• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

আনন্দ বিনোদন

মাকে নিয়ে গান

  • প্রকাশিত ০৮ মে ২০১৮

‘আমি বন্দি কারাগারে/আছি গো মা বিপদে বাইরের আলো চোখে পড়ে না’ (মুজিব পরদেশী)। অথবা ‘সবারে সব দান করিয়া আমারে মা করছে দান/ বেহেশতেরই চাবিখানি, তিরিশ পারা পাক কুরআন’ (এন্ড্র কিশোর)। এমন অনেক গান আছে মাকে নিয়ে। শ্রোতানন্দিত সেসব গান সৃষ্টির পেছনের গল্পও হূদয়ঘনিষ্ঠ। আজ বিশ্ব মা দিবস উপলক্ষে মাকে নিয়ে তৈরি কয়েকটি শ্রোতাপ্রিয় গানের গল্প জানাচ্ছেন হাসান সাইদুল

মায়ের একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম

মাকে নিয়ে এ যাবৎ যত গান হয়েছে তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ধরা যেতে পারে ফকির আলমগীরের এই গানটিকে। ফকির আলমগীর তার মাকে নিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। পথে আরিচাঘাটে অন্ধ এক বাউলের সঙ্গে দেখা হয়। দোতারা বাজিয়ে দেহতত্ত্বের গান গাইছেন বাউল। গানটি শুনেই ফকির আলমগীরের কানে লেগে যায়। সঙ্গে সঙ্গে রেকর্ডার বের করে গানটি ধারণ করে নেন তিনি। পরে গানটি বিটিভির একটি অনুষ্ঠানে নিজের মতো তৈরি ও পরিবেশন করেন। তখনই সবার প্রশংসা পান তিনি। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। নব্বইয়ের দশকে অজিত রায় বিটিভির জন্য গানটি আবার রেকর্ড করান। এ গানটিই ফকির আলমগীরের ‘সখিনা-২’ অ্যালবামে সংযোজন করা হয়। এরপর গানটি আরো দুইবার রেকর্ড করা হয়েছে। আলাউদ্দিন আলীর সংগীতায়োজনে ‘অবরোধ’ চলচ্চিত্রের জন্য এবং ফরিদ আহমেদের সংগীতায়োজনে দ্বিতীয়বার। পরে ‘সখীপুরের সখিনা’ অ্যালবামে গানটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

মাগো মা, আমারে বানাইলি তুই দিওয়ানা

খুরশিদ আলমের গাওয়া প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা দিলীপ বিশ্বাসের ‘সমাধি’ সিনেমার গান এটি, যা ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পর্দায় এ গানে ঠোঁট মেলান নায়করাজ রাজ্জাক। খুরশিদ আলম বলেন, গানটির কথা ও সুর তৈরি হতে দুই তিন দিন লেগে যায়। এরপর রেকর্ডিং হলো কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে। সাধারণত ছবি মুক্তি পাওয়ার পরই গান হিট হয়। কিন্তু সত্যদা যেন আগেই বুঝে গিয়েছিলেন, গানটি হিট হবে। তিনি আমাকে বললেন, ‘যত দিন তুই বেঁচে থাকবি, ততদিন তোকে এই গানটি গাইতে হবে।’ আমি যেখানে গান গাইতে যাই, এ গানটি গাইতে হয়। আসলে গানের কথা ও সুর অনেক সহজ-সরল ছিল। সব মিলিয়ে গানটি জনপ্রিয় হয়।

এমন একটা মা দে না

১৯৭৪ সাল। ফেরদৌস ওয়াহিদ তখন কলেজে পড়েন। প্রয়াত শিল্পী ফিরোজ সাঁই ওয়াহিদকে একদিন ডেকে বললেন, একটা গান গাইতে হবে। গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন ডা. নাসির আহমেদ। গানটি শোনেন তিনি। খুবই পছন্দ হলো। ফিরোজ সাঁই বললেন, ‘গানটি তোমার গলায় খুব মানাবে। আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, তুমি শুধু টাকা জোগাড় কর।’

গানটি রেকর্ড করতে মোট খরচ হবে ৩৩০ টাকা। ‘এত টাকা আমার কাছে নেই’, বলেন ফেরদৌস ওয়াহিদ। এগিয়ে এলেন তার চার বন্ধু সাইফ, রুমী, শামীম ও এনায়েতুল্লাহ। নিজের টিফিনের টাকা এবং বন্ধুদের টাকায় কাকরাইলের ইপসা রেকর্ডিং স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন। এরপর ১৯৭৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিটিভির বিশেষ সংগীতানুষ্ঠানে গানটি প্রচারিত হয়। চারদিকে ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। ১৯৭৭ সালে ‘এমন একটা মা দে না’ এবং ‘স্মৃতিরও সেই পথে’ গান দুটি নিয়ে একটি আরপিএম রেকর্ড বের হয়। ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, ‘মনে পড়ে, রেকর্ড করে গানটি আমি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে শোনাই। তিনি তখন বলছিলেন— এ গানটি এখন যতটা জনপ্রিয়, ২৫ বছর পর তা আরো বেশি জনপ্রিয় হবে।’ গানটির বয়স আজ প্রায় ৪০ বছর। এখনো গানটি অনেক জনপ্রিয়।

১০ মাস ১০ দিন করে গর্ভধারণ

১৯৯৭ সালে প্রিন্স মাহমুদের মা মারা যান। চারদিকে কেবল মাকে খুঁজে বেড়াতেন তিনি। এ রকম একটা মানসিক অবস্থার ভেতরই ‘মা’ গানটি লিখেছেন প্রিন্স মাহমুদ। গানটি সুর করতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। অনেক ভেবে প্রিন্স ঠিক করলেন, জেমসকে দিয়ে গানটি গাওয়াবেন। জেমসের মাও বেঁচে নেই। প্রয়াত শব্দ প্রকৌশলী মবিন তখন প্রিন্সের স্টুডিওতে ছিলেন। রেকর্ডিংয়ের সময় জেমসের কণ্ঠে মা গানটি শুনে বলেছিলেন, ‘এই গান মানুষের ভালো না লেগে পারে না।’ ১৯৯৯ সালে ‘এখনো দুচোখে বন্যা’ মিশ্র অ্যালবামে গানটি বের হয়। মবিনের কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি হয়ে গেল। প্রিন্স ও জেমস দুজনই মাকে হারিয়েছিলেন। তাই হয়ত দুজনের আবেগ এক হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই গানটি এত শ্রোতাপ্রিয় হয়েছে।

আম্মাজান

কিছু গান কখনো ভোলা যায় না। দু’একটি গান কখনই পুরনো হয় না। যে গান হূদয়ের তৃষ্ণা মেটায় সে গানের দুটি চরণ হলো ‘আম্মাজান, চোখের মণি আম্মাজান, প্রাণের খনি আম্মাজান, আম্মাজান, আম্মাজান।’ ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র আম্মাজানের জন্য তৈরি করা হয়। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর করা এবং আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গান আম্মাজান। বাংলাদেশীয় সঙ্গীতে মা নিয়ে যত গান আছে তার মধ্যে অন্যতম সেরা গান এটি।

একটা চাঁদ ছাড়া রাত আঁধার কালো

কবির বকুলের লেখা এবং কুমার বিশ্বজিতের সুর ও কণ্ঠে গানটি বেশ জনপ্রিয়তা এনেছে শ্রোতা মহলে। পিএ কাজল পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’ ছবিতে গানটি ব্যবহার করা হয়। গানটির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান বিশ্বজিৎ এবং কবির বকুল। এটি একাধারে বিজ্ঞাপনচিত্র, চলচ্চিত্র ও অডিও অ্যালবামে ব্যবহার করা হয়েছে। গানটি প্রথম বের হয় ২০০৯ সালে ওয়ারিদের বিজ্ঞাপনচিত্রে। এরপর ‘স্বামী স্ত্রীর ওয়াদা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে গানটি জনপ্রিয়তা পায়। একই বছর গানটি প্রকাশ হয় কুমার বিশ্বজিতের একক অ্যালবাম ‘রোদেলা দুপুর’-এ।

ওই আকাশের তারায় তারায়

২০০৬ সালের রমজান মাস। ভোরবেলা সেহরি খেয়ে মাত্র বসেছেন সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। এমন সময় গীতিকার আসিফ ইকবালের ফোন এলো। কান্নাভেজা কণ্ঠ। ভয় পেয়ে গেল ইমন। কী হয়েছে- জিজ্ঞেস করতেই আসিফ ইকবাল বলে উঠলেন, ‘১৪ বছর আগে এই দিনে মাকে হারিয়েছি। আজ প্রথমবার আমি মাকে স্বপ্নে দেখেছি। খুব খারাপ লাগছে।’ তিনি মাকে নিয়ে লেখা চারটি লাইন শোনান ইমনকে। ইমন শুনেই বলেন- ভাই, আমি আপনার গানটি সুর করতে চাই। পরে গানটি রাশেদকে দিয়ে গাওয়ান ইমন। ইমন বলেন, ক্লোজআপের ওই রাউন্ডটি যেদিন প্রচারিত হলো, সেদিন মা আমার সামনে ছিলেন। তিনি গানটি শেষ হলে আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তুই অনেক বড় হবি বাবা।’ মায়ের সেই দোয়া পাওয়ার পর আমার আর কিছু পাওয়ার আছে বলে মনে হয় না। এই একটি গান গেয়ে রাশেদও বেশ পরিচিতি পায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads