• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
ডলারের দাম বাড়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঝোঁক

প্রতীকী ছবি

অর্থ ও বাণিজ্য

ডলারের দাম বাড়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঝোঁক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

নগদ প্রণোদনা দেওয়া ও টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ায় বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ঝোঁক প্রবাসীদের। চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭৭১ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৬২৯ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসাবে গত নভেম্বরের চেয়ে এ বছর নভেম্বরে রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার সমমূল্যের অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা, যা গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। গত বছর নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৮০ কোটি ৪ লাখ ডলার।

ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে মূলত দুটি কারণে। একটি হলো, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করেছে। অন্যটি ডলারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এখন ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছরও বৈধ চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

এদিকে রেমিট্যান্সের প্রণোদনার অর্থ যেন সহজে প্রবাসীরা পান সেজন্য বিভিন্ন শর্ত শিথিল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে বলা হয়, দেড় লাখ টাকার রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কাগজপত্র লাগবে না। আগে ১ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বিনা প্রশ্নে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু প্রবাসীদের বোঝার সুবিধার্থে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দেড় লাখ টাকার ওপরে রেমিট্যান্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

তবে দেড় লাখ টাকা বা দেড় হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। আগে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রেমিট্যান্সের কাগজপত্রাদি দাখিলের সময়সীমা ছিল। এটি বাড়িয়ে ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতার দেওয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের কাগজপত্র জমা দিতে হয়।

চাহিদা বাড়ায় চলতি বছরে সর্বশেষ ১৮ নভেম্বর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম পাঁচ পয়সা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হবে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা এক বছর আগের তুলনায় দশমিক ৯২ টাকা বেশি। গত বছর একই সময়ে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৮৮ পয়সা। আমদানি দায় শোধ করতে এ হার বেধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সাধারণ মানুষ, যারা ভ্রমণ করতে বিদেশ যাচ্ছেন, তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকার ওপরে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ।

রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর আগে গত চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। এ সময় রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার।

আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান প্রবাসীরা, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads