• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
আইয়ুব বাচ্চুকে লাখো ভক্তের বিনম্র শ্রদ্ধা

আইয়ুব বাচ্চুকে লাখো ভক্তের বিনম্র শ্রদ্ধা

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

আইয়ুব বাচ্চুকে লাখো ভক্তের বিনম্র শ্রদ্ধা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ অক্টোবর ২০১৮

হাতে ফুল, চোখে অশ্রু আর বুকে পরম আপনজন হারানোর বেদনা নিয়ে গতকাল শুক্রবার কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুকে শেষ বিদায় জানাতে সমবেত হয়েছিলেন লাখো মানুষ। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা ও চোখের জলসিক্ত ভালোবাসায় অন্যভুবনে পাড়ি জমালেন বাংলা ব্যান্ডের প্রাণপুরুষ আইয়ুব বাচ্চু। কেউ আসেন ফুলের তোড়া হাতে, কেউ শরতে বাগানে সদ্য ফোটা কয়েকটা তাজা ফুল নিয়ে, কেউ এসেছিলেন শিল্পী ও গিটার জাদুকরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ হিসেবে পিঠে রুপালি গিটার ঝুলিয়ে। তার মরদেহের কফিন ঢেকে যায় অকৃত্রিম ভালোবাসার ফুলে ফুলে।

আইয়ুব বাচ্চুর গানের কথার মতো অশ্রু গোপন করে রাখতে পারেননি অনেক ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী। তাদের কান্না ও বেদনার অনুভূতিতে শহীদ মিনারের চারপাশের শোকার্ত পরিবেশ আরো ভারী হয়ে ওঠে। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের কান্নায় অনেকের চোখ ভিজে যায়। জীবনের সব আয়োজন পেছনে ফেলে আকাশে উড়াল দিলেও দেশের ব্যান্ডসঙ্গীতে যেমন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন ‘ফেরারি মনের’ এ শিল্পী, তেমনই তিনি ভক্ত, অনুরাগী ও সহকর্মীদের মনে যে বহুকাল শ্রদ্ধা, ভালোবাসার আসন দখল করে রাখবেন, এরই যেন শোকাবহ আবহে গতকাল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। গত বৃহস্পতিবার মাত্র ৫৬ বছর বয়সে আইয়ুব বাচ্চু মারা যান। তার আকস্মিক মৃত্যুতে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় মরদেহ : ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল সাড়ে ১০টার একটু বেশি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রিয় শিল্পীর নিথর দেহ। প্রিয় মানুষ ও আপনজন আইয়ুব বাচ্চু যেন একটু আগেই চলে গেলেন। বেলা যত গড়াতে থাকে তত বাড়তে থাকে ভক্তের সমাগম। হাজারো মানুষের সমাগম হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে। শেষবারের মতো ব্যান্ড লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাকে বিদায় দিতে হাজির হন অগণিত অনুরাগী। রাজনৈতিক নেতারাও শেষবারের মতো প্রিয় শিল্পীকে দেখতে বেদনার্ত হয়ে ছুটে আসেন শহীদ মিনারে।

সেখানে স্থাপিত শ্রদ্ধা নিবেদনের মঞ্চে শিল্পীর কফিনের পাশে তার স্ত্রী, ছোট ভাই মাসুদুর রহমানসহ আত্মীয়স্বজন ও সতীর্থ শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় বাচ্চুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধার পর্ব।

শহীদ মিনারে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত শিল্পীর কফিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অগণিত মানুষ সারিতে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে শ্রদ্ধা জানান। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শহীদ মিনারে সাড়ে সকাল ১০টা থেকে হয় নাগরিক শ্রদ্ধা নিবেদন।

গভীর বেদনায় ভাষা থেমে যায় : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর ফাঁকে ফাঁকে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিচারণ ও শিল্পীর কর্মজীবন নিয়ে বক্তব্য রাখেন অনেকে। এ সময় বন্ধু, স্বজন ও প্রিয়জন হারানোর গভীর বেদনায় অনেকের বাক্য আটকে যায়।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ব্যান্ডসঙ্গীতকে আইয়ুব বাচ্চু এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তার এই সময়ে চলে যাওয়া অকাল ও আকস্মিক। তার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।’    

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘আমার অন্যতম প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন বাচ্চু। আমি তাকে হারালাম। বাংলাদেশের কোটি কোটি সঙ্গীত অনুরাগী একজন মহান শিল্পীকে হারাল।’

এ ছাড়া নাট্য ও চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিরউদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, শিল্পী ফকির আলমগীর, কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, শিল্পী টিটু প্রমুখ স্মৃতিচারণ করেন। আবৃত্তিশিল্পী ড. শাহাদাত হোসেন নিপু পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন।

জানাজায় মানুষের ঢল : কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ও জুমার নামাজের পর দুপুর ২টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে শিল্পীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১টার দিকে শহীদ মিনার থেকে শিল্পীর কফিন নিয়ে জাতীয় ঈদগাহের উদ্দেশে রওনা হন সংস্কৃতি অঙ্গনের ব্যক্তিত্বরা।

জানাজার নামাজে বিভিন্ন দলের নেতা, প্রয়াত শিল্পীর স্বজন-বন্ধুরা, সঙ্গীতশিল্পী, বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। অংশ নেন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীরা। এরপর আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার মগবাজারে তার নিজের স্টুডিও এবি কিচেনে। বিকাল ৩টার দিকে মগবাজারের কাজী অফিস গলির মসজিদের সামনে দ্বিতীয় জানাজা হয়। এরপর বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আই চেতনা চত্বরে অনুষ্ঠিত তার তৃতীয় জানাজা।

জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জানাজার পর জানানো হয়, শিল্পীর মরদেহ চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে আজ শনিবার জানাজার নামাজ শেষে মায়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফন করা হবে।

যারা অংশ নেন শেষ বিদায়ের আয়োজনে : শহীদ মিনারে প্রথম শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতারা শ্রদ্ধা জানান। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ছাত্রলীগ (জাসদ সমর্থিত), বৌদ্ধ সংস্কৃতি পরিষদ, ঢাকা ফাউন্ডেশন, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতি, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, শিল্পী ড. ইনামুল হক, শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, সংস্কৃতি সচিব নাসিরউদ্দিন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কবিতা পরিষদ, প্রাচ্যনাট, সঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, সোলস, এলআরবি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, একতা কালচারাল সোসাইটি, পথনাট্য পরিষদ, একুশে টিভি পরিবার, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ বিপুল সংখ্যক সামাজিক-সাংস্কৃতিক, সঙ্গীত, যন্ত্রসঙ্গীত বিষয়ের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানান সঙ্গীতশিল্পী, নাট্যকার, অভিনেতা, নাট্যনির্মাতা ও বিভিন্ন ব্যান্ড দলের শিল্পীরা। এ ছাড়া শত শত সাধারণ মানুষ ও শিল্পীর ভক্ত নারী-পুরুষ এবং তরুণ-তরুণীরা কফিনে পুষ্পের তোড়া অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

 

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads