• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

অর্থ ও বাণিজ্য

রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান বেচাকেনায় বড় উদারতা!

সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান আইনের খসড়া চূড়ান্ত

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান বেচাকেনায় আইন চূড়ান্ত করার পথে সরকার। প্রস্তাবিত আইনে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানকে (অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট) কোনো কর দিতে হবে না রাষ্ট্রের কোষাগারে। তবে প্রাথমিক মূলধন জোগান দিতে হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কিনে নিতে গঠন করা হবে বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এর বাইরে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ কেনার জন্য বেসরকারি খাতেও একই ধরনের কোম্পানি খোলা যাবে। এ লক্ষ্যে খেলাপি ঋণের বর্তমান মূল্য নির্ধারণ ও ক্রয় বিধিমালা তৈরি এবং কোম্পানির বিজনেস মডিউল তৈরির কাজ চলছে। এজন্য কারিগরি সহায়তা নেওয়া হচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে।

উচ্চ হারের খেলাপি ঋণে জর্জরিত দেশের ব্যাংক খাত। এ কারণে কমছে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা। বৃদ্ধি পাচ্ছে সুদহার। তাই খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, লাইসেন্স গ্রহণের এক বছরের মধ্যে কার্যক্রম শুরু করতে না পারলে বা অন্য কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে কোম্পানির অনুমোদন বাতিল করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ আইনের ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে খেলাপি ঋণ কিনে নিতে পারবে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া জামানত ও দায়দেনা বিক্রি করে অর্থ আদায় করতে পারবে কোম্পানি। খেলাপি ঋণ আদায় ব্যবস্থাপনা বা বিনিয়োগকৃত অর্থ আদায়ে চুক্তিবদ্ধ পক্ষগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তা বিরোধ নিষ্পত্তি অথবা আরবিট্রেশন আইন ২০০১ অনুযায়ী মীমাংসা করা হবে। অর্থাৎ উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কোনো আদালতে যেতে পারবে না কেউ। ঋণ কিনে নেওয়ার পর ঋণগ্রহীতার সম্পদের ওপর দখলস্বত্ব চলে যাবে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির কাছে। কোম্পানি গ্রহীতার স্থাবর, অস্থাবর বা অন্য কোনো উপায়ে আদায়যোগ্য খাত থেকেও অর্থ আদায় করতে পারবে। সম্পত্তি কেনার পর তা বিক্রি বা হস্তান্তর করতে রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের অর্ধেকের বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকের। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এসব ঋণ কিনে নিতে সরকার গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের আকার ও কার্যাবলিও উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির উদ্যোগ নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের দিকে যেতে হবে। সুশাসন ও দুষ্টদের দমন করতে পারলে খেলাপি ঋণ কমে যাবে এমনিতেই। তাছাড়া ব্যাংক থেকে কেউ যাতে প্রভাব বিস্তার করে টাকা বের করে নিয়ে যেতে না পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। 

বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে একজন চেয়ারম্যান থাকবেন। পরিচালক পদে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)সহ বিভিন্ন সংস্থার ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা থাকবেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads