বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সরকারের বড় বড় প্রজেক্টে এবং একদম স্বল্প সুদে আসতে আগ্রহী। তারা আমাদের পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারেও আসতে আগ্রহী। তবে তারা শর্টটার্মে নয়, লংটার্মে বিনিয়োগে আসতে চায়। গতকাল সোমবার বিএসইসির সম্মেলন কক্ষে দুবাইয়ে রোড শো-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত বলেন, আমরা রোড শোতে আমাদের ইকোনমিকস ইন্ট্রোডিউস তুলে ধরলাম, আমরা কোথায় আছি টোটাল তথ্যপ্রবাহ। কিছু কিছু জায়গায় ওরা আমাদের অনেক প্রশ্ন করেছে, অনেক কিছু জানলো এবং সামনাসামনি অনেক কিছু শোনার পরে ওরা ডিসিশন নিল এখন ওরা কী করবে। এখন আমাদের প্রতিদিন মেইল আসে। তাদের মধ্যে কিছু কিছু মিউচুয়াল ফান্ডে ইনভেস্ট করতে চায়। সেখানে কী কী কারেকশন দরকার সেটার বিষয়ে ওরা সাজেশন দেয়।
বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের যে প্রজেক্টগুলো আসছে সেগুলোর সাইজ ৫০০ কোটি, হাজার কোটি, দুই হাজার কোটি, চার হাজার কোটি-এ রকম বিরাট বিরাট সাইজ। শুধু ইক্যুইটি মার্কেট দিয়ে এটার কোনো সলিউশন দেয়া সম্ভব না বলেই আমার বন্ডের কাজ করছি। বন্ডের মাধ্যমে একমাত্র আমাদের এই সলিউশন দেয়া সম্ভব। দেখা গেছে বন্ডের কনভেনশনাল বন্ড এবং সুক্কুক মার্কেটে ট্রিলিয়ন ডলারের ওপর আছে। এবং তাদের বিনিয়োগের জায়গা তারা খুঁজে পাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা যখন এই প্রেজেন্টেশনটা করলাম, প্রেজেন্টেশনের পরে এরা প্রত্যেকেই আমাদের সাথে আলাদা আলাদা মিটিং করেছে। প্রত্যেকটা বড় বড় ইনভেস্টর। এখানে ওয়ার্ল্ডের সব নাম করা যাদের সাত ট্রিলিয়ন, তিন ট্রিলিয়ন। তারা ভালো জায়গা খুঁজছে কোথায় ইনভেস্ট করতে পারে। তাদের দেশে বিনিয়োগ করে তারা তেমন কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না। এবং এই রেটিংয়ে যেসব দেশ সেসব দেশেই তারা বিনিয়োগ করে।
প্রফেসর শিবলী বলেন, বাংলাদেশের যে ভবিষ্যত আমরা দেখতে পাচ্ছি এবং বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটে রোল প্লে করা উচিত বলে আমরা মনে করি; সেখানে প্রচুর ব্যাংকিং সেক্টর থেকে লোন নিয়ে মানুষ বড় বড় প্রজেক্ট লংটার্মে করছে। সেখানে সামনের দিনগুলোতে আমাদের বিরাট ভূমিকা রাখতে হবে। সেটা রাখতে গিয়ে আমরা দেখেছি ইক্যুইটি মার্কেটে আমরা যেই সাইজের ক্যাপিটাল ইনজেক্ট করি, এটা দিয়ে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোতে কাজ করে না। বাংলাদেশের প্রতি বিদেশিদের একটা নেগেটিভ ভাবমূর্তি ছিল উল্লেখ করে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আগে তারা আমাদের নিয়ে কেমন একটা ভাবত। কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি দেশের ঠিক পজিশনটা সবার কাছে তুলে ধরতে। সে জন্যই আমরা দুবাইয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশর সঠিক ডেটা তুলে ধরলাম। তারা আমাদের ডেটা দেখে অবাক হয়েছে। তারা জনতে চেয়েছে আমার ঠিক বলেছি কি না, আমরা বলেছি এগুলো সব সঠিক। কোথাও তোমাদের সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ করে দেখতে পারো। তখন তারা বিশ্বাস করা শুরু করল। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে দুবাইয়ে অবস্থানরত দুই-তিনজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী বলল আমরা এখানে খুব সম্মান পাচ্ছি। যখন কোনো কাজে ব্যাংকে যাই তারা আমাদের সম্মানের চোখে দেখে। আগের মতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে না। এভাবেই আমাদের ভাবমূর্তিটা আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে নেগেটিভ প্রোপাগান্ডাই করে গেছে সারা জীবন এবং এখনো। আমাদের ভালোটা কেউ বলি না, খারাপটাই খুঁজে দেখি। এসব কারণে আমাদের এই রোড শোটা বাংলাদেশের প্রপার তথ্যচিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে মনে করি যে বিদেশে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রপার তথ্যচিত্র উঠে এসেছে। তিনি বলেন, আমরা যদি বিভিন্ন জায়গায় অর্থাৎ ফাইন্যান্সিয়াল হাব যেগুলো দুবাই, লন্ডন, নিউইয়র্ক, হংকং বা সিঙ্গাপুর এসব জায়গায় যদি বাংলাদেশের সঠিক তথ্য মানুষের কাছে, বিনিয়োগকারীর কাছে, বিদেশের সংবাদপত্র বা বিদেশের ব্যবসায়ীদের সামনে তুলে ধরতে পারে তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে একটা নেতিবাচক মনোভাব অনেক বছর ধরে রয়ে গেছে সেখান থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। আমাদেরকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখবে। এখনো তারা ভাবে আমরা বোধহয় মানুষের ডোনেশনের ওপর চলি। আমাদের যে এখন ডোনেশন লাগে না সেটা তারা জানে না।