• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সংগৃহীত

ফিচার

আইনস্টাইনের প্রেমসূত্র

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০১৮

আত্মভোলা স্বভাব আর জটিল বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার মধ্যেও প্রেমহীন ছিলেন না আইনস্টাইন। বলা যায়, পৃথিবীর সূক্ষ্মতম এই বিষয়টিতেও তিনি ছিলেন সফল। তা না হলে কি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একমাত্র নারী শিক্ষার্থী এবং তিন বছরের বড় মিলেভাকে নিজের করে নিয়েছিলেন? যদি বলা হয়, আইনস্টাইন ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রেমিক তবে আপনার চোখ কপালে উঠবে তো? তবে, জানুন তার প্রেমসূত্রও-

১৮৯৬ সাল। একুশ বছরের সার্বিয়ান তরুণী মিলেভা ম্যারিচ সুইস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফেডারেল পলিটেকনিকে ভর্তি হন। তিনি আইনস্টাইনের বন্ধু ও সহকর্মী ছিলেন। ঠিক একই সময় আইনস্টাইনও সেখানে ভর্তি হন। মিলেভার চেয়ে সাড়ে তিন বছরের ছোট ছিলেন আইনস্টাইন। সে সময়কার একমাত্র বিজ্ঞান ও গণিতের ছাত্রী মিলেভাকে ১৯০৩ সালের ৬ জানুয়ারি বিয়ে করেন আইনস্টাইন। কিন্তু কীভাবে নিজের চেয়ে বড় একজন নারীকে নিজের প্রেমিকায় পরিণত করেছিলেন!

ভালোবাসা মানেই তো মন দেওয়া-নেওয়া, আর প্রিয়জনকে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করা। আইনস্টাইনও তাই করেছিলেন। সে সময় মনের ভাব প্রিয়জনকে বলার একটাই মাধ্যম ছিল। তা হলো, চিঠির আদান-প্রদান। আইনস্টাইনও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। মিলেভাকে বিয়ের আগে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘তোমাকে ছাড়া আমি সবার মধ্যেও একা।’

জানা গেছে, গভীর প্রেম ও অপার আত্মত্যাগের মাধ্যমে মিলেভা আইনস্টাইনের প্রেমের অনুভূতিকে সম্মান দিয়েছিলেন। মিলেভা আইনস্টাইনের জীবনে আশীর্বাদ রূপেই এসেছিলেন। বলা যেতে পারে, তাদের দু’জনের সম্পর্কটি ছিল বুদ্ধিদীপ্ত ও সাফল্যময়। আইনস্টাইন মিলেভার স্বাধীনতা ও ধ্যান-ধারণাকে যথেষ্ট সম্মান দিতেন। প্রথম সন্তানের মৃত্যুতে দুজনই দারুণ শোকাহত হলেও পরবর্তী বছর মিলেভার কোলজুড়ে জন্ম নেয় তাদের দ্বিতীয় সন্তান হ্যান্স আলবার্ট।

তবে বিয়ের পর আইনস্টাইনের কর্মমুখর জীবনে ধীরে ধীরে একা হয়ে যেতে লাগলেন মিলেভা নিজেই। এ নিয়ে তিনি তার এক বন্ধুকে চিঠিতে লিখেছিলেন, আইনস্টাইন একমাত্র বিজ্ঞানের জন্যই বেঁচে রয়েছে। সেটাই তার প্রথম প্রেম। আমি আর আমাদের সন্তানের কোনো গুরুত্বই তার কাছে নেই। আমরা রয়েছি দ্বিতীয় অবস্থানে।

শুরু হয় দাম্পত্য কলহ। আইনস্টাইন তখন ব্যস্ত সমগ্র পৃথিবী নিয়ে। তাই তিনি মিলেভাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মিলেভা তার প্রেমে অন্ধ। তিনি প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন। এক্ষেত্রে আইনস্টাইন মিলেভাকে একটি শর্ত দেন, শর্ত মানলেই তিনি কেবল তার সঙ্গে থাকতে রাজি হবেন। তা হলো, মিলেভাকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, সে পুরো বাড়ি পরিষ্কার করবে, কাপড় ধোবে ও আইনস্টাইনের ঘরে তিনবেলা খাবার পৌঁছে দেবে। তবে তাদের মধ্যে থাকবে না কোনো শারীরিক অন্তরঙ্গতা। এত কঠিন শর্তও মেনে নিয়েছিলেন মিলেভা। তবে তা টেকেনি শেষ পর্যন্ত। ১৯১৯ সালে বিচ্ছেদ হয় আইনস্টাইন ও মিলেভার। তবে গল্প এখানেই শেষ নয়। মিলেভার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হলেও তার প্রতি আইনস্টাইনের যথেষ্ট ভালোবাসা ছিল। আর তাই হয়তো তিনি নোবেল পাওয়ার পর প্রাইজের সব টাকা তিনি মিলেভার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ১৯২২ সালে পাওয়া আইনস্টাইনের নোবেল প্রাইজের অর্থমূল্য ছিল ৩ লাখ ৪৮ হাজার ইউএস ডলার। যার বাংলাদেশি মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা।

তবে মিলেভার সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর আরো দুজন নারীর সঙ্গে সংসারী হয়েছেন আইনস্টাইন। এর মধ্যে একজন তার চাচাতো বোন এলসা। মিলেভার সঙ্গে বিচ্ছেদের চার মাস পরই তিনি এলসাকে বিয়ে করেন। তবে এলসাও দিনে দিনে বিরক্ত হয়ে যেতে লাগলেন পদার্থবিজ্ঞানের প্রতি স্বামীর আত্মনিমগ্নতায়।

আইনস্টাইন তার বন্ধুকে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, আমি আমার শরীর ও আত্মাকে বিজ্ঞানের কাছে সঁপে দিয়েছি।

১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে এলসা মারা যাওয়ার পর আইনস্টাইনের শেষ জীবন কাটে জোহানা ফ্যানটোভার সঙ্গে। তার সঙ্গে আইনস্টাইনের প্রথম পরিচয় ১৯২৯ সালে বার্লিনে। আইনস্টাইনের চেয়ে ২২ বছরের ছোট হলেও বয়সের দূরত্ব তাদের ঘনিষ্ঠতাকে আড়াল করতে পারেনি। ১৯৫৫ সালে আইনস্টাইনের মৃত্যু পর্যন্ত জোহানাই ছিলেন তার সঙ্গী।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads