• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

আনন্দ বিনোদন

মেহরীনের সঙ্গে এক সন্ধ্যায়

  • সালেহীন বাবু
  • প্রকাশিত ০৮ নভেম্বর ২০১৮

কার্তিকের সন্ধ্যা। তার কয়েক ঘণ্টা আগে এক পশলা বৃষ্টি। সেই বৃষ্টির প্রভাবেই হালকা শীত শীত অনুভূত হচ্ছিল। সে এক অন্যরকম মুগ্ধতা ছড়ানো উপভোগ্য পরিবেশে গানে গানে উষ্ণতা ছড়ান এদেশের পপসঙ্গীত শিল্পী মেহরীন। ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের আয়োজনে গত শুক্রবার গুলশান ক্লাবে আয়োজন করা হয় তার একক এই সঙ্গীত সন্ধ্যাটি। কিছুদিন আগে ছিল মেহরীনের জন্মদিন। সেই উপলক্ষটা কেন্দ্র করে তার এই একক আয়োজন।

শুদ্ধতা ও শান্তির প্রতীক সাদা পোশাক পরে মঞ্চে আসেন মেহরীন। শুরুতেই শুভেচ্ছা বিনিময় করে গাইলেন দেশের গান ‘ধন ধান্য পুষ্পভরা’। এর পর গানের ঝাঁপি খোলেন তিনি। শোনালেন গোটা বিশেক বাংলা, ইংলিশ ও হিন্দি গান। রবি ঠাকুর, নজরুল ও আব্বাস উদ্দীনের গানও ছিল একটি করে।

তার একক সন্ধ্যা শেষ হয় হলভর্তি শ্রোতার মুহুর্মুহ করতালি আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে। স্বভাবতই চোখে-মুখে ঘোর লাগা অনুভূতি। সেই ঘোর নিয়ে শ্রোতাদের সঙ্গে সেলফিতে মেতেছিলেন তিনি। তারই ফাঁকে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপ। আলাপে জানালেন তার ২২ বছরে গানের পথচলা। প্রথমেই কথা উঠল নতুন অ্যালবাম ‘বন্ধুতা’ নিয়ে। তিনি জানান, ‘এরই মধ্যে অ্যালবাম সম্পন্ন হয়েছে। প্রচ্ছদের কাজ প্রায় শেষ। এই অ্যালবামের প্রচ্ছদ এঁকেছেন চিত্রশিল্পী আবদুল মান্নান। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে ইউটিউব চ্যানেল গো গার্ল-এ অ্যালবামটি অবমুক্ত করে দেবেন শ্রোতাদের জন্য।’

অ্যালবামটি সাজিয়েছেন দুই কবি রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলের পাঁচটি করে মোট ১০টি গান দিয়ে।  রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বাণী কণ্ঠে  ধারণ করার অনুভূতি প্রকাশ করে মেহরীন বলেন, ‘আব্বাস উদ্দীন একাডেমির প্রথম ব্যাচের ছাত্রী ছিলাম আমি। তখন থেকে আমার শিক্ষকরা উৎসাহ দিতেন। তারা বলতেন, গানের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা নেই। অনেকেই রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ করেন। অনেকেই আবার নজরুলের সুরে বিমোহিত থাকেন। আমি চিন্তা করলাম কবিদের নান্দনিক বিভেদকে কীভাবে বন্ধুত্বে রূপান্তর করা যায়। নমস্য এই দুই কবি নিয়ে ভাবলাম কি করা যায়। অন্বেষণ করা শুরু করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম দুই কবির গান নিয়ে একটি অ্যালবাম করব। তারপর কি আর, করে ফেললাম।’

আড্ডায় গতানুগতিক প্রশ্ন-উত্তরের বাইরে ব্যক্তিজীবনের টুকরো কথা বলেন মেহরীন। বলেন, ‘বাবা যখন খুব অসুস্থ তখন বিমর্ষ থাকতাম। বিমর্ষ কাটাতে শাহবাগে নজরুলের সমাধি পাশে চুপচাপ বসে থাকতাম। বাবাকে নিয়ে চিন্তার রেশে মন যখন তটস্থ তখনই এখানে এসে একটু হলেও আলাদা মানসিক প্রশান্তি খুঁজে পেতাম।’

ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে নতুন শিল্পী উঠে আসছে। রিয়েলিটি শো থেকে উঠে আসা শিল্পীদের ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এভাবে নতুন শিল্পী তৈরির কারণে অনেকেই এখন সঙ্গীতের দিকে ঝুঁকছেন। এটা ভালো দিক। সুরের পাশাপাশি গানকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন।’ একজন শিল্পীর গানকে পেশা হিসেবে নেওয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখেন মেহরীন। তবে সব ক্ষেত্রে বিষয়টি ইতিবাচক নয় বলে মনে করেন তিনি। মেহরীন বলেন, ‘রিয়েলিটি শোয়ের মাধ্যমে যারা উঠে আসছেন তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কারণ তারা এখন ইউটিউবের প্ল্যাটফর্ম ভালো বোঝেন। নিজেরাই জনপ্রিয় হয়ে আয়ের পথ বের করে নেন। কিন্তু আগের যারা সিনিয়র শিল্পীরা আছেন তারা এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আজ তারা না পাচ্ছেন অর্থ, এমনকি তারা তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকুও পাচ্ছেন না।’

শিল্পীদের আশা-হতাশার কথার ফাঁকে তোলেন শিল্পীদের সম্মান, অর্থ-বৈভবসহ নানা প্রসঙ্গও। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কনসার্ট করেছি। সে সব দেশে শিল্পীদের বেশ মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশেষ করে এমআইপি (মোস্ট ইমপর্ট্যান্ট পারসন) সুবিধা দেওয়া হয়। সরকার থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন শিল্পীরা। বাংলাদেশে কয়েক খাতে এ রকম প্রথা থাকলেও শিল্পীদের ক্ষেত্রে এ রকম কোনো সুবিধা নেই। আমি মনে করি এ রকম ব্যবস্থা করা দরকার। অন্যরা পেলে আমরা কেন পাব না। আমরাও তো মানুষের জন্য, দেশের জন্য গাই।’

মেহরীন গানের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন। নেমে পড়েছেন দৃষ্টিহীনদের চোখের দৃষ্টি প্রদীপ জ্বালাতে। নিজেও মরণোত্তর চক্ষুদান করেছেন। তাড়াহুড়ো, অস্থিরতা কখনোই ছিল না মেহরীনের ২২ বছরের গানের ক্যারিয়ারে। তার সমসাময়িক বা তার জুনিয়র অনেকেই গান নিয়ে লম্বা রেসের দৌড়ে থমকে গেলেও মেহরীন তার সপ্রতিভ ও স্বাচ্ছন্দ্য নিয়েই এগিয়েছেন নিজস্ব ভঙ্গিতে। কী মঞ্চ, কী পরিবারে, কী মানবতার সেবায়—সর্বক্ষেত্রেই মেহরীন একই রকম, যা করেন মন থেকে করেন। ভালোলাগা, ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ থেকে করেন। তাই তো কোনো কিছু থেকে প্রাপ্তি খোঁজেন না। খোঁজার চেষ্টাও করেন না। তার সম্পর্কে এমনটা মন্তব্য করেন দর্শক সারিতে বসে থাকা দেশের প্রখ্যাত লোকসাধক মুস্তাফা জামান আব্বাসী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads