• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ আগস্ট ২০১৯

নতুন অর্থবছরের শুরুতে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্সের এই অঙ্ক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। আর গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২১ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে বেশি অর্থ দেশে পাঠানোয় অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক বেড়েছে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা।

এছাড়া বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার খবরে রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জানিয়েছেন তারা।

রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠানোয় মে মাসে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্সে আসে; যা ছিল মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

তার আগে এক মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে, ১৫৯ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

২০১৭-১৮ অর্থবছরের  চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৯ শতাংশ রেমিট্যান্স বেশি পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরেও ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে শুরু হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে পরিবার-পরিজানের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা।

এছাড়া প্রণোদনা দেওয়ার কারণেও রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম।

গত বছরের জুলাই মাসে ১৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, রেমিট্যান্সে প্রণোদনা দিয়ে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে প্রবাসীরা দেশে বেশি অর্থ পাঠাবেন। অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখবেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, প্রস্তুতির অভাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের ওপর ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া এখনো শুরু করা যায়নি। যখনই শুরু করা হোক না কেনো ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দিন অর্থাৎ ১ জুলাই থেকেই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাবেন প্রবাসীরা।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি  বলেন, এটা আমরা বাজেটে পাস করেছি। কিন্তু সিস্টেম এখনো ডেভেলপ করতে পারিনি। প্রণোদনা দেওয়ার জন্য সিস্টেম আপডেট করতে আরো দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে। সামনে ঈদ, অনেকেই ধারণা করছেন, এখন দেশে কেউ রেমিট্যান্স পাঠালে তারা প্রণোদনা পাবে না। এটা কিন্তু ঠিক না। যেহেতু বাজেটে পাস হয়েছে সেহেতু এখন রেমিট্যান্স পাঠালেও দুই শতাংশ প্রণোদনা, ছয় মাস পরে হলেও পাবে। এখন পাঠালেও পাবে, পরে পাঠালেও পাবে। সিস্টেম ডেভেলপ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত কাজ করছে বলে জানান মুস্তফা কামাল। গত বছরের জুলাই মাসে ১৩১ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত সোমবার রেমিট্যান্সের যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম জুলাইয়ে ১৫৯ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার।

৪০ বেসরকারি ব্যাংক এনেছে ১১৮ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর নয়টি বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

নতুন বাজেটে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ঘোষণা অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা ১০০ টাকা দেশে পাঠালে ২ টাকা প্রণাদনা পাবেন।

বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সে এ ধরনের প্রণাদনা দেওয়া হচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ (১৬.৪২ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের বছরের (২০১৭-১৮)  চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ এবং অতীতের যে কোনো বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক বছরে এই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি।

২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ১৭ লাখ (১৪.৯৮ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ২০১৬-১৭ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি ছিল।

বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হলো বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স। বর্তমানে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। জিডিপিতে তাদের পাঠানো অর্থের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

স্থানীয় বাজারে ডলারের তেজিভাব এবং হুন্ডি ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই রেমিট্যান্স বাড়ছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে সোমবার প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে ৩০ জুন ডলার-টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৩ টাকা ৭৭ পয়সা।

রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নও (রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। গত সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন  মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে।

রেমিট্যান্স বাড়ায় তা ফের ৩২ বিলিয়ন ডলারের ওপরে অবস্থান করেছে।

বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads