• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

আনন্দ বিনোদন

‘রাস্তা’ দেখে রাস্তা বানান

  • প্রকাশিত ০১ মে ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

দীর্ঘদিন পর কণ্ঠশিল্পী পড়শী ফিরে এসেছেন তার নতুন গান ‘রাস্তা’ নিয়ে। অনেকদিন হলো তার নতুন কোনো গান নেই। তাকে খুব মিস করছিলাম। যদিও পড়শীর গান আমার ফেভারিট লিস্টে নেই। কিন্তু শিল্পীর অনুপস্থিতি তো কষ্ট দেয়। অবশেষে ‘ধ্রুব মিউজিক স্টেশন’কে দেখলাম কয়েকদিন ধরে বেশ আওয়াজ দিচ্ছে, পড়শী আসছে নতুন গান ‘রাস্তা’ নিয়ে। ভালো লাগল জিনিসটা।

এতদিন পরে কী নিয়ে আসছেন পড়শী, সেই কৌতূহল নিয়ে গানটি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। অবশেষে গত ২৬ এপ্রিল ইউটিউবে পড়শী এলেন তার নতুন গান ‘রাস্তা’ নিয়ে। তার দু’দিন পর আমি ইউটিউবে গেলাম ‘রাস্তা’ দেখতে। ‘রাস্তা’ দেখার আগে ভিউয়ার্স খেয়াল করলাম। বাহ, দু’দিনেই প্রমাণ সাইজের ভিউয়ার্স! এরপরে লাইক দেখতে গিয়ে একটু থতমতই খেলাম। দেখি লাইকের পাশাপাশি ডিজলাইকের পাল্লাটাও বেশ শক্তিশালী। আমার কেন যেন মনে হলো, একটু কমেন্টটা দেখি। দেখলাম, কমেন্টের অভাব নেই, অসংখ্য কমেন্ট। তবে এখানেই সমস্যা। ওগুলোর অধিকাংশই নেতিবাচক কমেন্ট। আমি ‘রাস্তা’র সামনে দাঁড়িয়ে দেখি রাস্তাজুড়ে নেতিবাচক কমেন্টের স্তূপ। নেতিবাচক কমেন্টে কমেন্টে পড়শীর রাস্তাটি কী নিদারুণ খানাখন্দে দুর্গম রূপ ধারণ করেছে!

খুব চিন্তা হলো। ভাবলাম, এই রাস্তা দিয়ে হেঁটে খুব বেশিদূর কি এগোতে পারবেন তিনি? কীভাবে সম্ভব সেটা?

যাই হোক, এবার কয়েকটা কমেন্টের চেহারা তুলে ধরি আপনাদের সামনে। কেউ লিখেছেন, ‘ভালো লাগেনি’। কেউ আবার আর একটু রসিয়ে লিখেছেন, ‘সাউন্ড অফ করে দেখতেই ভালো লাগে’। কেউ লিখেছেন, ‘ফালতু’। কেউ আবার আগ্রাসী মন্তব্য করে অনেক কটু কথা বলেছেন যেগুলো উল্লেখ করার অযোগ্য। কেউ আবার পশ্চিমা শিল্পীকে অনুসরণের ব্যর্থ প্রচেষ্টা বলে তামাশা করেছেন। তবে সবই যে নেতিবাচক মন্তব্য ছিল তা নয়। কয়েকটা প্রশংসামূলক মন্তব্যও দেখা যাচ্ছিল। তবে সেগুলো একেবারেই সংখ্যালঘু। সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতিবাচক মন্তব্যের ভিড়ে সেগুলো চরম দুঃসহ জীবন যাপন করছিল। এগুলো দেখে চিন্তা হলো, পড়শী এই কণ্টকাকীর্ণ রাস্তায় হাঁটবেন কী করে? হাঁটতে গেলেও মনে হয় না বেশিদূর এগোতে পারবেন। নীরব ভিউয়ার্স সংখ্যা এই ‘রাস্তা’কে হিট উপাধি দিলে সঙ্গে সঙ্গে যে সরব নেতিবাচক কমেন্টগুলো ‘না না’ শুরু করে দেবে। ভিউয়ার্সকে সফলতার হাতিয়ার করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতিবাচক কমেন্ট যে হাতিয়ার হয়ে ‘রাস্তা’কে বাজে গানের কাতারে দাঁড় করিয়ে দেবে।

গানটা আমি দু’বার শুনেছি। একবার দেখার পাশাপাশি শুনেছি এবং একবার না দেখে শুনেছি। না দেখে শোনার সময় গানটাকে খুব একটা খারাপ মনে হয়নি। বরং ভালোই লেগেছে। মন দিয়ে শুনতে বিরক্ত লাগেনি। কিন্তু দেখতে গিয়েই ঝামেলাটা বেঁধেছে। বিরক্তিকর এবং খুবই বিরক্তিকর মনে হয়েছে। রীতিমতো চোখ জ্বালা করেছে আমার। আর পড়শীকে সেখানে টোটালি ইচড়ে পাকা মনে হয়েছে। ভিডিওটার সঙ্গে অডিওর কোনো সামঞ্জস্য খুঁজে পাইনি। শুটিং শুটিং ভাব, কণ্ঠশিল্পীর অস্থিরতা— সব মিলিয়ে ভিডিওতে কী হচ্ছিল ঠিক বোধগম্য হয়নি। বার বার মনে হচ্ছিল একটি নেতিবাচক কমেন্ট করে বেরিয়ে যাই। তা করিনি। কিন্তু আমি না করলে কী হবে? অনেকেই তো করেছে।

আফসোস হচ্ছে পড়শীর জন্য। এতদিন পর তিনি এলেন ‘রাস্তা’ নিয়ে। হয়তো ভেবেছিলেন মনোরম পরিবেশে সেই ‘রাস্তা’ দিয়ে একটু হাঁটবেন, হাসবেন, খেলবেন, দৌড়াবেন। বসে আপন মনে একটু বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু তা আর হলো কই? ‘রাস্তা’র পরিবেশ মনোরম তো হলোই না, উল্টো কুৎসিত হয়ে গেল। পড়শীর ‘রাস্তা’ জুড়ে সাপ-বিছার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নেতিবাচক মন্তব্য, পাশ দিয়ে রয়েছে পর্বতসম ডিজলাইক।

শুধুমাত্র ভিউয়ার্সের সুগন্ধ কি আর এই দুর্গন্ধকে ছাপিয়ে রাস্তাকে চলাচলযোগ্য করতে পারবে? নাকি দুর্গন্ধে অতিষ্ট হয়ে পড়শী নিজেই রাস্তা ত্যাগ করবেন? এটা পড়শীর ব্যাপার। তবে ভবিষ্যতের কাজের ব্যাপারে তিনি কীভাবে এগোবেন সেই সিদ্ধান্ত নিতে ‘রাস্তা’, ‘রাস্তা’র কমেন্ট, ‘রাস্তা’র ডিজলাইক তাকে সাহায্য করবে।

শুধু পড়শী না, অন্য কণ্ঠশিল্পীরাও পড়শীর ‘রাস্তা’র দিকে তাকিয়ে নিজেদের রাস্তার ব্যাপারে ভাবতে পারেন। ভিউয়ের পাশাপাশি কমেন্ট ও ডিজলাইককেও মাথায় রেখে পরবর্তী প্রজেক্টে হাত দিতে পারেন।

 

লেখক : গীতিকবি

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads