• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
কাজী সালাউদ্দিন : ফুটবল নায়কের নিরন্তর সংগ্রাম

কাজী সালাউদ্দিন

ছবি : সংরক্ষিত

ফিচার

কাজী সালাউদ্দিন : ফুটবল নায়কের নিরন্তর সংগ্রাম

  • মনিরা তাবাস্সুম
  • প্রকাশিত ২৫ জুন ২০১৮

বাংলাদেশের ফুটবলের নায়ক বলা হয় তাকে। তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন, যে দলটি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তহবিল সংগ্রহের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। সালাউদ্দিনই প্রথম খেলোয়াড় যিনি হংকংয়ে প্রফেশনাল লিগে অংশ নিয়েছিলেন এবং দেশের জনপ্রিয় ও সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নাম করেছিলেন। কাজী সালাউদ্দিন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান সভাপতি এবং বিদেশে পেশাদার লিগে অংশগ্রহণকারী প্রথম বাংলাদেশি ফুটবলার।

২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন কাজী সালাউদ্দিন। বর্তমানে ১ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক সালাউদ্দিন ১৯৬৯ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজ থেকে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পড়াশুনা শেষ করেন। বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে দুই বন্ধুর সঙ্গে তিনি আগরতলা চলে যান। সেখানে গিয়ে যুদ্ধের ট্রেনিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন এমন সময় কলকাতা থেকে এক আলোকচিত্র সাংবাদিক এসে খুঁজে বের করেন সালাউদ্দিনকে। তিনি সালাউদ্দিনকে জানান, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করা হয়েছে। সেই সাংবাদিক সালাউদ্দিনকে বললেন, ‘তোমার বন্ধুরা তোমার জন্য আপেক্ষা করছে কলকাতায়। তুমি সেখানে গিয়ে ফুটবল দলে যোগ দাও।’ তাকে কলকাতা যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন সেই সাংবাদিকই। মালবাহী বিমানে করে রওনা দিলেন তিনি। ততদিনে গঠিত হয়ে গেছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল। তিনি গিয়ে যোগ দিলেন সেই দলে। ঢাকায় বাবা-মার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সালাউদ্দিন তার নিজের নাম ব্যবহার না করে তূর্য হাজরা নাম ব্যবহার করলেন। প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন মোহনবাগানের বিপক্ষে।

সালাউদ্দিনের ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছে ওয়ারী ক্লাবে ১৯৬৯ সালে। তবে ফুটবলের আগেই তার ক্রিকেটের প্রথম বিভাগ অভিষেক হয় ১৯৬৮ সালেই আজাদ বয়েজের হয়ে। সে সময় আজাদ বয়েজ ছিল অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেট দল। এমনকি ১৯৭০-এর শুরুর দিকে দু’বার জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলার জন্য ডাক পান। পরে পুরোপুরি ফুটবলে মন দেন। ১৯৭০ সালে যোগ দেন মোহামেডানে।

১৯৭২ থেকে ১৯৮৪ আবাহনী ক্রীড়া চক্রের খেলোয়াড় ছিলেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত জাতীয় দলের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন। ১৯৭৫ আর ১৯৭৯-এ জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব করেন। ১৯৭৫ সালে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যান মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। ১৯৭৫-৭৬ মৌসুমে হংকংয়ের পেশাদার লিগের দল ক্যারোলিন হিল এফসিতে খেলেন। ইনজুরির কারণে ফিরে আসেন হংকং থেকে। ১৯৮৪ সালে ফুটবল খেলা ছাড়েন। লিগের শেষ দুটি ম্যাচ ছিল তার ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচ। শেষ ম্যাচের আগের ম্যাচে করলেন হ্যাটট্রিক। আর শেষ ম্যাচে আবাহনীর সঙ্গে মোহামেডানের বিপক্ষে খেলেন।

১৯৮৫ সালে আবাহনীর কোচ হন এবং ওই বছর সবকটি টুর্নামেন্ট জেতেন। ১৯৮৫-১৯৮৮ জাতীয় দলের কোচ ছিলেন। ১৯৮৮ সালে কোচিং ছেড়ে দিলেও ১৯৯২ সালে আবার ফিরে আসেন আবাহনীর কোচ হয়ে। আবাহনী ওই বছর লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৯৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল ক্লাবের কোচের দায়িত্ব নেন। মুক্তিযোদ্ধা ওই বছর ফেডারেশন কাপ জেতে। সে বছর পিতার মৃত্যুর পর কোচিং ছেড়ে দেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে আবারো ফুটবলের মঞ্চে পদার্পণ করেন তিনি। জনপ্রিয়তার দিক থেকে নিম্নগামী বাংলাদেশের ফুটবলকে আবারো প্রতিটি মানুষের মনের কোনায় পৌঁছে দেওয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন বর্তমান ফেডারেশনের চেয়ারম্যান কাজী সালাউদ্দিন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads