• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
শো মাস্ট গো অন

সদ্য প্রয়াত ব্যান্ডশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

শো মাস্ট গো অন

  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

অভিনয়শিল্পীরা মেকাপের প্রলেপে ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট চাপা দিয়ে অভিনয়ে মেলে ধরেন নিজেকে কথাটা জানা ছিল। কিন্তু কণ্ঠশিল্পীকেও যে তার কণ্ঠের ভাঁজে ব্যক্তিগত শোক-দুঃখ চাপা দিয়ে গান শোনাতে হয় সেটা দেখলাম আঠারো তারিখে বরগুনায় অনুষ্ঠিত উন্নয়ন কনসার্টে। কনসার্টটি সব কণ্ঠশিল্পীর জন্যই কঠিন মুহূর্ত হলেও জেমসের জন্য যেন ছিল এক অগ্নিপরীক্ষা। বাংলা ব্যান্ডসঙ্গীতকে যার সঙ্গে একসঙ্গে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন এতদূর, সেই আইয়ুব বাচ্চু যখন প্রাণহীন নিথর দেহে ঘুমিয়ে আছেন স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে ঠিক সেই মুহূর্তে জেমসকে হাজারো দর্শকের মনোরঞ্জনে গান শোনাতে হবে বরগুনার উন্নয়ন কনসার্টে! যাত্রাপথেই শুনেছেন প্রিয় সহকর্মী আর নেই। সবাই যখন শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটিকে দেখতে স্কয়ারের পানে ছুটছিলেন তখন তাকে যেতে হচ্ছিল বরগুনায় উন্নয়ন কনসার্টে। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি আসতে পারছিলেন না শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটিকে দেখতে। এর চেয়ে যন্ত্রণা আর কী হতে পারে?

সত্যি, জীবন থেকে ছুটি পাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত শিল্পীদের ছুটি নেই। প্রিয় মানুষ হারানোর শোকের দিনেও তাদের আনন্দ দিতে হয় সবাইকে। বরগুনার কনসার্ট তার একটি কঠিন দৃষ্টান্ত। তাদের শুক্র নেই, শনি নেই, ঈদ নেই, পূজা নেই, মৃত্যু  নেই, জন্ম নেই, তাদের গেয়ে যেতেই হবে। ব্যক্তিগত যত শোক-বেদনা আছে চাপা দিয়ে রাখতে হবে কণ্ঠের ভাঁজে। তবুও তাকে গাইতে হবে। গাইতে পারছ না?  প্রয়োজনে পাঁচ-দশ মিনিট ব্রেক নাও। একটু জিরোও, একটু কাঁদো, কেঁদে হালকা হও। এরপর আবার উঠে যাও মঞ্চে। তোমার জন্য অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ। তাদের বোঝাবে কে? ওরা তোমার ভক্ত, ওরা তোমার গান শুনতে চায়। আগে ওদের গান শোনাও আর ওদের আনন্দ দিতে ভুলে যাও তোমার সব হারানোর ব্যথা। একজন শিল্পীর কী এক দায়বদ্ধতা, যার কাছে তুচ্ছ তার সমস্ত ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া! এমন কঠিন পেশা পৃথিবীতে আর আছে কি না আমার জানা নেই।

এ পেশার দায়বদ্ধতার কাছে হেরে যায় ব্যক্তিগত অবাধ্যতা। এ পেশার দায়বদ্ধতার কাছে হেরে যায় মনের অপারগতা। আর তাই তো জেমসকে বরগুনায় হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে গিটার বাজাতে হয়। গাল বেয়ে পড়া জল ঢাকতে হয় দীর্ঘ চুলে মুখ ঢেকে। সবাইকে বোঝাতে হয়, ‘আমি ঠিক আছি’। তাই তো বাপ্পা মজুমদারকে ধরা গলায় গাইতে হয় হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রের গান। ধরা গলায় আজ মনটা ভালো নেই বলতে গিয়েও আবার গেয়ে উঠতে হয়, ‘আমি তোমাকেই বলে দেব কী যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে’। তবুও গেয়ে যেতে হয়। আচ্ছা, তখন কি তাদের মনে হয় না মানুষকে গান শোনানোর দায়িত্ব নেওয়াটা কতটা কষ্টের, মানুষকে গান শোনানোর দায়িত্ব নিলে কতটা অবহেলিত রাখতে হয় নিজেকে?

বরগুনার এই অনুষ্ঠানই প্রমাণ করে শিল্পীরাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্রমিক। এই শ্রমিকদের কষ্টবোধ থাকতে নেই, এই শ্রমিকের দুঃখবোধ থাকতে নেই। তাদের একটাই কাজ, ‘গেয়ে যেতে হবে, হাজারো মানুষ আছে অপেক্ষায়’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads