• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
নানা চ্যালেঞ্জে অর্থনীতি

ছবি : সংগৃহীত

অর্থ ও বাণিজ্য

আজ শুরু অর্থবছর ২০১৯-২০

নানা চ্যালেঞ্জে অর্থনীতি

  • জাহিদুল ইসলাম
  • প্রকাশিত ০১ জুলাই ২০১৯

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৮-১৯ অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জন ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে দাবি সরকারের। আগের কোনো পরিকল্পনায় অর্জন লক্ষ্যের ধারেকাছে না গেলেও সপ্তম পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরু থেকেই ধারণার বেশি প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। পাঁচ বছরে গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছাড়িয়েছে। ২০২০ সালে আট শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও ছাড়িয়ে যাবে। প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, দারিদ্যের হার কমানো, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয়, খাদ্য উৎপাদনসহ বেশ কিছু সূচকে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়েছে কয়েক বছর ধরে। কিছু সূচকে অগ্রগতি হয়েছে লক্ষ্যের চাইতে বেশি। অনেক সূচকে এগিয়ে থেকেই আজ ১ জুলাই শুরু হচ্ছে নতুন অর্থবছর ২০১৯-২০। এগিয়ে থেকে যাত্রা শুরু করার বছরেও অর্থনীতির আকাশে বিরাজ করছে নানামুখী চ্যালেঞ্জ।

গত অর্থবছরের শেষ দিন গত রোববার জাতীয় সংসদে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পাসের মাধ্যমে নতুন অর্থবছরের যাত্রা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে শতভাগ বাজেট বাস্তবায়নের নজির নেই বললেই চলে। গত সাত বছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার ৭৯ থেকে ৯০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। অনুমোদন পাওয়া বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নে নতুন কোনো উদ্যোগ নেই। বাজেট বাস্তবায়নে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা আয় করাও কঠিন হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। ২০২০ সালের মধ্যে রাজস্ব আহরণ জিডিপির ১৬ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য থাকলেও অর্জন এখনো ১০ শতাংশের নিচে। প্রত্যাশিত বরাদ্দ না থাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু খাতেও অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। খাদ্যপণ্যের প্রত্যাশিত দাম না থাকায় মূল্যস্ফীতি সীমাবদ্ধ থাকলেও গ্যাসের দাম বৃদ্ধি আরেক দফায় বাড়িয়ে দিতে পারে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার।

সরকারের মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০২০ সালের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৯ ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ছিল। ইতোমধ্যে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ ডলারে উন্নীত হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে সন্তোষ বিরাজ করছে। তবে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা উদ্বেগে সরকার।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে অর্জন লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে। তবে এর সঙ্গে সংগতি রেখে বৈষম্য সেভাবে কমেনি। এ অবস্থায় প্রক্রিয়াধীন অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বৈষম্য কমানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

ড. শামসুল আলম আরো বলেন, আট শতাংশে প্রবৃদ্ধি সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না। মধ্যম আয়ে নিয়ে যেতে হলে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এ পথে সবচেয়ে বড় বাধা সম্পদের সীমাবদ্ধতা। দেশীয় অর্থের জোগান বাড়াতে না পরলে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে না। জিডিপির হিসাবে রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য আগামী বাজেটে বেশ কিছু সংস্কারের উদ্যোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. শামসুল আলম। এসব সংস্কার কার্যকর হলে রাজস্ব আহরণ বাড়বে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, নতুন অর্থবছরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন। গত কয়েক বছর ধরেই বাজেট বাস্তবায়নের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। বিশাল ব্যয় মেটাতে প্রত্যাশিত রাজস্ব আহরণ এবারো সম্ভব হবে না। রাজস্বের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে গত অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যের চেয়ে আদায় বাড়াতে হবে ৩৭ শতাংশ। আর অবকাঠামো খাতে উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন বাড়াতে হবে গত অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির (আরএডিপি) বরাদ্দের চাইতে প্রায় ৪৫ শতাংশ। বছর শেষে বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে বলেও তিনি মনে করেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে তা ১ লাখ ৮৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা কাটছাঁটের পর বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নে ব্যয় হয় ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে ওই বছর ফেরত যায় বাজেটের ১৭ হাজার ৭২৫ কোটি টাকা। বছর শেষে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৯০ দশমিক ৭৫ শতাংশে।

এরপর ২০১৩-১৪ অর্থবছর মূল বাজেটের ৮৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছর বাস্তবায়িত হয় বাজেটের ৮১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। পরের বছর ৮০ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ২০১৬-১৭ অর্থবছর বরাদ্দের ৮০ দশমিক ১২ শতাংশ ও ২০১৮-১৮ অর্থবছরে বরাদ্দের ৭৯ দশমিক ১২ শতাংশে নেমে আসে বাজেট বাস্তবায়ন। ২০১৬-১৭ অর্থবছর বাজেটের ৭১ হাজার ১০৬ কোটি টাকা ও পরের বছর ৭৮ হাজার ৪০৪ হাজার কোটি টাকা কম ব্যয় হয়।

সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হলেও তা ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। বাজেট থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ২২ হাজার ৩২ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৩০৪ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছর রাজস্বের লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তাওফিকুল ইসলাম খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আগামী অর্থবছরে আয় ও ব্যয়ের লক্ষ্য পূরণ করাই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২০ সালের মধ্যে রাজস্ব আহরণ জিডিপির ১৬ শতাংশ ছাড়ানোর লক্ষ্য থাকলেও অর্জন অনেক কম। তবে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ও তারল্য সংকট গোটা অর্থনীতির গতি টেনে ধরতে পারে বলে মনে করেন এ গবেষক। তিনি বলেন, তারল্য সংকটের কারণে ব্যক্তিখাতে ঋণ বাধাগ্রস্ত হবে। এর ধারাবাহিকতায় কমতে পারে বিনিয়োগ, উৎপাদন ও কর্মসংস্থান। বিষয়টি মূল্যস্ফীতি উসকে দিতে পারে। এছাড়া গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে গ্রাহকদের ব্যয় বাড়বে। বাড়বে বিদ্যুতের দাম। ফলে পণ্যের দাম আরেক দফায় বাড়তে পারেও বলে মনে করেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads