• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
গান কি হৃদয়ে ধারণ করেন?

হৃদয়ে ধারণ করার মতো গান এখন কম হচ্ছে

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

গান কি হৃদয়ে ধারণ করেন?

  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

আনন্দ ও বেদনা একে অন্যের বিপরীত। দুটি জিনিসের সূত্রপাত দুটি ভিন্ন কারণের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত কোনো সুখকর পরিস্থিতি, পরিবেশ মানুষের মাঝে আনন্দের সৃষ্টি করে। আর এই আনন্দে আপ্লুত হয়ে কেউ হাসে, কেউ হাততালি দেয়, কেউবা নাচে। আবার কেউবা সব একসঙ্গে করে। আর শোক, কষ্ট মানুষের অশ্রুপাত ঘটায়, মানুষকে কাঁদায়, মানুষকে নিস্তব্ধ করে দেয়। কিন্তু ধরুন কেউ শোক কিংবা কষ্টে হাততালি দিয়ে হাসল, নাচল, গাইল। তাহলে তার সম্বন্ধে আমরা কী ধারণা পোষণ করব? আমরা নিশ্চয়ই বলব এটা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ না, সে অবশ্যই পাগল। কেননা কোনো সুস্থ মানুষের তো এটা করা সম্ভব না।

কিন্তু এই উল্টো ও উদ্ভট আচরণই করতে দেখা গেল কলকাতার জি বাংলা চ্যানেলের ‘সা রে গা মা পা’ নামক রিয়েলিটি শোতে। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিযোগী নোবেল যখন প্রিন্স মাহমুদের কথা ও সুর করা নগরবাউলখ্যাত কণ্ঠশিল্পী জেমসের ‘বাবা’ শিরোনামের গানটি গাইছিলেন তখন সমস্ত প্রতিযোগী দু’হাত নাড়িয়ে শরীর দুলিয়ে নাচছিলেন। ভাবা যায় এটা? এ গানে যখন মৃত বাবার স্মৃতিচারণ করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে ‘বাবা কতদিন দেখি না তোমায়’, কিংবা ‘হঠাৎ অজানা ঝড়ে তোমায় হারালাম, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল’। তখন তো সম্পূর্ণ পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রত্যেকটি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের মাথা নিচু করে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ার কথা! কিন্তু তারা কী করলেন? সবাই হাসাহাসি, নাচানাচি শুরু করলেন, যেন কোনো আইটেম গান শুনছেন!

কী অদ্ভুত! আচ্ছা, প্রতিযোগীদের না হয় আমি পাগল বলে নিজেকে সান্ত্বনা দিলাম। কিন্তু সঞ্চালক যিশুও তো একই কাজ করছিলেন। তাকে তো পাগল বলে আমি সান্ত্বনা পাই না। কেননা তার মতো একজন পরিপক্ব জ্ঞানবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের এই আচরণ কীভাবে সম্ভব? কিংবা বিচারকের আসনে অধিষ্ঠিত মোনালী ঠাকুরের মতো গায়িকার গানের মাঝখানে দাঁড়িয়ে মুখ দিয়ে হু হু শব্দ করে উল্লাস এবং শান্তনু মৈত্রের এসবে সরব সম্মতি দেখে মনে হলো গানকে কি আসলেই তারা হূদয়ে ধারণ করেন? নাকি আলু-পটোল বেচার মতো সস্তা পেশা মনে করেন? নাকি এদের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে?

এবার আসি নোবেলের মূর্খামির কথায়। তিনি তো শুরুতেই ‘আমি এখন বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী জেমসের বাবা গানটি করব’ বলে নিজেকে মহামূর্খ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেন। গানটির যে একজন স্রষ্টা আছেন, যিনি গানটির কথা ও সুর সৃষ্টি করেছেন। নোবেলের কি একবারও মনে হলো না যে গানটির স্রষ্টা প্রিন্স মাহমুদের নাম বলা অতি আবশ্যক? এমন বেহেড অথর্বের মতো ব্যবহারে আমাকে যারপরনাই অবাক হতে হলো। আরো একটি উল্লেখ্য বিষয় হলো, গানটিকে এভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তিনি যে অমার্জনীয় অপরাধটি করলেন একজন বিচারককেও তো তার বিচার করতে দেখলাম না। এ ছাড়া নোবেলের কণ্ঠে গানটি যে অনেকটাই বেমানান সে বিষয়েও বিন্দুমাত্র প্রতিক্রিয়া দেখলাম না।

বরং তারা প্রতিযোগীদের নাচানাচিতে যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা জোগাচ্ছিলেন তাতে আমার খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হলো প্রতিযোগীদের মতো এরাও মানসিক প্রতিবন্ধী আর একদল মানসিক প্রতিবন্ধীর মাঝে দাঁড়িয়ে কম বোধসম্পন্ন কেউ একজন গান করছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads