• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

ছেলেবেলা

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

‘জিনিয়াস’ বলতে যা বোঝায় ছেলেবেলায় তা কখনো ছিলেন না আইনস্টাইন। ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’- এ প্রবাদ বাক্যটি আইনস্টাইনের জীবনে নিদারুণভাবে ব্যর্থই বলতে হবে। ক্লাসের সেরা ছাত্র ছিলেন না আইনস্টাইন। বরং স্কুল-কলেজের রেকর্ড যদি বিবেচনা করা হয়, নিতান্তই মাঝারি গোছের তার সমস্ত রেকর্ড। আইনস্টাইন এমনিতেই ছিলেন একটু ঢিলেঢালা; এমনকি শৈশবে কথা বলাও শিখেছিলেন একটু দেরি করে। সাত বছর পর্যন্ত বাড়িতেই পড়াশোনা চলে তার। স্কুলের পড়াশোনায় মোটেও মনোযোগী ছিলেন না। একা একা ঘুরতেন, আপন মনে কী যেন ভাবতেন। রেজাল্টের চেয়েও গুরুতর কিছু সমস্যা নিয়ে তার বাবা-মা চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, আইনস্টাইন অন্য ছেলেদের সঙ্গে একেবারেই মেশে না, পড়া মুখস্ত বলতে পারে না, আর প্রশ্ন করলে অনেকক্ষণ লেগে যায় জবাব দিতে। আবার প্রায়ই জবাব দেওয়ার আগে কী যেন বিড়বিড় করে। প্রথম দুটো লক্ষণ না হয় তাও মানা গেল, কিন্তু তৃতীয়টা? ওটির কারণ আর কিছুই নয়- বেতের বাড়ির ভয়। ছোট্ট আইনস্টাইন ভাবলেন, ভুল‌ উত্তর দিয়ে স্যারের হাতের বেতের বাড়ি খাওয়ার চেয়ে বরং সতর্ক থাকাই তো ভালো! কাজেই ক্লাসে সবার সামনে উত্তর দেওয়ার আগে স্বগতোক্তি করে নিজের কাছেই উত্তরটা পরিষ্কার করে নেওয়া- এই আর কী!

ছেলেবেলায় বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশতে না পারলে কী হবে- একটা কিন্তু খুব ভালো গুণ ছিল তার। একগুয়ে স্বভাব। কোনো একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকে গেলে তার শেষ পর্যন্ত না দেখে তিনি ছাড়তেন না। একবার বাড়িতে ভাই-বোন সবাই মিলে মেতে উঠেছিল তাসের ঘর বানানোর খেলায়। চারতলার বেশি আর কেউই বানাতে পারছিল না। ঠিক এ সময় খেলায় যোগ দেন আইনস্টাইন। প্রথম প্রথম চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই ভেঙে পড়ে তার তাসের ঘর। ব্যস রোখ চেপে গেল আইনস্টাইনের। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে করে যে ঘরটি বানালেন আইনস্টাইন- তা ছিল চৌদ্দ তলার!’

কিন্তু চৌদ্দতলার তাসের ঘর বানানো এক কথা, আর পড়াশোনায় ভালো হওয়া আরেক। স্কুলের হেডমাস্টার সাহেব তার বাবার কাছে লিখেছিলেন, ‘দেখুন বাপু, আপনার ছেলে একটু হাবলু টাইপ। ওকে নিয়ে এত আশাবাদী হয়ে লাভ নেই। মনে হয় না জীবনে কোনো কিছুতেই সফল হবে আপনার ছেলে! কালের কী নির্মম পরিহাস- সেই ‘হাবলু টাইপ’ আইনস্টাইনকেই আজ কিন্তু মানুষ মনে রেখেছে, আর কালস্রোতে হারিয়ে গেছে ওই অর্বাচীন ‘জ্ঞানী’ হেডমাস্টার।

স্কুল জীবনটা ছিল আইনস্টাইনের জন্য বিভীষিকাময় পীড়নকেন্দ্রের মতো। স্কুলের ওই ভয়ার্ত অভিজ্ঞতার ছাপ আইনস্টাইনের পরবর্তী জীবনে সবসময়ের জন্যই বোধ হয় থেকে গিয়েছিল। বুড়ো বয়সে এক সাক্ষাৎকারে আইনস্টাইন তাই বলেছিলন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক স্কুলের স্যারদের মনে হতো যেন মিলিটারি সার্জেন্ট, আর জিমনেশিয়াম স্কুলশিক্ষকদের মনে হতো লেফটেন্যান্ট’।

তবে, ছেলেবেলায় আইনস্টাইনের ওপর তার মায়ের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। তিনি ছেলেকে জ্যামিতি বা ক্যালকুলাস শেখায় কোনো সাহায্য না করলেও শিখিয়েছিলেন বেহালা বাজানো। এই বেহালা এবং সর্বোপরি সঙ্গীতপ্রীতি আইনস্টাইনের শেষ দিন পর্যন্ত বহাল ছিল। তার জীবনীকার ডেনিস ব্রায়ান ‘আইনস্টাইন : এ লাইফ’ (১৯৯৬) গ্রন্থে আইনস্টাইনের সঙ্গীতপ্রিয়তার একটি ঘটনা উল্লেখ করেন এভাবে- ‘একবার আইনস্টাইন তার মধ্যবয়সে যথারীতি হেলতে-দুলতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হাতে ছিল তার প্রিয় বেহালাখানা। হঠাৎ শুনলেন রাস্তার ওপারের এক বাসা থেকে পিয়ানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। আইনস্টাইন দৌড়ে বাসার কাছে চলে আসতে আসতে মহিলাকে বললেন- থেম না, থেম না, বাজাতে থাক! বলতে বলতেই বাক্স থেকে নিজের বেহালাটি বের করে ফেললেন, আর মহিলার সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে বাজাতে লাগলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads