• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

অর্থ ও বাণিজ্য

বৈধ উৎসহীন টাকা দশ হাজার কোটি

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৩ নভেম্বর ২০১৯

চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ৪০০ ব্যাংক হিসাব খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এসব ব্যাংক হিসাব নিয়ে মাঠে নেমেছে। এর মধ্যে শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।  নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, নজরদারির আওতায় আসা ব্যাংক হিসাবগুলোতে অবৈধভাবে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, যেসব অর্থের বৈধ উৎস এখন পাওয়া যাচ্ছে না। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। তবে নজরদারির আওতায় আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রকৃত সম্পদ ও টাকার পরিমাণ আরো বেশি হবে। বিশেষ করে তারা অনেকেই ব্যাংকিং হিসাবের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন, যা হিসাবের আওতায় আনা যায়নি। বিপুল পরিমাণ এই অর্থের বড় অংশই প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের।

জানা গেছে, হিসাব জব্দ তালিকায় রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা রয়েছেন। তবে রাজনীতিবিদদের অধিকাংশই সরকারি দলের সদস্য। এ তালিকায় রয়েছেন— ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী, ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, যুবলীগের জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, ৩৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান, কৃষক লীগ নেতা ও কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম এবং মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ারা রয়েছেন।

এ ছাড়া আরো কিছু ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে হলেন— সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নজরুল ইসলাম বাবু, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার প্রমুখ। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— লেক ভিউ প্রপার্টিজ, আরএও কনস্ট্রাকশন।

জানা গেছে, গত সপ্তাহেই নজরদারির আওতায় আসা চার শতাধিক ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অবৈধ অর্থ এসেছে দুর্নীতিবাজদের ব্যাংক হিসাবে। অনেকেই ব্যাংকের লকার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগ, বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ নামে-বেনামে বিনিয়োগ করেছেন। যেসব দেশে টাকা পাচার হয়েছে সেসব দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান চলছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া হবে। এরপর তারা আরো বিশদ তদন্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আরো যাদের সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে তারা হলেন- স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার, তার স্ত্রী পারভীন লুনা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নীলা এবং তাদের প্রতিষ্ঠান ফাইন পাওয়ার সল্যুশন লিমিটেড; যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, তার স্ত্রী সানজিদা রহমান, তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান টি-টোয়েন্টি ফোর গেমিং কোম্পানি লিমিটেড ও টি-টোয়েন্টি ফোর ল ফার্ম লিমিটেডের ব্যাংক হিসাব; স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক কে এম মাসুদুর রহমান, তার স্ত্রী লুৎফুর নাহার লুনা, বাবা আবুল খায়ের খান, মা রাজিয়া খান এবং তাদের প্রতিষ্ঠান সেবা গ্রিন লাইন লিমিটেড; যুবলীগ নেতা মুরসালিক আহমেদ, তার বাবা আবদুল লতিফ, মা আছিয়া বেগম, মুরসালিকের স্ত্রী কাওসারী আজাদ।

বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের সম্পদ সম্পর্কে তথ্য আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দেওয়া হবে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, মানি লন্ডারিং হতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে ব্যাংকগুলো নিজ থেকে সতর্ক হতে পারে। কারো নির্দেশ ছাড়াই তারা যে কোনো হিসাব নজরদারিতে আনতে পারে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবগুলোতে লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads