• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

নবীজির রওজা মোবারক

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক

  • কামরুল আহসান
  • প্রকাশিত ০৩ মে ২০১৮

নবীজি যেদিন মদিনায় হিজরতে এলেন, ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন থেকে ২ জুলাইয়ের কোনো এক দিন, মদিনার মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল অপরূপ এক হামদ গেয়ে, ‘তা’লা আল বাদরু আলাই না, মিন থানি’য়া তিলওয়া’দা, ওজাবা শুক’রু আলাই না, মা দা আ লিল্লাহি দা’ (পূর্ণিমার চাঁদ আমাদের কাছে এসেছে, Wada উপত্যকা থেকে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমাদের অবশ্য কর্তব্য, যত দিন আল্লাহর অস্তিত্ব/আল্লাহকে ডাকার মতো কেউ থাকবে)।

নবীজির উট যেখানে এসে থেমেছিল সেখানেই তিনি নির্মাণ করেছিলেন নতুন একটি মসজিদ- মসজিদে নববি। এই মসজিদের পাশে ছিল মা আয়েশার বাসগৃহ। মৃত্যুর পর এই বাসগৃহের পাশেই কবর দেওয়া হয় নবী করিম হজরত মুহম্মদ (সা.)-কে। তাঁর কবরের পাশে পরবর্তী সময়ে শায়িত হয় ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) এবং হজরত উমর (রা.)। এর পাশে একটি কবরের জন্য খালি জায়গা রয়েছে। হজরত ঈসা (আ.) আবার পৃথিবীতে ফিরে আসবেন এবং এরপর তিনি মারা যাওয়ার পর এখানে তাঁকে দাফন করা হবে।

হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর কবরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলা হয় রওজা শরিফ। কারণ এটি জান্নাতের একটি বাগান- রওজা আতহার (পবিত্র বাগান)। হজের সময় হাজীরা নবীর রওজা জিয়ারত করেন। দোয়াদরুদ পাঠ করেন। তবে নবীজির রওজায় সেজদা দেওয়া নিষিদ্ধ। সেটা শিরকতুল অপরাধ। নবীজি নিজেই তাঁর কবরকে উৎসবের স্থান বানাতে নিষেধ করে গিয়েছিলেন।

এই পুরো স্থানটি সবুজ গম্বুজের নিচে অবস্থিত। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের শাসনামলে এই গম্বুজ নির্মিত হয় এবং ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে একে সবুজ রঙ করা হয়। আদি গম্বুজটি ছিল কাঠের তৈরি, রঙহীন। সেটি বানিয়েছিলেন মামলুক সুলতান আল মনসুর কালাউন। তিনি একজন তুর্কি ক্রীতদাস ছিলেন। স্বীয় কৃতিত্ব ও প্রতিভা দ্বারা তিনি ১২৭১ খিস্টাব্দে রাজক্ষমতা অধিকার করেন। মসজিদে নববিরও তিনি ব্যাপক উন্নয়ন করেছিলেন। ১৪৮১ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি আগুনে পুড়ে গেলে সুলতান আল-আশরাফ সাঈফ আল-দিন কা’ইত বে মসজিদ ইট দিয়ে পুনর্নির্মাণ করেন। তখন তিনি নবীজির রওজা মোবারকসহ আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-এর কবরও ইট দিয়ে বাঁধাই করে দেন। এর আগে দ্বাদশ শতাব্দীতে নবীজির লাশটি একবার চুরি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হলে সুলতান নূরুদ্দীন জাঙ্কি এক হাজার মণ সিসা গলিয়ে রওজা শরিফের চারদিকে মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন।

১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে সৌদ বিন আবদুল আজিজ ক্ষমতা গ্রহণের সময় মহানবীর রওজা মোবারক ধ্বংস করে ফেলতে চেয়েছিলেন। কারণ ওয়াহাবি মতবাদ অনুযায়ী কবর জিয়ারত হারাম। তারপরও বহুবারই সৌদি বাদশারা মহানবীর রওজাসহ সব কবরই মসজিদে নববির আশপাশে থেকে সরাতে চেয়েছে। কিন্তু মসজিদে নববির পাশেই জান্নাতুল বাকিতে মা ফাতিমারও কবর। আর মা ফাতিমার কবর শিয়া মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র একটি স্থান। এখান থেকে কোনো কবর সরালে সারা মুসলিম জাহানেই একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তাই কবরগুলো এখনো আগের অবস্থানেই আছে।

যদিও নবীজির কবরটি সোনা দিয়ে মোড়ানো, কিন্তু সেটি দেখার অধিকার কারো নেই। সৌদি বাদশাহদের তত্ত্বাবধানেই এখন মক্কা মদিনার কর্তৃত্বভার। ফুটো দিয়ে দূর থেকে আবছামতো শুধু কবরের চারপাশের ভারি দেয়ালটি দেখা যায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads