• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
হায় কোটি ভিউয়ার্স!

বিষয়টি মোটেও বিশ্বজয় করার মতো কোনো বিষয় না

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

হায় কোটি ভিউয়ার্স!

  • প্রকাশিত ৩১ মে ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

কী দিন এলো! যা নিয়ে আলোচনা করার কথা তা নিয়ে আলোচনা হয় না আর যা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা না তা নিয়ে আমরা শুধু আলোচনাতেই থেমে থাকি না, বরং এমন পর্যায়ের মাতামাতি করি যে তাতে মনে হয় আলোচ্য বিষয়টি নিশ্চয় বিশ্বজয় করার মতো কিছু একটা। আলোচ্য বিষয়টি নিশ্চয় অস্কার কিংবা নোভেল পাওয়ার মতো কিছু একটা। আসলে কি তাই? মোটেও না। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যায়, বিষয়টি মোটেও বিশ্বজয় করার মতো কোনো বিষয় না, বিষয়টি মোটেও ঝা-চকচকে কোনো বিষয় না। বিষয়টি খুবই রোগা-পটকা, অপুষ্টিতে ভোগা, পেট মোটা-পিছন মরা বাচ্চাদের মতো চোখ কোটরে বসে যাওয়া বর্ণহীন ও টিঙটিঙে একটি বিষয়।

এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে হিরো আলমের কথা বলা যায়। একে নিয়ে আমরা কম মাতামাতি করেছি? তাকে রীতিমতো এদেশের মিডিয়ার মুখপাত্র পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। অথচ আদৌ কি হিরো আলম মাতামাতি লেভেলের কেউ ছিল? তা থাক বা না থাক, আমরা যে চৌকির তলাকে রাতারাতি আগরতলা বানিয়ে ফেলতে পটু তা কিন্তু দেখিয়েছি। এবার শুরু হয়েছে আরেকটি উন্মাদনা। উন্মাদনাটা সমপ্রতি ইউটিউবে তিন কোটি ভিউয়ার্সপ্রাপ্ত, অসংখ্য প্রশংসাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের এ-যাবৎ ভিউয়ার্স সংখ্যার সব রেকর্ড ভেঙে ফেলা একটি গান নিয়ে। গানটি নিয়ে আমরা এমন মাতামাতি শুরু করেছি যে বাংলা গানের সকল রেকর্ড ভাঙতে তাকে আমরা সাহায্য করেছি, আবার বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও তুলে দিয়েছি। কিছুদিন আগে ‘পটাকা’ ও ‘রাস্তা’ গানে ডিজলাইকের ঝড় দেখে দর্শক-শ্রোতারা সচেতন হয়েছে বলে যে আশায় বুকে বেঁধে আমি আশাবাদী হয়েছিলাম এ অবস্থা দেখে সে আশা আমাকে জলাঞ্জলি দিতে হয়। তাদের রুচিবোধ আমাকে অসহায় করে তোলে। এই দর্শক-শ্রোতাদের ওপর ভর করে আমি ভালো মানের গান তথা সৃষ্টিশীল কোনো কাজের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার ছাড়া কিছু দেখি না।

শ্রোতা-দর্শকদের রুচি দেখে কিছু বলারও রুচি আসে না আমার। কেননা বৈচিত্র্যহীন কথা ও সুরের এই গানটির কথা যদি বলতে হয় তবে আমি বলব, কোনো জিনিস ভালো লাগলে এক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হবে, মানুষ তাকে নিয়ে প্রশংসায় মাতবে আর খারাপ লাগলে এক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হবে, মানুষ নিন্দায় মাতবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যে জিনিস ভালোও লাগাতে পারে না খারাপও লাগাতে পারে না, আঞ্চলিক ভাষায় যাকে বলে, ‘হোধবোধ নাই টাইপের’, শহুরে ভাষায় যাকে বলে ‘পানসে টাইপের’, সেরকম একটি গানকে নিয়ে এরা যা শুরু করেছে তা দেখে এদের ভালো-মন্দের তফাত বোঝার ক্ষমতা নিয়ে আমার সন্দেহ জাগছে।

এই গানের প্রশংসা করে আবার দেখলাম সমপ্রতি দুয়েকজন সঙ্গীত সম্পর্কিত বুঝদার মানুষও দু-চার কথা লিখেছেন। এটা দেখে আমি সত্যিই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছি। ছোটরা কোনো অকাজে লিপ্ত হলে তাদের না ধমকে উল্টো তাদের সঙ্গে ওই অকাজে যদি কোনো বয়স্ক মানুষ লিপ্ত হয় তাহলে সবার সব ক্ষোভটা ওই বয়স্ক লোকের ওপর গিয়ে পড়ে। তাদের কথা তখন একটাই থাকে। আর তা হলো, ‘পুলাপান না হয় একটা আকাম করল, আপনে বয়স্ক লোক হইয়া অগো লগে তাল মিলাইলেন কোন আক্কেলে? নাকি আপনারও আক্কেলজ্ঞান চইলা গেল! পুলাপানের সাথে আপনেও কি পুলাপান হইলেন?’

এই দুয়েকজন সঙ্গীত সম্পর্কিত বুঝদার মানুষের ওপর আমারও এখন এ ধরনের ক্ষোভ হচ্ছে। তাদের উদ্দেশে আমারও বলতে ইচ্ছে করেছে, ‘আম পাবলিক না হয় নাচানাচি করল। আম পাবলিকের সঙ্গে আপনেরা মাতামাতি করেন কী খাইয়া? আপনেরাও কি আম পাবলিক লেভেলের হইয়া গেলেন?’

কিন্তু আমার কিছুই বলা হয়ে ওঠে না। টুনির মা’র আপডেট ভার্সনের গান (গানটি শুনে আমার সেরকমই মনে হয়ছে) নিয়ে মাতামাতি করা আম পাবলিকের রুচি অনেক আগেই কুলি ফেলার চিলমচিতে বাস করছে জানতাম। কিন্তু এই বোধশক্তিসম্পন্ন বুঝদার মানুষগুলোর বোধও যে কুলি ফেলার চিলমচিতে গিয়ে ঠেকেছে তা এই কনটেন্ট না এলে হয়তো জানা হতো না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads