• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
হারিয়ে যাওয়া সেই গানের কলি

অনেক শ্রোতাপ্রিয় গানের স্রষ্টা লাকী আখান্দ

সংরক্ষিত ছবি

আনন্দ বিনোদন

হারিয়ে যাওয়া সেই গানের কলি

  • প্রকাশিত ০২ আগস্ট ২০১৮

হাবিব মোস্তফা

ঢাকায় রেডিওর নিজস্ব কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে। টেলিভিশন এলো ১৯৬৪ সালে। সেই হিসেবে বাংলা গানের স্বর্ণযুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় চল্লিশ, পঞ্চাশ ও ষাটের দশককে। কাব্যিক কথা, মেলোডিয়াস সুর ও বাদ্যযন্ত্রের পরিমিত ব্যবহার; এই ছিল তখনকার গানের বৈশিষ্ট্য। কাদের জামেরী (১৯১০-১৯৮৪), আবদুল আহাদ (১৯১৮-১৯৯৪), সমর দাস (১৯২৫-২০০১), ধীর আলি মিয়া (১৯২০-১৯৮৪), সুবল দাস (১৯২৭-২০০৫), দেবু ভট্টাচার্য (১৯৩০-১৯৯৪), আলতাফ মাহমুদ (১৯৩০-১৯৭১), সত্য সাহা (১৯৩৪-১৯৯৯) প্রমুখ সুরস্রষ্টারা তাদের মাস্টার পিস সৃষ্টি করে গেছেন ওই তিন দশকেই।

গান রেকর্ডিংয়ের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ১৯৭৫ সালের দিকে সাফাত আলী নামের জনৈক সুরপাগল ব্যক্তি কাকরাইলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইপসা’। ১৯৭৯ সালে খান আতাউর রহমান ও আজাদ রহমান যথাক্রমে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রুতি ও মুভিটোন। কার্যত গান শোনার জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ক্যাসেট প্লেয়ার বাজার দখল করে ফেলে ১৯৮১ সাল থেকেই। দেশের  প্রথম অডিও ক্যাসেটের শিল্পী এমএ শোয়েবের  প্রথম ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮১ সালের দিকে। পরবর্তীকালে চেনা সুর, সঙ্গীতা, সাউন্ডটেকের জনপ্রিয়তার ধারায় প্রচুর অডিও কোম্পানি গড়ে উঠতে থাকে। আশির দশক থেকে আধুনিক গানের রূপ বদল ঘটতে শুরু করে। সিনেমার গানে মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টের চিত্রটাও তখন এ রকমই। এখন, এই সময়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে অবাকই লাগে, এসব ‘সাদামাটা’ বাদযন্ত্র দিয়েই কালক্রমে তৈরি হয়েছে কালজয়ী সব গান।

সোনালি যুগের আধুনিক গানের ‘আধুনিকত্ব’ বজায় রেখে কথার সৌন্দর্য ও সুরের মাধুর্য একসূত্রে বাঁধতে প্রয়াসী হয়েছেন যে কয়েকজন মিউজিশিয়ান, তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য লাকী আখান্দ (১৯৫৪-২০১৭)। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে এইচএমভিতে (পাকিস্তান) সুরকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে উপমহাদেশের সর্ব কনিষ্ঠ সুরকারের রেকর্ড করেছিলেন লাকী। লাকী আখান্দ, হ্যাপী আখান্দ, এসএম হেদায়েত এই ত্রয়ীর হাতে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছু স্মরণীয় গান। ‘এই নীল মনিহার’, ‘চল না ঘুরে আসি’, ‘কে বাঁশি বাজায় রে...’ কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার মতো গান নয় এসব। সামিনা চৌধুরীর কণ্ঠে লাকী আখান্দের সুরে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা ‘কবিতা পড়ার প্রহর’ উত্তীর্ণ হয়েছে ক্লাসিকে। ‘পলাতক সময়ের হাত ধরে’ (শিল্পী : লাকী আখান্দ), ‘সখি চলো না জলসা ঘরে এবার যাই’ (শিল্পী : সৈয়দ আবদুল হাদী), ‘এই রুপালি গিটার ফেলে’ (শিল্পী : আইয়ুব বাচ্চু), ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’ (শিল্পী : কুমার বিশ্বজিৎ), ‘এই দেশে এক শহর ছিল’ (শিল্পী : নাফিজ কামাল), ‘গভীর হয়েছে রাত এখন গভীর কিছু বলো’ (শিল্পী : আগুন) শিরোনামে লাকী আখান্দের সুর করা এমন আরো বহু গানের  গীতিকার কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, গুণী বাবার সন্তানরা সবসময় তাদের বাবার মতো পরিচিতি পাননি। লোকসঙ্গীতের প্রবাদ মোমতাজ আলী খানের (১৯১৫-১৯৯০) মেয়ে পিলু মমতাজ যেমন প্রতিষ্ঠিত হলেন পপ শিল্পী হিসেবে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কম্পোজার কমল দাশগুপ্তের সন্তান শাফিন বা হামিন কেউ বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেননি, বরং নিজেরাই তৈরি করেছেন জনপ্রিয়তার নতুন সংজ্ঞা। খান আতাউর রহমানের ছেলে আগুনের গাওয়া গান ‘আমার স্বপ্নগুলো কেন এমন স্বপ্ন হয়’ বেদনাক্লিষ্ট প্রশ্নাকারে গুঞ্জরিত হয় বহু যুবকের কণ্ঠে।

বাবার পথে না-হাঁটা আরেক স্বনামধন্য কম্পোজার আশিকুজ্জামান টুলু। বাবা ওস্তাদ মুন্সী রইসউদ্দিন (১৯০১-১৯৭৩)। নব্বই দশকের যে সময়টায় ব্যান্ড সঙ্গীতের তুমুল জোয়ার, তিনি তখন পুরোদস্তুর মিউজিশিয়ান। ওয়েস্টার্ন ধাঁচের গান যেমন কম্পোজ করেছেন, ক্লাসিক্যাল ধাঁচের গান করেছেন সমান দক্ষতায়।

পণ্ডিত বারীন মজুমদারের (১৯২১-২০০১) ছেলে বাপ্পা মজুমদারের আত্মপ্রকাশ তখন ‘ভোর বেলা’ (১৯৯৫) অ্যালবামের মাধ্যমে। পুরোপুরি বাবার ধারা অনুসরণ না করলেও বাপ্পার গায়কী ও কম্পোজিশনে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের একটা প্রচ্ছন্ন রেশ।

অতঃপর প্রিন্স মাহমুদ এলেন-দেখলেন, জয় করলেন। একটা সময় ছিল যখন প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুরে গান গাওয়া সমকালীন শিল্পীদের জন্য ছিল গর্বের ব্যাপার।

লাইট ক্লাসিক্যালের সঙ্গে আধুনিক সুরের মিশ্রণ ঘটিয়ে কীভাবে সব বয়সী শ্রোতাদের মোহিত করা যায়, দেখিয়েছেন নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী।

সানী জুবায়ের এলেন ধ্রুপদী সুরের পথ ধরে, খানিকটা নিঃশব্দে। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে নিজের কথা ও সুরে তৃতীয় অ্যালবাম নির্জন ‘স্বাক্ষর’ (২০০৩)-এর মাধ্যমে সানী জুবায়ের রাখলেন স্বকীয়তার স্বাক্ষর।

গজলসম্রাট মেহেদী হাসানের ইমেজ ও আমেজ নিয়ে এলেন আরিফুল ইসলাম মিঠু। প্রথম অ্যালবামে মিল্টন খন্দকারের লেখা ও শহীদুর রহমানের সুরে মিঠুর গাওয়া ‘চাঁদেরও ঈর্ষা হবে তোমায় দেখে’ অনবদ্য গান।

অস্থির এ সময়টাতে যদি অসুরের সঙ্গে যুদ্ধজয়ী কোনো সুরের দেবীর কণ্ঠে আবার শুরু হয় সোনালি সেই গানের আসর। সেই অপেক্ষায় অগণিত শ্রবণেন্দ্রিয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads