১১ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার মধ্যে ৭ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে চীনের কাছে।

জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ হয়ে জামালপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের পাশে পৃথক ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করতে চায় সরকার। ২ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটিতে চীন থেকে চাওয়া হয়েছে ২ হাজার ৬৭ কোটি টাকা। মিটারগেজ লাইনে ডেম্যু ট্রেনে সফলতা না আসলেও ব্রডগেজ লাইনে কমিউটার ট্রেন চালু করতে কেনা হবে ২০ সেট ডেম্যু। এতে চীনের কাছে চাওয়া হচ্ছে ৬৫৪ কোটি টাকা। ঢাকা চট্টগ্রাম পর্যন্ত ইলেকট্রিক রেলব্যবস্থা চালু করতে চীনের কাছে চাওয়া হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা। চীন থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেনা হবে রেলের মিটারগেজের ৮০০ কোচ।

পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের উন্নয়নে পৃথক চারটি প্রকল্পে চীনের কাছে ১৮ হাজার ১০০ কোটি টাকা চাওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে পায়রাবন্দরের মূল অবকাঠামো উন্নয়নে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ট্রান্সশিপমেন্ট টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ডিপ ওয়াটার টার্মিনাল নির্মাণে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও অবশোর টার্মিনাল নির্মাণে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads