• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

আনন্দ বিনোদন

হাফ-ডিজিটাল বাংলা চলচ্চিত্র

  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৮

মাসুদ রহমান

চলচ্চিত্র শব্দটির সঙ্গে একটি পরিপূর্ণ সিস্টেম চোখে ভেসে ওঠে। গল্প, চিত্রনাট্য, সংলাপ বা নির্মাণ ছাড়াও রয়েছে স্ক্রিনিং বা প্রদর্শন, বিজ্ঞাপন, প্রমোশন বক্স অফিস প্রদর্শনের অর্থ ম্যানেজমেন্ট ও প্রযোজকের লগ্নি তোলা এবং লাভের মুখ দেখা। সাম্প্রতিক সময়ে বলা হচ্ছে- চলচ্চিত্র ডিজিটাল হয়েছে, ভালো ছবি নির্মাণ হবে, প্রযোজকরা লাভবান হবেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা সম্ভব হচ্ছে না। এর জন্য দায়ী হলো ডিজিটাল শব্দটির চলচ্চিত্রের অপপ্রয়োগ এবং আংশিক ডিজিটালাইজেশন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখনো পরিপূর্ণ ডিজিটাল হয়নি।

চলচ্চিত্রে শুধু ক্যামেরা এবং প্রজেকশনের মেশিন পরিবর্তন হয়েছে। বাকি কোথাও ডিজিটালের ছোঁয়া নেই। শুধু কারিগরি পরিবর্তন চলচ্চিত্রকে বদলাতে পারে না। মাঝখানে থেকে যায় বিরাট শূন্যতা। এই শূন্যতা পূর্ণ না হলে চলচ্চিত্রের পালে নতুন হাওয়া কোনো কালেই লাগবে না। স্বপ্নগুলো রয়ে যাবে অধরা এবং অসম্পূর্ণ। এটা সত্যি, বর্তমানে চলচ্চিত্রে যারা কাজ করছেন তারা ডিজিটাল পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত নন; তবে আশার বাণী হলো তারা সবাই মোবাইলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচরণ করতে সক্ষম। বলতে গেলে তারা ডিজিটাল জ্ঞানসম্পন্ন। তাহলে চলচ্চিত্র পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল হতে কোনো সমস্যা নেই।

চলচ্চিত্রের ডিজিটাল বলতে শুধু কারিগরি নয়, বাজার ও বিপণন প্রক্রিয়াকেও ডিজিটাল করতে হবে। সেন্ট্রাল সার্ভারের মাধ্যমে দেশের হলগুলোতে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে দেশীয় প্রদর্শন অপারেটর তৈরি করতে হবে। যদিও জাজ মাল্টিমিডিয়া এখনো একচ্ছত্র রাজত্ব করছে। চাইলে এফডিসিও প্রদর্শন অপারেটর হিসেবে কাজ করতে পারে। কোনো প্রকার অগ্রিম বুকিং সিস্টেম চলবে না। প্রদর্শন খরচ প্রদর্শক ও প্রযোজক যৌথভাবে বহন করে শেয়ারিং পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। আর সে জন্য দরকার বক্স অফিস, যার ওয়েবসাইটে যুক্ত থাকবে টিকেট বিক্রির লিঙ্ক। প্রতিটি হলে টিকেট বিক্রি হবে অনলাইনে। বক্স অফিস সাইটে থাকবে আবহাওয়া ও ছুটিসহ নানান ফিচার, যা দেখে ব্যবসায়ীরা ছবির বাজারে কেমন বিক্রি হতে পারে তার আইডিয়া করতে পারেন। পরিশেষে হল পরিভ্রমণের পর নিট দেশের সেল এবং ছবি এক্সপোর্ট হলে বিদেশের সেল, ছবির বাজেটসহ নানান তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। ফলে যে কেউ ছবির ব্যবসায়িক স্ট্যাটাস থেকে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

চলচ্চিত্রের এ ধরনের ডিজিটালাইজেশনে ছবি নির্মাণের সংখ্যা বাড়বে, অযোগ্যরা কাজ কম পাবে। যারা যোগ্য তারাই চলচ্চিত্রের প্লাটফর্মে দাঁড়াতে পারবে। সে হোক অভিনেতা বা অভিনেত্রী বা প্রযোজক-পরিচালক; ছবিতে কাজ করতে বা বানাতে এলে সুস্থ ম্যানেজমেন্ট ও ভাবনা নিয়ে ফিল্মে কাজ করবেন বা বানাবেন। যদি প্রদর্শনী সিস্টেমে পরিবর্তন আনা হয়, তাহলে বিষয়টি আরো ডায়নামিক হতে পারে। যেমন- একই হলে দেশি ছবিকে প্রাধান্য দিয়ে দুটো ছবি চালানো। এতে করে দর্শকরা তাদের রুচিমতো ছবি দেখতে পারবেন সেই সঙ্গে হল মালিকরা একটানা লসের হাত থেকে বেঁচে যেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলা ছবিকে প্রাধান্য দিয়ে অন্য ভাষার ছবি যথা ইরানি, হিন্দি বা ইংরেজি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা যেতে পারে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে, চলচ্চিত্রের এই কঠিন সময় থেকে বের হতে গেলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সিনেমা নির্মাণ বা প্রদর্শন করা জরুরি।

চলচ্চিত্র ডিজিটাল করতে হলে এভাবেই ডিজিটাল হওয়া দরকার। উন্নত বিশ্বে আপনি ঘরে বসে সিনেমা হলের পছন্দের সিটও বুকিং দিতে পারবেন। ট্রেলারসহ ছবির সব তথ্য তারা মোবাইলেই দেখতে পারেন। কোন শ্রেণির দর্শকদের জন্য ছবিটি বানানো, সেই অনুযায়ী ছেলেমেয়েদের ছবি দেখতে উদ্ধুদ্ধ করেও থাকেন। এতে করে সেসব চলচ্চিত্রের গ্রহণযোগ্যতা বা চাহিদা বা ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। সেখানকার প্রযোজকরা সময় ও প্রোডাক্ট বুঝে নেট সোর্সের মাধ্যমে সারা বিশ্বে বিভিন্ন শ্রেণির দর্শকদের তাদের প্রোডাক্ট বা সিনেমাকে অন্যকে দেখতে অনুপ্রেরণা দেন।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ডিজিটাল বলার কোনো অবকাশ নেই। কোনো অজানা কারণে কারিগরি ডিজিটালাইজেশন ছাড়া তেমন কিছু ঘটেনি। কোনো অদৃশ্য হাত এটা নিয়ে ব্যস্ত থাকার একটা ফানুষ তৈরি করে সিনেমার মতো নিউট্রাল ইন্ডাস্ট্রিতে দলগত বিভাজন তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। সিনেমার লোক দরিদ্র হলে মনে হয় অনেকেরই সুবিধা। কিন্তু এই পৃথিবীর যত বিত্তশালী মানুষ রয়েছেন তাদের টাকা বানানোর পেছনে সিনেমা বা টেলিভিশনমাধ্যম বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় সিনেমা শিল্পের লোকজনকে বিশাল নিয়ামক হিসেবে ধরা হয়। পক্ষান্তরে আমাদের একটা হাফ-ডিজিটাল চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি হাতে নিয়ে মিছেমিছি হাওয়াই মিঠাই লড়াই খেলছি। তার চেয়ে সবাই একসঙ্গে বলা দরকার, বাংলাদেশে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি চাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads