• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মানুষগুলো ভালো থাকুক

শোবিজ মিডিয়ায়ও মূলত দুই কারণে সম্পর্ক ভাঙে

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

মানুষগুলো ভালো থাকুক

  • সোহেল অটল
  • প্রকাশিত ২৮ জুন ২০১৮

সম্পর্ক ভাঙে কেন? সাধারণ মানুষের বেলায় দুই কারণ। প্রথম ও প্রধান কারণ— অভাবে। এই সমাজের ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক অভাব। অভাবের সঙ্গে পেরে ওঠে না সম্পর্কগুলো। ভেঙে যায়।

দ্বিতীয় কারণটা- স্বভাবে। কারো কারো স্বভাবই থাকে ‘ভালোর চেয়ে ভালো’ খুঁজে বেড়ানো। অমুক ভালো না, তমুক ভালো। ঠিক আছে, অমুকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না, তমুকের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করো। ক’দিন বাদেই তারা তমুকের চেয়েও ভালো কাউকে খুঁজে পায়। তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে।

এর বাইরে ‘ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব’ কারণটাও আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব কতটা প্রবল তা ঠিক বোঝা যায় না। কারণ সাধারণ মানুষ এখনো ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার পক্ষে। অন্তত পরিবার-সমাজের দিকে তাকিয়ে।

শোবিজ মিডিয়ায়ও মূলত দুই কারণে সম্পর্ক ভাঙে। সেখানে ‘ব্যক্তিত্বের দ্বন্দ্ব’ প্রথম ও প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই দ্বন্দ্ব কাল হয়ে দাঁড়ায়। টেকে না সম্পর্কগুলো।

শোবিজ মিডিয়ায় অভাবের কারণে সম্পর্ক ভাঙার খবর খুব কম। পরিবর্তে ‘স্বভাবের দোষে’ সম্পর্ক ভাঙার হার বেশি। সাম্প্রতিককালে ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেগুলোর বেশিরভাগই ‘স্বভাবের দোষে’ ভেঙেছে।

মানবমনের এ এক রহস্য। একদিন যার হাত ধরে, যার চোখ চেয়ে অনন্তকাল কাটিয়ে দেওয়ার শপথ করে, সেই তাকেই কোনো একদিন ‘অপ্রয়োজনীয়’ মনে হয়ে ওঠে। যাকে একদিন পথের সারথী ভেবে বুকে তোলে, সেই তাকেই কোনো একদিন পথের কাঁটা মনে হয়ে ওঠে।

কেন এমন হয়? মানুষ চিনতে ভুল হয়ে যায় বলে? না কি মানুষ নিয়ত পরিবর্তনশীল বলে? নিজের চাওয়া-পাওয়া বদলে যায়, রুচি বদলে যায়। বদলে যায় নৈতিকতা, আকাঙ্ক্ষা। বদলে যায় ভালোবাসা।

ইদানীং আমাদের শোবিজ মিডিয়ায় সম্পর্ক ভাঙার হার আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। খুচরা আর্টিস্ট তো আছেনই, ভেঙে যাচ্ছে বড় বড় আর্টিস্টদের সম্পর্কগুলোও, যাদের দেখে সাধারণ মানুষ শিখবে, তাদের সম্পর্কগুলোও কেমন ক্ষয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছে ভাঙনের।

ভাঙনের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত রেখেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও নৃত্যশিল্পী চাঁদনী। ২০০৮ সালে তারা বিয়ে করেন। ভালোবাসার বিয়ে। বাপ্পা হিন্দু। মুসলিম পরিবারের চাঁদনীর এই মুসলিম অধ্যুষিত দেশে তাকে বিয়ে করতে কতটা ভালোবাসাবাসি ছিল অনুমান করা যায়। অথচ তুমুল ভালোবাসাময় সেই সম্পর্কটা টিকল না। কাচের মতো ভেঙে গেল।

বাপ্পা নতুন করে বিয়ে করেছেন চলচ্চিত্র পরিচালক দেবাশীষ বিশ্বাসের সাবেক স্ত্রী তানিয়া হোসাইনকে। তানিয়া-দেবাশীষের সম্পর্কেও ভালোবাসাবাসির কমতি ছিল না। ওখানেও ছিল হিন্দু-মুসলিম বাধা জয়ের গল্প। অথচ সে সম্পর্কটিও টেকেনি।

বাপ্পা-তানিয়ার বিয়েতে দৃশ্যত ভেঙে পড়েছেন চাঁদনী। তার হা-হুতাশ চোখে পড়ার মতো। সম্পর্কটি ভেঙে যাওয়ার আগে ‘মেরামত করার’ পর্যাপ্ত সময় তার হাতে ছিল। শোবিজ মিডিয়ার প্রায় সবাই জানত, দীর্ঘদিন থেকেই বাপ্পা-চাঁদনীর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। চাঁদনী হয়তো সম্পর্ক মেরামতের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পারেননি। সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর দোষ দিয়েছেন তানিয়াকে। ঠারেঠোরে যা বলছেন তার মানে এই দাঁড়ায়— তানিয়াই বাপ্পাকে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।

আসলেই কি কাউকে ছিনিয়ে নেওয়া যায়? বাপ্পার মতো পরিণত মস্তিষ্কের একজন মানুষকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়ইবা কী করে? অবশ্যই বাপ্পা নিজেই গিয়েছেন। দেখে-শুনে বুঝে গিয়েছেন। চাঁদনীর অভিযোগ আসলে অভিমানের প্রকাশিত রূপ।

কেউ যদি চলে যায়, আরো ভালো থাকতে চায়, থাকুক না। কারো কাছে যদি নিজের প্রয়োজনটা ফুরিয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে জোর করে তাকে ধরে রাখার চেষ্টা কেন? সে চেষ্টা তো নতুন বিড়ম্বনাই তৈরি করতে পারে শুধু।

চাঁদনীর অভিমান কমেনি। কমেনি যে, তা বোঝা যায় তার সাম্প্রতিক মন্তব্যে। চাঁদনী বলেছেন, ‘বাপ্পা ও তানিয়াকে নিয়ে মাথাব্যথা নেই। আমি নিজেকে নিয়ে, আমার কাজ নিয়ে ভাবতে চাই। আমার যত আফসোস, আমার যত কষ্ট, সবকিছু আমাকে ঘিরেই থাকুক। আমার পরিবারের কষ্ট আমার কষ্ট। আমার বাবা নেই, আমার মা বিধবা, আমি এখন এতিম— এর চেয়ে বড় কষ্ট ও সত্য আর কিছু নেই। আমার ব্যক্তিগত বিষয়গুলো ব্যক্তিগতই থাকুক। আমি যখন বাপ্পার স্ত্রী ছিলাম, তখন আমাদের সম্পর্কগুলো পার্সোনাল রেখেছি। কখনোই উন্মোচন করিনি। করতে চাইও না। অন্যরা যা করছে, এটা নিয়েও মাথা ঘামাতে চাই না।’

তা-ই যেন হয়। অভিমান করেই বলুন আর যেভাবেই, চাঁদনীর উচিত বাপ্পা-তানিয়ার জন্য শুভকামনা করা। ভালোবাসার মানুষগুলো কাছে-দূরে যেখানেই থাকুক, তারা যেন ভালো থাকে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads