• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জেমসের দায়িত্ব যেন বেড়ে গেল

ব্যান্ডশিল্পী জেমস

সংগৃহীত ছবি

আনন্দ বিনোদন

জেমসের দায়িত্ব যেন বেড়ে গেল

  • প্রকাশিত ২৭ অক্টোবর ২০১৮

রাফিউজ্জামান রাফি

বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ বলতে আমরা নব্বইয়ের দশককেই বুঝে থাকি। নগর থেকে গ্রামে তরুণরা বুঁদ হয়ে আছে ব্যান্ডসঙ্গীতে। সেসময় এলআরবি, ফিলিংস, আর্ক, মাইলস, ফিডব্যাকসহ অন্যান্য ব্যান্ডের আগ্রাসনে সাইড হয়ে গিয়েছিল হিন্দি গানের আগ্রাসন। তবে এতগুলো ব্যান্ডের অজেয় যাত্রার মাঝে আরো অজেয় ছিলেন এলআরবি ও ফিলিংসের আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস।

মানুষজনকে তাদের চেনাতে আর ব্যান্ডের নাম উচ্চারণ করতে হতো না। কেননা ততদিনে তারা নিজ প্রতিভার আগ্রাসনে ওয়ান ম্যান শোতে পরিণত হয়েছেন। আইয়ুব বাচ্চু গিটারে ঝঙ্কার তুলে বিরহী যুবকদের শোনাতেন ফেরারি মন নিয়ে দুঃখ ফেরি করার গল্প, আর জেমস এসে তাদের সান্ত্বনার সঙ্গে সঙ্গে দুঃখ ভুলে জেগে উঠতে বলে যেতেন ‘কান্নায় লাভ নেই, কান্নায় হবে না’। এই দুই পান্ডব শ্রোতাদের সঙ্গীতের তৃষ্ণা মেটানোর দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ব্যান্ড সঙ্গীতকে পথ হারাতে দিলেন না।

ততদিনে তাদের তৈরি সুমসৃণ পথে এসে দাঁড়ালেন আরো অনেক ব্যান্ডশিল্পী। এরা সবাই এলেন, দেখলেন, জয় করলেন কিন্তু জয় করেও কেন যেন হারিয়ে গেলেন। আর বিজয় রথে বরাবরের মতোই স্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত হয়ে আইয়ুব বাচ্চু ও জেমস দুজনই বাকি সমস্ত ব্যান্ডের অভাব নিরলসভাবে পূরণ করতে লাগলেন। এরপরও অনেক ব্যান্ড এলো-গেল। তবে এরা বাঁধা পড়ে রইল একটি গণ্ডির মধ্যে। আইয়ুব বাচ্চু জেমস যে বন্ধুর পথ মসৃণ করেছিলেন সেই মসৃণ পথে কেন যেন কেউ আর দাঁড়াতে পারলেন না।

এভাবে কেটে গেল আরেকটি দশক, ততদিনে মসৃণ পথটি বন্ধুর হয়ে গিয়েছে। হিন্দি গানের আগ্রাসন বেড়ে গেল, কলকাতার বস্তাপচা গান এসে শ্রোতাদের রুচির বারোটা বাজিয়ে দিল। এদেশের ব্যান্ডসঙ্গীত যেন আঁধারে নিমজ্জিত। এবার এক সময়ের ব্যান্ড করা ছেলেরা এসে আধুনিক গান করা শুরু করল, তারা জনপ্রিয়তাও পেল কিন্তু আইয়ুব ও জেমসের যে বড় ফ্রেম সেই ফ্রেমের যেন এককোনায় পড়ে রইল। কেউবা হতাশ হয়ে পালাল আবার কেউ কাজ কমিয়ে দিল। আর এর পরে আগমন যাদের তারা যেন স্বীকার করেই এলো শ্রোতাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া রুচিকেই হাতিয়ার হিসেবে নিতে হবে। শ্রোতাকে নিজের মতো করা তো দূরের কথা তারা হয়ে গেলেন শ্রোতাদের মতো। ফলাফল আরো ভয়াবহ। শ্রোতাদের রুচি নষ্ট হওয়ার পরও তারা যেন আবার ফিরতে চাইছিল নব্বইর দশকে। বর্তমান গায়ক-গায়িকাদের গান যেন তাদের মনের ভাব বুঝছিল না। তারা ঘুরে ফিরে সেই নগর বাউল আর এলআরবির গানের কাছেই ফিরে যাচ্ছিলেন।

এদিকে নতুন গায়ক-গায়িকারা মেরুদণ্ডহীনের মতো হিন্দি গান কণ্ঠে নিলেন শ্রোতাদের কাছে পৌঁছাতে। আর ততদিনে জেমস জয় করেছেন ভারতবর্ষ। আইয়ুব বাচ্চুও বাতি জ্বেলে রেখেছিলেন শ্রোতাদের আশার।  অসংখ্য ব্যান্ডের অভাব দুজনই পূরণ করার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে চলছিলেন। গত আঠারো তারিখ তিনিও দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কোটি ভক্তদের কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। রয়ে গেলেন জেমস। এত বড় দায়িত্ব ভাগাভাগি করার আর কেউ রইল না। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব যেন তার কাঁধে এসে পড়ল। দুষ্ট ছেলের দলের পাশাপাশি সকল গান-পাগলের দলের দায়িত্ব এবার নিতে হবে তাকে। বরগুনার কনসার্টে কোনোদিন হাসতে না দেখা জেমসকে সবাই কাঁদতে দেখেছে। সে কান্না একা হয়ে যাওয়ার কান্না। দায়িত্বটা যে এবি হারানোর দিনই নিতে হবে, সেই যন্ত্রণার কান্না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads