• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
মায়ের বুকে ‘এবি’

আইয়ুব বাচ্চু

ছবি : সংগৃহীত

আনন্দ বিনোদন

মায়ের বুকে ‘এবি’

  • জিয়াউল জিয়া
  • প্রকাশিত ১৯ অক্টোবর ২০১৮

সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীত জীবনের বাইরেও অনেক ঘটনা আছে। তার কাছের মানুষরা সেসব গল্প জানেন। অনেক মিউজিশিয়ানকে ঢাকায় থাকা-খাওয়া ও কাজের ব্যবস্থা করে শিল্পী পরিচিতি এনে দিয়েছেন তিনি। এরা সংখ্যায় কম নয়। এতেই আইয়ুব বাচ্চুর হূদয়ের বিশালতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আরেকটি বিষয়ে তার হূদয়ের গভীরতা খুঁজে পাওয়া যায়। তা হলো মার প্রতি তার টান। মাকে অসম্ভব ভালোবাসতেন তিনি। নিয়মিত খোঁজ নিতেন মার। মায়ের যা লাগত সবকিছু তিনিই ব্যবস্থা করে দিতেন। মায়ের প্রতি এতটা টানের নেপথ্যের কারণ, মা তাকে মিউজিশিয়ান হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিলেন নানাভাবে। তার বাবা বেশ ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তিনি গান-বাজনা পছন্দ করতেন না। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে এখানে সেখানে শো করতে হতো তাকে। বাসায় ফিরতে রাতও হতো বেশ। বাসার বাড়ির গেট বন্ধ করে দিতেন বাবা। মা ঠিক জেগে থাকতেন ছেলের অপেক্ষায়। আইয়ুব বাচ্চু এসে সাঙ্কেতিক শব্দে ডাকতেই দরজা খুলে দিতেন মা। খেতে দিতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতেন। এ রকম ঘটনা দিনের পর দিন ঘটেছে। ছেলেকে এভাবে প্রশ্রয় দেওয়ার দোষে স্বামীর মুখে হাজারো কথাও শুনেছেন তিনি। তারপরও মা চেয়েছেন তার ছেলে বড় গায়ক হোক। সারা দেশের মানুষ তাকে চিনুক। তার গান সারা দেশের আনাচে কানাচে বাজুক।

এরপর এক সময় ক্যারিয়ারের নেশায় মাকে ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান এবি। কিন্তু মাকে প্রতি মুহূর্তে মিস করতেন তিনি। মা-ও চট্টগ্রামে বসে ছেলের জন্য হাত তুলে দোয়া করতে ভোলেননি। মায়ের দোয়া বিধাতার দরবারে সরাসরি পৌঁছে। ব্যাস, এবি হয়ে উঠলেন ব্যান্ড মিউজিকের বরপুত্র। নব্বই দশকের ব্যান্ড সঙ্গীতের শীর্ষ জনপ্রিয় শিল্পী তিনি। তাকে ছাড়া না হয় অ্যালবাম, না হয় মিশ্র অ্যালবাম, না হয় কনসার্ট। এই ঈর্ষণীয় সাফল্যের পেছনে মায়ের অবদানের কথা এক মুহূর্তও ভোলেননি তিনি। তাই তো সময় পেলেই চলে যেতেন মায়ের কাছে। এই বয়সেও মায়ের কোলে মাথা রেখে শান্তির ছায়া খুঁজতেন।

ঢাকায় বসেই মায়ের খোঁজ-খবর নিতেন নিয়মিত। সব সময়ই মাকে বলতেন, ‘মা, আপনার কি লাগবে?’ মা এই সঙ্গীতপাগল ছেলের থেকে কিছুই চাইতেন না। তারপরও যেটা যেটা পছন্দ হতো সব কিনে পাঠাতেন মায়ের জন্য। এরপরেই এই মায়ার সম্পর্কের মাঝে বিচ্ছেদের সুর।

মানুষ হারিয়ে যায়। হারিয়ে গেলেন আইয়ুব বাচ্চু’র মা-ও। কিন্তু এই বিয়োগ মানতে পারলেন না এবি। কান্না হয়ে উঠল সঙ্গী। ঝাপসা চোখে শুধু যেন মায়ের ছবিই ভাসে। এই কষ্ট অসহ্য, অবর্ণনীয়! এবি হয়ে উঠলেন অশান্ত-অস্থির। এই অস্থিরতা ফুটে উঠল গানে-‘ওই দূর আকাশের তারা রে, বলে দে না কোনটা আমার মা’। গানটি লিখে সুর করা শেষ করতে করতে মধ্য রাত হয়ে গেল। কিন্তু, সেই সময়ই গানটি রেকর্ড করতে হবে। কারণ একটাই, এটা যে মাকে নিয়ে গান। শব্দ প্রকৌশলী চারুকে ডেকে আনলেন এবি কিচেনে। শুরু হলো গান রেকর্ডের পালা। শেষ হলো গান। গানটি মানুষের হূদয় ছুঁয়ে গেল।  

এরপর সারা রাত গাড়ি চালিয়ে যখন তখন ছুটে গেছেন মায়ের কবরের কাছে। চোখের পানি ফেলে মাগফিরাত চেয়েছেন বিধাতার কাছে। রাতের আকাশে তারাগুলোর দিকে তাকিয়ে খুঁজে ফিরেছেন মাকে। আজ তিনি নিজেও তারা হয়ে গেলেন। তারারা একজন অন্যজনকে চিনতে পারে। এখন আমার মাকে খুঁজে পেতে কষ্ট হবে না আইয়ুব বাচ্চুর। মায়ের পাশেই থাকবেন তিনি। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তিতে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবেন। আর রাতের বেলা জ্বলে জ্বলে ভক্তদের হূদয়ে বিষাদের জন্ম দেবেন। ভালো থাকুন, জ্বলে থাকুন মহাতারকা আইয়ুব বাচ্চু!   

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads