• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

সংরক্ষিত ছবি

ফিচার

নারী প্রগতিতে মডেল বাংলাদেশ

  • ফিচার ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ মে ২০১৮

‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবিক প্রগতি ঘটেছে। তবে সবচেয়ে বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে নারী প্রগতিতে। মেয়েদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুবিধার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। নারী-পুরুষ সমতা (জেন্ডার ইকুইটি) একটি দেশের অর্থনৈতিক এবং মানবিক প্রগতির জন্য কী কী কারণে বিশেষ জরুরি- তা বাংলাদেশের কাছ থেকে ভারতের শেখা উচিত।’ বাংলাদেশের নারী অগ্রগতি নিয়ে এ মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী বিশ্ববরেণ্য ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন।

অমর্ত্য সেনের মতো অনেক খ্যাতিমান বিশ্লেষকই মনে করেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অবদান নারী অগ্রগতি। শিক্ষায় এবং কর্মজীবনে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে আশানুরূপ হারে। নারী উন্নয়নের এ গতি আসে ১৯৯৫ সালে বেইজিং চতুর্থ বিশ্ব নারী সম্মেলনের পর। ওই সম্মেলনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৮৯টি দেশ নারী উন্নয়নের ১২টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে। বেইজিং ঘোষণার পাশাপাশি জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০০ সালে শতাব্দী উন্নয়নের লক্ষ্য (মিলেনিয়াম গোল) ঘোষণা করা হয়। সেই লক্ষ্যের সঙ্গে মিলিয়েও নারী-উন্নয়ন সাধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নারী উন্নয়নের পথে যে ১২টি সমস্যা চিহ্নিত করা  হয়েছিল, দারিদ্র্যের স্থান তার শীর্ষে। নারী উন্নয়নের প্রধান বাধাই ছিল দারিদ্র্য। নারীর দারিদ্র্য দূর করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বর্তমান সরকার। আইনি সংস্কারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর প্রবেশাধিকার ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, শ্রমবাজারের সমপ্রসারণ ও সংরক্ষণের হার বৃদ্ধি করে কৃষি খাত ও অন্যান্য চাকরিতে নারীকে অধিক মাত্রায় আকৃষ্ট করা, নারী-উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ, প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ঋণসুবিধা প্রদান করে মাঝারি ও কুটির শিল্পে নারী উদ্যোক্তার অংশগ্রহণ, বাজেটে নারীর জন্য পৃথকভাবে সামাজিক নিরাপত্তার (আর্থিক) ব্যবস্থাসহ নারীর আয়বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে দারিদ্র্যের হার কমেছে।

তবে দারিদ্র্য কমলেও অনেক ক্ষেত্রে নারী তার প্রাপ্য সম্মানী ও সম্মান পাচ্ছে না। তা ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা না থাকায় নারীর চলাচলেও নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। মাধ্যমিক স্তরে নারীশিক্ষার হার বাড়লেও উচ্চশিক্ষার স্তরে গিয়ে তা কমে যাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষায়ও নারীদের দক্ষ করা যাচ্ছে না। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা আরেকটি মৌলিক অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত হচ্ছিল, তা হচ্ছে তার স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্যসেবায় নারীর উন্নয়ন আশানুরূপ হারেই বেড়েছে। কমেছে মাতৃমৃত্যুর হার এবং বয়সকালীন সেবা পাওয়ার হারও। কমেছে নারীর প্রতি সহিংসতাও। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে নারীর অংশগ্রহণ ও ক্ষমতা বেড়েছে। জাতিসংঘ সদরদফতরে ‘কমিশন অন দ্য স্ট্যাটাস অব উইমেন’-এর অধিবেশনের এক সাধারণ সভায় বাংলাদেশের নারী ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের জেন্ডার গ্যাপ র্যাঙ্কিং ২০১৭-তে বাংলাদেশ ২৫ ধাপ ওপর উঠে ৪৭তম অবস্থানে পৌঁছেছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ। বাংলাদেশ সরকার নারী উন্নয়নে ‘সবার অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি’ গ্রহণ করেছে যেখানে এনজিও, সিভিল সোসাইটি ও অন্য অংশীজন সরকারি প্রচেষ্টাগুলোকে এগিয়ে নিতে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়, বিশেষ করে জাতিসংঘের বলিষ্ঠ সমর্থন প্রয়োজন।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads