• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
মাছ চাষে বদলে গেছে ভাগ্যের চাকা

সংগৃহীত ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

মাছ চাষে বদলে গেছে ভাগ্যের চাকা

  • কাজী মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
  • প্রকাশিত ২২ আগস্ট ২০১৯

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বাণিজ্যিকভাবে মৎস্য চাষ শুরু হয়েছে। মাছ চাষে এলাকায় এক নবদিগন্তের সূচনা হয়েছে। স্থানীয়রা মৎস্য চাষে এক সমৃদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মাছ চাষ বদলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা। পাল্টে দিয়েছে পৌর শহরসহ উপজেলার শত শত মৎস্যচাষির জীবনযাত্রা। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় লোকজন এ চাষের দিকে ঝুঁকছেন বেশি। খাল, বিল, পুকুর, জলাশয় ও ফসলি জমিতে বাঁধ দিয়ে তারা মৎস্য চাষের এক নীরব বিল্পব ঘটিয়েছেন।  

উপজেলা মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০২.১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে  ছোটবড় পুকুরসহ প্রজেক্ট রয়েছে ২ হাজার ৭৫টি, বিল ১৩টি, নদী ৩টি, খাল ৩টি ও প্লাবণভূমি রয়েছে ৮টি। মাছের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৪৯৮ টন। আর উৎপাদিত হচ্ছে ৪ হাজার ৫২১.২০ টন মাছ। উদ্বৃত্ত থাকছে ১ হাজার ২৩.২০ টন। দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাছ চাষের পরিধি। প্রতি বছর স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, শান্তিনগর, খরমপুর দুর্গাপুর; উপজেলার ধাতুর পহেলা, তুলাবাড়ি, কুসুমবাড়ি, টানুয়াপাড়া, হীরাপুর, বাউতলা, উমেদপুর, আজমপুর, মোগড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, স্থানীয় চাষিরা মাছ চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাছ ধরছেন, কেউ খাবার দিচ্ছেন।

এলাকার খাল, বিল, পুকুর, জলাশয়কে ঘিরেই  রয়েছে স্বপ্ন  এবং তাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শতশত চাষিরা মাছ চাষে এক অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করে। তবে এদের কেউ করছেন নিজস্ব পুকুরে, কেউ করছেন বার্ষিক ইজারা নিয়ে এ চাষ।

তাছাড়া আবার অনেকেই এ চাষকে ঘিরে মৎস্য প্রকল্পের নামে সমিতিও গঠন করে চাষ করছেন। ওই সমিতির আওতায় রয়েছে অনেক পুকুরও। কম পরিশ্রমে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এ চাষে মানুষ ঝুঁকছেন। ফলে মৎস্য চাষই বদলে দিয়েছে এলাকার শত শত মানুষের ভাগ্যের চাকা। তবে দেশীয় পদ্ধতিতে মাছ চাষে উৎপাদন বাড়তে বেশিরভাগ লোকজনই রয়েছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

স্থানীয় মৎস্যচাষিরা জানান, মৎস্য চাষে এলাকায় যুবকদের যেমন বেকরত্ব ঘুচিয়েছেন, পাশাপাশি পুকুর, প্রজেক্ট, জলাশয়ে শতশত লোকেরও কর্ম সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার বেশিরভাগ লোকের আয় মাছ চাষ থেকেই হচ্ছে। মাছ চাষেই আর্থিক সচ্ছলতা আসায় তাদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।  

মাছের মধ্যে রয়েছে- রুই, কাতল, পাঙাশ, মৃগেল, পুঁটি, সরপুঁটি, কার্প, তেলাপিয়া, বোয়াল, গ্রাসকাপ, নাইলোটিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

মৎস্যচাষি মো. আশরাফ হুমায়ুন মিয়া  জানান, প্রায় ৭ বছর ধরে মাছ চাষ করে আসছেন।  এ বছর ৩টি পুকুর ১২ লাখ টাকা দিয়ে বার্ষিক ইজারা নিয়ে দেশীয় পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করছেন। ইতোমধ্যে মাছ বিক্রি শুরু হয়েছে। আশা করছি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে খরচ বাদে ১০-১২ লাখ টাকা আয় হবে।

সিরাজ মিয়া বলেন, ৭ বছর আগে ২০ হাজার টাকায় ১ বছরের জন্য একটি পুকুর ইজারা নেন। ওই বছর ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়। এখন ছোটবড় ৫টি পুকুর রয়েছে। এ পুকুরে ৫ জন লোকও কাজ করছেন। বছরে আয় হচ্ছে ২ লাখ টাকার ওপরে।

মো. নাসির মিয়া বলেন, ৬০ শতকের ওপর নিচু জমিতে ধান চাষ করে ৬-৭ হাজার টাকার ধান পাওয়া যেত। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত কয়েক বছর ধরে ধানের পরিবর্তে মাছ চাষ শুরু করেন। মাছ ক্রয়, খাবার, ওষুধ, দেখাশোনার জন্য লোকবলের খরচসহ অন্যান্য খরচ বাদে এখান থেকে লাখ টাকার ওপর আয় হয় বলে জানান তিনি।

উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে এক নীরব বিল্পব ঘটেছে। মাছ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সবসময় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিন দিন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, এ উপজেলায় অনেক জমি পরিত্যক্ত  অবস্থায় বছরের পর বছর পড়ে আছে। এগুলো মাছ চাষের আওতায় আনা গেলে এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads