• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

ফাইল ছবি

ফিচার

গিনেস বুকে বাংলাদেশের যত রেকর্ড

  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

‘গিনেস বুক’ নামটির সঙ্গে মোটামুটি সবাই পরিচিত। বিশ্বের সকলপ্রকার রেকর্ড সংরক্ষণ করার আন্তর্জাতিক ও অত্যন্ত জনপ্রিয় বই এটি। সেই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্যদের মতো নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষরাও। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবারই আমাদের দেশের নাম গিনেস বুকে উঠে এসেছে। দেখে নেওয়া যাক বাংলাদেশ কতবার এবং কীভাবে গিনেসে নাম লিখিয়েছে :

যার হাত ধরে গিনেসবুকে প্রথমবার বাংলাদেশ

বিশ্বের সব যুগান্তকারী রেকর্ডের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিকে লিপিবদ্ধ করে রাখে গিনেস বুক। আরাধ্য এই বইয়ে যার হাত ধরে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নামটি ঠাঁই পায় তিনি বিষ্ময়কর টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জোবেরা রহমান লিনু। টেবিল টেনিসের সম্রাজ্ঞী হিসেবেই তিনি সবার কাছে পরিচিত। ২০০২ সালের ২৪ মে দিনটি জোবেরা রহমান লিনুর জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ এ দিনেই প্রথম বাংলাদেশি ক্রীড়াবিদ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম লেখান তিনি। বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের জীবন্ত কিংবদন্তি প্রখ্যাত এ টেবিল টেনিস খেলোয়াড় জাতীয় টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় ১৯৭৭ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ১৬ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে এ সন্মাননা অর্জন করেন। এ ছাড়া তিনিই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠিয়েছেন।

১৯৬৫ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের কাপ্তাইতে জন্মগ্রহণ করা লিনু বড় বোনের খেলা দেখতে দেখতে নিজেও আগ্রহী হয়ে ওঠেন টেবিল টেনিসের প্রতি। টেবিল টেনিসে তার হাতেখড়ি হয় বড় বোন হেলেন ও বাবার কাছে। সে সময় ডাইনিং টেবিলকে প্র্যাকটিসের টেবিল বানিয়ে চলত খেলা। মাত্র নয় বছর বয়সেই জাতীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। মজার বিষয় হলো, এরপর ১২ বছর বয়সে ১৯৭৭ সালে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন বড় বোন হেলেনকে হারিয়ে। এরপর শুধুই এগিয়ে চলা। ২৮টি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপার মধ্যে ১৬টিই আসে তার ঝুলিতে।

নিজেকে শুধু খেলাধুলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যুক্ত করেছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও। ২০০৫ সালে সামাজিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করেন। এ সময় শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ নিয়ে তিনি কাজ করেন।

গিনেস রেকর্ড ছাড়াও আরো বেশ কিছু পুরস্কার আছে তার ঝুলিতে। এসবের মধ্যে বাংলাদেশ স্পোর্টস রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (১৯৮০), বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড (১৯৯১), বাংলাদেশ ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৫), বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড (১৯৯৯), অনন্যা শীর্ষ দশ (২০০২), শেখ কামাল মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল (২০০৩), নারীকণ্ঠ ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড (২০০৫) অন্যতম।

প্রথম কোনো বাংলাদেশি নারী ক্রীড়াবিদের নাম ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ ওঠার জন্য জোবেরা রহমান লিনুকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

জাতীয় সঙ্গীতে বিশ্বরেকর্ড

২০১৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জনের অংশগ্রহণে একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। সেদিন ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হয়, ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আর বাংলাদেশিদের প্রাণের এ সুর ছড়িয়ে পড়ে প্যারেড গ্রাউন্ড ছাড়িয়ে সারা দেশ এবং দেশের বাইরে। সেদিন বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পোশাক ও পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ প্যারেড মাঠে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সঙ্গীতে কণ্ঠ মেলান।

বাঙালির দেশপ্রেমের অনন্য এক নজির দেখল সারা বিশ্ব। পাশাপাশি লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়ল বাংলাদেশ।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানে ওই কর্মসূচিটির আয়োজন করা হয়েছিল।

 

গিনেস বুকে ঢাকার রিকশা

গিনেস রেকর্ডের তালিকায় রিকশার নগরী হিসেবে স্থান পেয়েছে রাজধানী ঢাকা।

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি রিকশা চলাচল করে ঢাকায়। ১৫ মিলিয়ন মানুষের শহর ঢাকার যাতায়াতের মোট ৪০ শতাংশ রিকশাকেন্দ্রিক। রাজধানী ঢাকায় পাঁচ লক্ষাধিক রিকশা চলাচল করে। পরিবেশবান্ধব এই বাহন ঢাকার প্রতিবন্ধী, নারী ও শিশুদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। এমন তথ্য লিপিবদ্ধ হয়েছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ২০১৫ সালের প্রকাশনায়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের মিডিয়া অ্যাডভোকেসি অফিসার সৈয়দ সাইফুল আলমের একটি ব্লগ পড়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে গিনেস কর্তৃপক্ষ। সৈয়দ সাইফুল আলম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ঢাকার রিকশার তথ্য প্রদান করেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের খাতায় যুক্ত হলো আরো একটি বিশ্বরেকর্ড।

 

বিজয় দিবসে বিশ্বরেকর্ড

১৬ ডিসেম্বর ২০১৭। সকাল থেকেই রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন ৩০০ ফিট রাস্তায় একে একে জড়ো হচ্ছেন সাইকেলিস্টরা। তাদের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের বিজয় দিবসে সাইকেল চালিয়ে বিশ্বখ্যাত গিনেস রেকর্ডে নাম লেখানো। দেশের জন্য বিজয় দিবসে আরেকটি বিজয় ছিনিয়ে আনা। একটি সন্মান বয়ে আনা।

‘লংগেস্ট সিংগেল লাইন অব বাইসাইকেল মুভিং’ ক্যাটাগরিতে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়তে সাইক্লিংয়ে অংশ নেন বাংলাদেশের ১ হাজার ১৮৬ সাইক্লিস্ট। দুই হাজারের বেশি সাইক্লিস্টের তালিকা থেকে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের নির্বাচিতরা এই সাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

বাংলাদেশের সুপরিচিত সাইকেল সংগঠন বিডি সাইকেলিস্ট বাংলাদেশের ৪৭তম বিজয় দিবসে এমন আয়োজন করে। গিনেস রেকর্ড বুকে নাম লেখানোর জন্য কমপক্ষে এক হাজার সাইক্লিস্টকে এক লাইনে ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালাতে হয়। সেই অনুযায়ী নিয়ম মেনে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় বিডি সাইকেলিস্টরা। এ সময় গিনেসের প্রতিনিধি না থাকায় আয়োজন শেষে ছয়টি ক্যামেরার আনকাট ভিডিও, ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিসহ সব তথ্য পাঠানো হয় গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে। তথ্যচিত্র বিশ্লেষণ শেষে এ বছরের ১৮ জানুয়ারি স্বীকৃতি দেয় ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’। এর আগের রেকর্ডটি ছিল বসনিয়ার দখলে। ২০১৫ সালে বসনিয়ান সাইকেলিং ফেডারেশন ২০টি দেশের সাইকেলিস্টদের নিয়ে এই রেকর্ড গড়ে। বসনিয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে পাঁচ বছর ছিল রেকর্ডটি।

 

ফুটবলে বাংলাদেশি যুবকের হ্যাটট্রিক বিশ্বরেকর্ড

গিনেস রেকর্ড এক স্বপ্নের নাম। অনেকেই চেষ্টা করেন এই রেকর্ডে নাম লেখাতে। কিন্তু ক’জন পারেন। কিন্তু বগুড়ার সন্তান আবদুল হামিদ শুধু একবার নয়, গিনেস রেকর্ডে তিনি হ্যাটট্রিক গড়েছেন। ২০১২ সালে ফুটবল মাথায় বল নিয়ে পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন তিনি। এরপর ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বারে দ্রুততম (২৭.৬৬ সেকেন্ড) সময়ে মাথায় বল নিয়ে রোলার স্কেটিং জুতা পরে ১০০ মিটার অতিক্রম করে একটি রেকর্ড গড়েন হামিদ।

এবার হ্যাটট্রিকের পালা। ২০১৭ সালের ৮ জুন শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে মাথায় বল নিয়ে সাইকেল চালিয়ে ১৩.৭৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নতুন এই রেকর্ড গড়েন হামিদ। সকাল ১১.৫৩ মিনিটে তিনি মাথায় বল নিয়ে সাইকেল চালানো শুরু করেন। ৯১ ল্যাপ শেষ করার পর দুপুর ১টা ১২ মিনিটে বাতাসের ঝাপটায় তার মাথা থেকে বল পড়ে যায়। ততক্ষণে ১৩.৭৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ফেলেছিলেন তিনি। ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ট্রাভেলড অন এ বাইসাইকেল ব্যালেন্সিং : এ ফুটবল অন হেড’ ক্যাটাগরিতে রেকর্ড গড়ে হ্যাটট্রিক করেন হামিদ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads