• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
বাংলাটার চর্চা বাংলাদেশেই হচ্ছে

সোমলতার শুরুটা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিয়েই

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

কলকাতার ডায়রি

বাংলাটার চর্চা বাংলাদেশেই হচ্ছে

  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০১৮

সোমলতা আচার্য্য চৌধুরী। গানের বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয়। বাংলাদেশের রক্তের উত্তরাধিকারী তিনি। সম্প্রতি কলকাতার বালিগঞ্জে বসে গান-কথায় তার সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন সোহেল অটল

কলকাতার ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাস্তায় বেরোনো দুষ্কর। এমন তাবদাহের দুপুরে সোমলতা সময় দিলেন ইন্টারভিউয়ের। ঠিক ১টা ৪৫ মিনিটে ঢুকলেন তার বালিগঞ্জের ‘ব্যান্ডেজ ট্যালেন্ট এজেন্সি প্রাইভেট লিমিটেড’-এর অফিসে। পেস্ট কালারের টি-শার্ট আর কালো জিন্স পরা সোমলতার শরীরজুড়ে ‘গরম-ক্লান্তি’। মুখের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন— বলুন কী খবর?

‘আপনি তো বাংলাদেশের মেয়ে’— শুরুতেই এ কথা শুনে সোমলতা থমকে গেলেন। ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশেই আমার দাদা বাড়ি, নানা বাড়ি।’

কখনো গিয়েছেন? এ প্রশ্নের উত্তরে কিছুটা আফসোস ঝরে পড়ল। অনেকটা অপরাধীর ভঙ্গিতে বললেন— ‘আসলে যে ক’বার বাংলাদেশে গিয়েছি, কাজের জন্যই। ঢাকাতে গিয়েছি, ফরিদপুর গিয়েছি শোতে। কিন্তু দাদাবাড়ি ময়মনসিংহ কিংবা নানাবাড়ি নোয়াখালি— কোথাও যাওয়া হয়নি। সম্ভবত কাজ নিয়ে কখনো যাওয়া হবে না। ইচ্ছা আছে শুধুমাত্র নিজেদের ভিটেটা দেখার জন্যই একবার বাংলাদেশে যাব।’

থামলেন সোমলতা। চোখের নিচে মোটা কাজলের রেখায় ময়মনসিংহে নিজেদের ভিটেবাড়ির কল্পনা জীবন পেয়ে উঠল বোধ হয়। মুক্তাগাছার মণ্ডার নাম শুনেছিলেন বাবার কাছ থেকে। সেটা চেখে দেখার সুযোগও হয়েছে তার। ঢাকাতেই কেউ একজন তার হাতে পৌঁছে দিয়েছিলেন মণ্ডা। তা নিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন কলকাতা। মণ্ডা খাইয়েছেন বাবাকেও।

সোমলতার বাবা মারা গেছেন মাসখানেক হলো। মৃত্যুর আগে তাকে মুক্তাগাছার মণ্ডা নিয়ে খাওয়াতে পেরেছেন বলে এক ধরনের তৃপ্তিও আছে তার মধ্যে।

কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সোমলতার গ্রহণযোগ্যতা দুই বাংলাতেই। শুরুতে সেটা আধুনিক গানের জন্য। গিটার বাজিয়ে ঝড় তুলছেন সোমলতা— স্টেজের এমন চিত্রই শ্রোতাদের মনে গেঁথে গিয়েছিল। কিন্তু একই সঙ্গে সোমলতার আরেকটা চিত্রও দাঁড়িয়ে গেছে। তিনি নিজের স্টাইলে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাচ্ছেন।

মণ্ডা-মিঠাই নিয়ে কথাবার্তার পরেই এ বিষয়টা উঠল। সোমলতা বললেন— ‘অনেকেই হয়তো জানেন না, আমার শুরুটা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিয়েই। রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব একটা শেখা হয়নি হয়তো। কিন্তু আমি যেটা গাই, সেটা ভালোবেসেই।’

সোমলতার গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের স্টাইল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, নতুন প্রজন্মের গায়ক-গায়িকারাও তাকে ফলো করছে। তার ব্যান্ড ‘সোমলতা অ্যান্ড দ্য এসেস’ থেকেও রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া হয়েছে। অবশ্যই নিজেদের স্টাইলে।

গানের বাজার নিয়ে অন্যদের মতো সোমলতাও কিছুটা হতাশ। তার মতে, কলকাতার প্রেক্ষাপটে এটা বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির আগ্রাসন হতে পারে। তবে ঠিক নিশ্চিত নন তিনি, কী কারণে মানুষ গান শুনছে না। তিনি বলেন, ‘হতে পারে এটা আমরা ঠিকমতো গাইতে পারছি না। কিংবা যারা শুনছেন তারা ঠিকমতো নিতে পারছেন না।’

বহু বছর ধরেই মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বাঙালি মিউজিক ডিরেক্টর, গায়ক-গায়িকাদের দাপট। সে ধারাবাহিকতায় সোমলতার নাম যুক্ত হচ্ছে না কেন?

সোমলতা হাসলেন। মুক্তোদানার মতো সে হাসি। বললেন— ‘মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রিটা পুরোপুরি প্রফেশনাল। বাঙালিদের দাপট বলেই যে কেউ সুযোগ পেয়ে যাবে তা নয়। ওখানে যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কাজ করতে হয়। আমার সুযোগ হলে অবশ্যই কাজ করব। তবে তার জন্য মরিয়া নই।’

বাংলাদেশের অর্ণবের ফ্যান সোমলতা। ভালো লাগে তাহসানের কণ্ঠও। ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের গানও নিয়মিত শুনছেন সোমলতার ব্যান্ড মেম্বারস। এ ছাড়া সিনিয়রদের গান তিনি খুব আগ্রহভরে শুনতে শুনতে বড় হয়েছেন।

বাংলাদেশের মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নিয়েও সোমলতা বেশ আশাবাদী। বিশেষ করে অডিওর গান নিয়ে। চলচ্চিত্রের গান যে ভালো হচ্ছে না, সে খবর তিনি জানেন। তবে বাংলাদেশের ইন্ডিপেন্ডেন্ট মিউজিক যারা করছেন, তাদের কাজে সোমলতা এক প্রকার মুগ্ধই।

সোমলতা বাঙালি মেয়ে। বাংলাদেশের রক্ত তার গায়ে। পড়াশোনা করেছেন ইংলিশ মিডিয়ামে। কিন্তু কথা বলেন চমৎকার বাংলায়। ওদিকে কলকাতার মানুষ বাংলা ভুলে যাচ্ছে। বাঙালির ছেলেমেয়েরাই বাংলা বলতে দ্বিধা বোধ করে। সেখানে হিন্দির আগ্রাসন। বাংলা গানের শিল্পী হিসেবে ব্যাপারটা সোমলতার কাছে কষ্টের হলেও মেনে নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বাঙালি ছেলেমেয়েরা বিনা প্রয়োজনে হিন্দি বলছে কি না। তবে এটা মেনে নেওয়া ছাড়াও কিছু করার নেই। বাংলাটার সঠিক চর্চা আসলে বাংলাদেশেই হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে।’

বটে। কলকাতার চিত্র দেখে স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাটা একদিন বাংলাদেশের একক সম্পত্তিতে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads