• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

আনন্দ বিনোদন

প্রশ্নটা করা হয়নি

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৮

নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’ উদ্বোধনের সময় উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। বনানীর প্লাটিনাম স্যুট রেস্টুরেন্টে উপস্থিত ছিলেন জনা পঞ্চাশেক অতিথি। তাদের দেখে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ, দেশের জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ, টিভির জনপ্রিয় মুখ বাঁধন, জনপ্রিয় গায়িকা কণা এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। নুসরাত ফারিয়াকে শুভাশীষ জানাতে তাদের কারো মধ্যে কোনো কার্পণ্য দেখিনি। সবচেয়ে বেশি সরব ছিলেন আরিফিন শুভ। হালে ব্যস্ত হয়ে ওঠা ঢাকাই ছবির এ নায়ক রীতিমতো নেচেগেয়ে ‘পটাকা’ উদ্বোধন করেছেন।

অন্যদিকে বাঁধনকে দেখে মনে হয়েছে, নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন সর্বত্র। বাঁধনকে নিয়ে বাজারে এক গল্প চালু হয়েছে। বাঁধন লোভী, স্বার্থপর। বাঁধন তার লোভ ও স্বার্থের কারণে স্বামীর সঙ্গে সংসার করতে পারলেন না। সন্তানকে ব্যবহার করে স্বামীকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। স্বামীর কাছ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা হাতিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

এদিন বাঁধনকে দেখে মনে হলো, বাজারের এসব গল্প তিনিও বিশ্বাস করেন। না হলে ‘ধানো হাঁটে ওল’ নিয়ে বসবেন কেন? এসেছেন গানের অনুষ্ঠানে নুসরাত ফারিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে। সেটা না করে শুরু করেছেন তার জীবন সংগ্রামের গল্প। সেই গল্পের সঙ্গে নুসরাত ফারিয়ার ‘পটাকা’র একটা যোগসূত্র নির্মাণের চেষ্টাও করেছেন। কিন্তু জমে ওঠেনি। বাঁধনের উপস্থিতি তাই নিজেকে খোঁজার চেষ্টা ছাড়া কিছু মনে হয়নি।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ব্যস্ত মানুষ। খুব ইমপর্ট্যান্ট মনে না করলে কোথাও উপস্থিত হওয়ার সময় তার হাতে থাকে না। ঘণ্টাব্যাপী মঞ্চের দিকে গভীর মনোযোগে তার তাকিয়ে থাকা দেখে মনে হচ্ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপারস্যাপার। আসলে মঞ্চে তখন অতিথিদের সঙ্গে উপস্থাপক ন্যাকামি করছেন। আবদুল আজিজের কাছে আজকাল এসবও উপভোগ্য হয়ে উঠেছে তাহলে।

কণা উঠলেন মঞ্চে। তার আগেই নুসরাত ফারিয়া ঘোষণা দিলেন, কণার সঙ্গে তার সম্পর্কটা আদিখ্যেতা লেভেলের ভালো। মঞ্চে তার প্রমাণও পাওয়া গেল। যে দু’চারটা গান গেয়ে কণা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন, সেই অভিজ্ঞতায় ভর করে ঘোষণা দিলেন— ‘নুসরাত ফারিয়া ফাটিয়ে দিতে যাচ্ছেন।’

নুসরাত ফারিয়া অবশ্য ফাটিয়ে দিয়েছেন। একটা গান গেয়ে পুরো জাতির কোমর নড়িয়ে দিয়েছেন। গানটি ইউটিউবে ওঠার পর থেকে দর্শকের গালিগালাজে জেরবার। সাড়ে পাঁচ লাখ ভিউ (গতকাল পর্যন্ত) এর সঙ্গে জুটেছে সাড়ে চার হাজার লাইক ও সাড়ে পাঁচ হাজার ডিজলাইক। বাংলাদেশের কোনো গানের ডিজলাইক এর আগে লাইক ছাড়িয়ে যায়নি। সেদিক দিয়ে এটা রেকর্ড। প্রায় দুই হাজার কমেন্টের বেশিরভাগই নেতিবাচক। এটাকে ফাটিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কী-বা বলা যেতে পারে।

‘পটাকা’ গান নিয়ে ভালো বলার কিছু নেই। রাকিব হাসান রাহুলের দুর্বোধ্য লিরিকস (কী লিখেছেন গান শুনে কিছুই বোঝা যায় না), প্রীতম হাসানের বাজারে সুর-সঙ্গীত আর নুসরাত ফারিয়ার আনাড়ি গায়কি। এক কথায় এটাই গান। ভিডিও দেখেও আরাম লাগার কিছু নেই। কলকাতার কোরিওগ্রাফার বাবা যাদব এই গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন— এটা শুধু বলে সুখ পাওয়া যায়। কোরিওগ্রাফি দিয়ে আহামরি কিছু দেখাননি তিনি। স্রেফ বাজারে কোরিওগ্রাফি হয়েছে।

এ ধরনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের জন্য একটা প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকে। উপস্থাপকের অনর্থক বকবকানি আর ন্যাকামি সে পর্বটা খেয়ে দিয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্ব থাকলে নুসরাত ফারিয়াকে জিজ্ঞেস করতাম— গান কেন গেয়েছেন? মানে, গান তো আজকাল সবাই গায়। আমি গাই, সে গায়, এমনকি আলিয়া ভাটও গায়। আপনি কেন গেয়েছেন?

প্রশ্নটা করা হয়নি। উত্তরটাও পাইনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads